দমদমের ক্রাইস্ট চার্চ গার্লস স্কুলে ভাঙচুর ও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সারা রাজ্যে মিশনারি স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হয়। তবে একই দিনে ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রিশ্চিয়ান স্কুলস পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, এর পরে এই নিয়ে কোনও মিছিল বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়াতে চায় না তারা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা একটি চিঠিতে এই আশ্বাস দিয়েছেন ওই সংগঠনের সম্পাদক মলয় ডি’কস্টা।
১২ সেপ্টেম্বর ওই স্কুলে ভাঙচুরের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে আর্চবিশপ অব ক্যালকাটাকে ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। উপযুক্ত ব্যবস্থার আশ্বাসও দেন তিনি। তা সত্ত্বেও মূলত পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিতে রাজ্যে খ্রিস্টান মিশনারি পরিচালিত সব স্কুল-কলেজ এ দিন বন্ধ রাখা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতেই ডি’কস্টা চিঠি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তার জন্য ওই চিঠিতে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ডি’কস্টার সংগঠন। তাদের আশা, এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আর ঘটবে না। মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে ছিলেন না। তাঁর দফতরে গিয়ে চিঠিটি দেন সংগঠনের পাঁচ প্রতিনিধি।
পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ঐন্দ্রিলা দাসের মৃত্যুর প্রতিবাদে ১২ তারিখে ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে ব্যাপক গণ্ডগোল ও ভাঙচুর হয়। পুলিশের সামনে তাণ্ডব চললেও তা থামাতে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে আগেই অভিযোগ জানিয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রিশ্চিয়ান স্কুলস। সংগঠনের সভাপতি তথা আর্চবিশপ অব ক্যালকাটা টমাস ডি’সুজা পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সব মিশনারি স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছিলেন।
এ দিন রাজ্যের মিশনারি স্কুল-কলেজ তো বটেই, আইসিএসই পাঠ্যক্রমেরও অনেক স্কুলে ক্লাস হয়নি। ডি’কস্টা মুখ্যমন্ত্রীকে লিখেছেন, মিশনারি স্কুল-কলেজ এবং আইসিএসই পাঠ্যক্রমের স্কুল মিলিয়ে প্রায় এক হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঠনপাঠন বন্ধ ছিল। শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
শিক্ষার অগ্রগতিতে খ্রিস্টান মিশনারিদের অবদানের কথাও ওই চিঠিতে উল্লেখ করেছেন সংগঠনের নেতারা। তাতে বলা হয়েছে, শান্তিপ্রিয়, আদর্শ সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবেই খ্রিস্টানদের পরিচয়। এ দেশে আসার সময় থেকেই তারা ঐতিহাসিক ভাবে শিক্ষার প্রতি দায়বদ্ধ। রাজ্যে তাদের পরিচালিত প্রচুর স্কুল-কলেজ সেই দায়বদ্ধতারই ফল। মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে তাঁরা তাঁদের এই উদ্যোগ আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংগঠনের নেতারা।
মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছে ওই সংগঠনের চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘আমাদের উদ্বেগকে গুরুত্ব দিয়ে আপনি যে-ভাবে আমাদের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, সংখ্যালঘু এই সম্প্রদায়ের কাছে তার গুরুত্ব অনেক।” মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আস্থা প্রকাশ করে সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিনের মতো দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা আর ঘটবে না বলেই তাঁদের আশা।
ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে হাঙ্গামার প্রতিবাদে ২৬ সেপ্টেম্বর সংখ্যালঘু বিভিন্ন সংগঠন ও মিশনারি স্কুল-কলেজের সংগঠনের মিছিল করার কথা। তবে এ দিনের চিঠিতে ওয়েস্ট বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রিশ্চিয়ান স্কুলসের নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, এই নিয়ে কোনও মিছিল বা রাজনৈতিক কাজকর্মে তাঁরা জড়াবেন না। মিছিলের আহ্বায়ক তথা বঙ্গীয় খ্রিস্টীয় পরিষেবার সাধারণ সম্পাদক জানান, মিছিলটি আদৌ হবে কি না, সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে সোমবার।
কিন্তু ক্রাইস্ট চার্চ গার্লস স্কুলে ফের পঠনপাঠন শুরু হবে কবে?
ওই স্কুল খোলার ব্যাপারে অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রিশ্চিয়ান স্কুলস এ দিনও কিছু জানাতে পারেনি। সংগঠনের সম্পাদক ডি’কস্টা বলেন, “দু’টি কমিটি গড়ে স্কুলে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই দুই কমিটির রিপোর্ট পেলে পরিস্থিতি যাচাই করে ফের স্কুল চালু করা হবে।” তবে এমনই ভাঙচুর হয়েছে যে, এখনই স্কুলটি চালু করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন তিনি।
সংখ্যালঘু সংগঠন অল ইন্ডিয়া মাইনরিটি অ্যান্ড উইকার সেকশনস কাউন্সিল এ দিনই এক সাংবাদিক বৈঠকে দাবি তুলেছে, ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে উপস্থিত থেকেও পুলিশ কেন ভাঙচুর ঠেকাতে তৎপর হয়নি, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরকে তার কৈফিয়ত দিতে হবে। ওই ভাঙচুর কাণ্ডে পুলিশের তদন্তের উপরে আস্থা রাখা যাচ্ছে না বলেও জানিয়েছে কাউন্সিল। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশনকে দিয়ে ওই ঘটনার তদন্ত করিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশের দাবি তোলা হয়েছে বলে জানান কাউন্সিলের সভাপতি অ্যান্টনি অরুণ বিশ্বাস। |