...গন্ধ এসেছে
অপরাধ রোখার বার্তা দিতে
ভরসা শক্তিরূপিণী দুর্গাই

কাগজে নির্ভয়ার কথা পড়েছে মিঠি। কামদুনির কথাও। ক্লাস টু-র মেয়ে বুঝতে পারেনি ঠিক। ‘‘ওদের কী হয়েছিল মা?’ মা শুধু বলল, দুষ্টু লোকেরা নাকি ওদের মেরে ফেলেছে। ঠাম্মা যে বলে, দুষ্টু লোকেরা ঠিক শাস্তি পায়? ‘পায়-ই তো। দুষ্টু লোকগুলো তো আসলে অসুর। সামনেই তো পুজো। দেখবি মা দুর্গাই ওদের শাস্তি দিচ্ছেন।’’
খবরের কাগজ খুললেই রোজ ধর্ষণ-শ্লীলতাহানির একের পর এক অভিযোগ। মিঠিদের ছোট্ট মনগুলোতেও তা দাগ কাটে বৈকি। ভাবাচ্ছে তো বড়দেরও। সে জন্যই বোধহয় শহরের অনেক পুজোতেই এ বার মা দুর্গা আসছেন শক্তিরূপিণী কিংবা রুদ্রাণী হয়ে।
মেয়েদের উপরে ক্রমশ বাড়তে থাকা অত্যাচারের এই অস্থির সময়টায় রাজা রামমোহন রায় সরণির রামমোহন স্মৃতি সঙ্ঘের ভাবনায় নারীশক্তিই সর্বোচ্চ শক্তি। আদ্যাশক্তি মহামায়া অর্থাৎ মাতৃশক্তির এই আরাধনায় মণ্ডপ জুড়ে পেন্টিং-ভাস্কর্যে থাকছে নারী নিগ্রহ রোখার বার্তা। মণ্ডপের সামনেটা জুড়ে থাকবে দেবীর বিশালাকার আশীর্বাদী হাত। যা সব অশুভের হাত থেকে প্রতি মুহূর্তে রক্ষা করছে সকলকে। সঙ্গে মণ্ডপসজ্জায় দুর্গাযন্ত্র, মাটির সরায় আদ্যাশক্তি, বিষ্ণুপুরাণের নানা আখ্যান।
হাওড়ার বেতড়ে ৪১-এর পল্লি-র ভাবনাতেও ক্রমবর্ধমান নারী নিগ্রহের ঘটনা। দেবী এখানে রুদ্রাণী রূপে মানুষরূপী অসুরদের দমন করতে ত্রিশূল উঁচিয়ে সংহারমূর্তি। তবে উদ্যোক্তারা মনে করাচ্ছেন, অসুরদমনে পুরুষ দেবতারাই সৃষ্টি করেছিলেন মা দুর্গাকে। তাই নারী নিগ্রহ রুখতে পুরুষদের এগিয়ে আসার ডাক দিয়ে তাঁদের মণ্ডপ সাজছে ছোট-বড় ত্রিশূলে।
সেলিমপুর পল্লি দুর্গোৎসব কমিটির পুজোয় দেবী এ বার দনুজদলনী রূপে। ক্রমশ বাড়তে থাকা অপরাধের দুনিয়ায় দানবরূপী অশুভশক্তিকে দমন করতে যাঁর আগমন। ইনস্টলেশন আর্টে সাজানো ঘটের আকৃতির মণ্ডপে মা দুর্গার পায়ের নীচে পিষ্ট একদল দানব। উপর থেকে তাদের নিধনে নেমে আসবে অলৌকিক শক্তি। লালরঙা আলোর খেলায় যার প্রকাশ।
বেহালার উদয়ন পল্লির ভাবনায় সকল শক্তির উৎস ত্রিনয়নী দুর্গা। যার উন্মেষ না ঘটলে রোখা যাবে না বিশ্বজুড়ে ঘটে চলা যুদ্ধ-বিগ্রহ, নানা অপরাধ, অশুভ কাণ্ডকারখানা। দশ দেবতার মস্তিষ্ক প্রসূত এই ত্রিনয়নী দেবীর আবাহনে এই পুজোর মণ্ডপ জুড়ে পেন্টিং-ইনস্টলেশনে থাকছে যুদ্ধের বাতাবরণ। যার ঠিক মাঝখান থেকে উঠে আসবে শিবলিঙ্গের মতো এক বিশাল স্তম্ভ। তার গায়ে রিলিফ ওয়ার্কে শান্তির বার্তা।
আলিপুর সর্বজনীনেও মহাশক্তির আরাধনা। জীবনযাত্রা ছাপিয়ে প্রকট হয়ে ওঠা হিংস্রতা, লোভ-লালসার অশুভশক্তি যতই ভাবুক দুনিয়া জুড়ে প্রতিষ্ঠা করে ফেলা যাবে একাধিপত্য, সবই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে সেই মহাশক্তিরই হাতে। মহাবিশ্বে মানুষের শক্তি নিমিত্ত মাত্র। কালের নিয়মেই তাই ধ্বংস হবে অশুভশক্তি। মণ্ডপে থাকছে ২৫ ফুটের অসুর, মানবজাতিকে ধ্বংস করতে যে অস্ত্র সাজিয়েছে। মা দুর্গা শূন্যে ভাসমান। আর থাকছে মহাবিশ্বের পিলার অফ ক্রিয়েশন, যেখানেই শেষমেশ বিলীন হবে সব অশুভশক্তি।
শক্তিরূপিণী মা দুর্গা থাকছেন আদি বালিগঞ্জ সর্বজনীনেও। অসুররূপী অশুভ শক্তির বিনাশে আবির্ভূতা মা দুর্গা সকল শক্তির আধার আদ্যাশক্তি মহামায়ারই রূপ। তাঁর দশ হাতের আয়ুধ, বাহন সবই সিংহশক্তির প্রতীক। ত্রিশূলের তিনটি ফলাও সৃষ্টিশক্তি, স্থিতিশক্তি ও সংহতিশক্তিরই ইঙ্গিতবাহী। শক্তির আরাধনাতেই তাই সেজে উঠছে এ পুজোর মণ্ডপ। মণ্ডপের নকশা, অলঙ্কারে থাকবে পাটজাত সামগ্রী।
নারীশক্তিকে যথাযোগ্য স্থান দিতে পশ্চিম পুটিয়ারির পল্লি উন্নয়ন সমিতির ভাবনায় মহাশক্তির জয়জয়কার। দুর্গাযন্ত্র, শ্রী যন্ত্র, সংহার যন্ত্র প্রভৃতিতে, মন্ত্র-শ্লোকে জাগ্রত হবে আদ্যাশক্তি মহামায়া। মাতৃশক্তির বন্দনায় মণ্ডপসজ্জায় থাকবে বিশালাকার একটি শঙ্খ।
শক্তির আরাধনাতেই বধ হয়ে যাক মিঠিদেরও ভাবিয়ে তোলা ‘দুষ্টু লোকেরা’। সেই আশাতেই বুক বাঁধছেন উদ্যোক্তারা।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.