তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে এ বার থেকে সমস্ত ধরনের অগ্নিকাণ্ড ও দমকলের গাড়ি কখন, কোথায় পৌঁছচ্ছে তার বিস্তারিত তথ্য কম্পিউটারের মেমরি-তে ভরে রাখা হবে। এর ফলে আগুন লাগার খবর পেয়েও দমকলের গাড়ি দেরিতে পৌঁছনোর যে অভিযোগ মাঝেমধ্যেই ওঠে, তা খতিয়ে দেখার ক্ষেত্রে সুবিধা হবে বলে মনে করছে রাজ্য সরকার। এই পদ্ধতিতে নজরদারি চালানোর জন্য প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে দমকলের সদর দফতর ফ্রি স্কুল স্ট্রিটে। মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়েই এই কন্ট্রোল রুমটির উদ্বোধন করতে চান রাজ্যের দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান।
দমকলের এক শীর্ষ কর্তা জানান, নতুন ব্যবস্থায় আগুনের খবর জানাতে কেউ ফোন করলেই কন্ট্রোল রুমের বড় স্ক্রিনে সেই নম্বর ফুটে উঠবে। সঙ্গে সঙ্গে কম্পিউটারের মস্তিষ্কে ‘নোট’ হয়ে যাবে ফোনের সময়। একই সঙ্গে দমকলের গাড়িগুলিকেও ‘ট্র্যাক’ করা শুরু হয়ে যাবে। কোন দমকল কেন্দ্র থেকে ক’টা গাড়ি, কখন, কোন রাস্তা দিয়ে ঘটনাস্থলে গেল তার সম্পূর্ণ ছবি ফুটে উঠবে ওই স্ক্রিনে। এর জন্য দমকলের প্রতিটি গাড়িতে বসানো হচ্ছে ‘ভেহিক্ল ট্র্যাকিং সিস্টেম’। শুধু তা-ই নয়, গাড়ির চালক আসনে বসেই জানতে পারবেন ঘটনাস্থলের ঠিকানা এবং কোন পথে গেলে তাড়াতাড়ি সেখানে পৌঁছনো যাবে ইত্যাদি তথ্যও। গাড়ির মধ্যেই একটি ছোট স্ক্রিনে ফুটে উঠবে ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর ওই পথ-নির্দেশিকা। ফলে দমকলের গাড়ি অনেক দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারবে বলে দফতরের কর্তারা মনে করছেন। এমন ব্যবস্থা শুধু কলকাতায় নয়, সারা রাজ্যেই ধাপে ধাপে এই ধরনের আধুনিক কন্ট্রোল রুম খোলা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
|
দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান জানিয়েছেন, আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরেই দমকলকে ঢেলে সাজতে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগুন নেভানোর আধুনিক যন্ত্র, উঁচু মই থেকে শুরু করে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের উপরে জোর দিয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ মেনেই তথ্যপ্রযুক্তি-ভিত্তিক এই কন্ট্রোল রুম খোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জাভেদ জানিয়েছেন।
স্টিফেন কোর্ট ও আমরি হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের পরে দমকলের পরিকাঠামো নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছিল। শহরে ছোট-মাঝারি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও দমকল দেরিতে পৌঁছনোর অভিযোগ ওঠে মাঝেমধ্যেই। কখনও এমন অভিযোগও শোনা যায়, ঠিকঠাক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম না নিয়েই আগুন নেভাতে চলে যান দমকলকর্মীরা। পরস্পরের মধ্যে নিরন্তর যোগাযোগের অভাব এবং পরিকাঠামোগত নানা সমস্যার কারণেই অনেক সময়ে এই ধরনের জটিলতা তৈরি হয় বলে মেনে নিয়েছেন দমকলের কর্তারাও।
নতুন ব্যবস্থায় দমকলকর্মীদের সঙ্গে স্টেশনের মধ্যে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থাকেও উন্নত করা হচ্ছে। প্রত্যেক কর্মীকে মোবাইল ফোন দেওয়া ছাড়াও স্টেশনগুলিতে ‘সিএলআই’ লাগানো টেলিফোন বসানো হচ্ছে। থাকছে পরস্পরের কথোপকথন রেকর্ড করার ব্যবস্থাও। এর ফলে কোথাও আগুন লাগলে দমকলকর্মী ও আধিকারিকেরা কে কখন, কার সঙ্গে কী কথা বলেছেন ও পদস্থ কর্তারা কী নির্দেশ দিয়েছেন, তা-ও জানতে পারা যাবে। |
