ছবি বেরোনোয় অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন। আর ছবি না-বেরোনোয় জামিন পেয়ে যাচ্ছেন অনেকে। এই অবস্থায় আনন্দবাজারে প্রকাশিত ছবি দেখে এই প্রথম এক অভিভাবিকাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত মহিলা দমদম ক্রাইস্ট চার্চ গার্লস স্কুলে ১২ সেপ্টেম্বরের ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলে স্বীকারও করেছেন।
ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে ভাঙচুরের ঘটনায় যে-সব অভিভাবক-অভিভাবিকার ছবি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে বা বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে দেখানো হয়েছে, তাঁদের এত দিন ধরতে পারেনি পুলিশ। হাঙ্গামার আট দিনের মাথায়, বৃহস্পতিবার তারা তেঘরিয়া থেকে শম্পা ঘোষ নামে এক অভিভাবিকাকে গ্রেফতার করেছে। শম্পা যে ভাঙচুরে জড়িত ছিলেন, এ দিনের সংবাদপত্রে সেই ছবি প্রকাশিত হয়েছে।
তদন্তকারী এক অফিসার জানান, সংবাদপত্রে হলুদ সালোয়ার পরা এক মহিলার ছবি প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবি দেখিয়ে পুলিশ কয়েক জনকে অভিভাবককে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই মহিলার পরিচয় জানার চেষ্টা করে। দমদম থানার পুলিশ এ দিন দুপুরে শম্পার তেঘরিয়ার বাড়িতে যায়। পুলিশ জানায়, শম্পা বাড়িতেই ছিলেন। তাঁকে গ্রেফতার করে দমদম থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। শম্পার দুই মেয়ে ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের প্রথম ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। বড় মেয়ে থাকে ওই স্কুলের হস্টেলেই। |
দমদম পার্ক থানায় শম্পা ঘোষ। ছবি: শৌভিক দে। |
পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পরে শম্পা স্বীকার করে নিয়েছেন, তিনি সে-দিনের ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন। ওই অভিভাবিকা বলেন, “গোলমালের খবর পেয়ে আমি বড় মেয়েকে হস্টেল থেকে আনতে স্কুলে গিয়েছিলাম। হস্টেলের কর্মীরা বলেন, এখনই মেয়েকে ছাড়ার নির্দেশ নেই। একটু পরে আসুন। তার পরেই আমি অধ্যক্ষার অফিসে যাই।” শম্পা জানান, মেয়েকে না-পেয়ে তাঁর মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। অফিসঘরে গিয়ে তিনি দেখেন, কিছু উত্তেজিত লোক সেখানে ভাঙচুর চালাচ্ছে। তিনিও উত্তেজিত হয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন।
ভাঙচুরের পরে ওই কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য ক্ষমা চেয়েছিলেন রেশমি দে এবং পাপিয়া মজুমদার। শম্পাও কি তাঁদের মতো অনুতপ্ত?
এ দিন দুপুরে থানায় বসে শম্পা এই প্রশ্নের কোনও উত্তর দেননি। তবে তিনি ওই স্কুলে ছোটদের কাছে বড়দের টাকা চাওয়ার অভিযোগ-সহ নানা ধরনের অব্যবস্থার কথা তোলেন। বলেন, “অধ্যক্ষার বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই ক্ষোভ ছিল অভিভাবকদের। নানান অজুহাতে উঁচু ক্লাসের মেয়েরা নিচু ক্লাসের মেয়েদের কাছে টাকা চাইত। স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার সময় উঁচু ক্লাসের মেয়েরা ছোটদের বসার জায়গা দিত না। উল্টে নানা ভাবে ওদের উত্ত্যক্ত করত। সেসব নিয়ে অনেক বার বলতে গিয়েছি। কিন্তু অধ্যক্ষা আমাদের সঙ্গে দেখা পর্যন্ত করতেন না।”
কিন্তু এই সব ব্যাপারে ক্ষোভ ছিল বলেই স্কুলে ভাঙচুর করবেন?
শম্পা বলেন, “অভিভাবকদের অনেক দিনের একটা ক্ষোভ থেকেই এমন একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে।”
এ দিন বেলা ২টো নাগাদ ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হয় স্কুলে ভাঙচুরের ঘটনায় অভিযুক্ত শুভঙ্কর পাল ও রতন দাসকে। তাঁদের জামিন মঞ্জুর করে আদালত। জামিন দেওয়ার কারণ সম্পর্কে বিচারকের বক্তব্য, ওই দুই অভিযুক্তের আত্মীয় ক্রাইস্ট চার্চ গার্লস স্কুলে পড়ে বলে জানা গিয়েছে। তাই সে-দিন তাঁরা স্কুলে গিয়েছিলেন।
|