জ্বর নিয়ে প্রচুর রোগী আসছেন শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে। সোমবার প্রায় ২০০জন রোগী জ্বর নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসেন। জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসায় যে বিশেষ সেল খোলা হয়েছে সেখানে তাঁদের চিকিৎসা করানো হয়েছে। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে যান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক। তিনি জানান, জ্বরে আক্রান্ত প্রচুর রোগী আসছেন। অনেকে সামান্য জ্বর এবং মাথা ব্যথা হলেই ডেঙ্গির আতঙ্কে হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যাচ্ছেন। সে কারণে এ সময় জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি।” |
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ি পুর এলাকায় এবং মহকুমার মাটিগাড়া এবং অন্যান্য অংশে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সোমবার পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৪৫০ জন। তার মধ্যে শিলিগুড়ি পুরসভার সংযোজিত এলাকায় ডেঙ্গিতে নতুন করে আক্রান্তদের নিয়ে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে অন্তত ১৫০ জন। ৪১, ৪২, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে সংক্রমণ সব ছেকে বেশি। লাগোয়া জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জ ব্লকের অংশেও শতাধিক ডেঙ্গি রোগী রয়েছেন। স্বাস্থ দফতরের দাবি ওই পরিসংখ্যান গত ২৬ অগস্ট থেকে শিলিগুড়ি এবং তার আশেপাশে ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীদের। যার মধ্যে অনেকে সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। তবে এখনও শিলিগুড়ি হাসপাতালে ৪০ জন রোগী রয়েছেন ডেঙ্গি সংক্রমণ নিয়ে। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৮০ জন। তার মধ্যে ৮ জন কচিকাঁচা। শিলিগুড়ি হাসপাতালে ডেঙ্গি রোগীর অনেকেরই সঠিক চিকিৎসা মিলছে না বলে অভিযোগ। সন্ধ্যায় টিকিয়াপাড়ার এক মহিলাকে হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। চাউর হয় তিনি ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন। পড়শিরা জানান, জ্বর নিয়ে সম্প্রতি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন পূজা রাউত। দিন কয়েক আগে তাঁকে ছুটি দেওয়া হয়েছিল। তাঁর বাবা রামু রাউত দাবি করেন টিবি রোগে আক্রান্ত ছিল তাঁর মেয়ে। মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে বলে চিকিৎসক ময়না তদন্ত করাতে বলেন। তবে পরিবারের লোকেরা তাতে রাজি না হলে মৃতদেহ নিয়ে চলে যান। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অন্য জ্বর আক্রান্তের পরিবারের আত্মীয়রা সরব হন হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। |
হাসপাতালে ভর্তি মমতা বর্মনের স্বামী নীলকান্তবাবু দাবি করেন, বৃহস্পতিবার জ্বর নিয়ে মমতাকে ভর্তি করানো হয়েছিল। জ্বর না কমলেও শনিবার হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। পরে বাইরে থেকে ১২০০ টাকা খরচ করে ডেঙ্গির রক্ত পরীক্ষা করান। ওই পরীক্ষায় ডেঙ্গি রয়েছে ধরা পড়লে আবার হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। মহম্মদ সাবিরের অভিযোগ, ২৩ বছর বয়সের তাঁর ছেলে ৪ দিন আগে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। জ্বর না কমলে সোমবার তাকে চিকিৎসকরা ছুটি দিতে চান। তবে তিনি বাড়িতে নিয়ে যাননি। শহরের নার্সিংহোমগুলির কর্তৃপক্ষ এবং জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক, প্রশাসনের সঙ্গে ডেঙ্গি পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করে রাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। অনেক নার্সিংহোম এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ডেঙ্গির জন্য রক্ত পরীক্ষা করাতে ১ থেকে দেড় হাজার টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনায় যে খরচে ওই পরীক্ষা করা হয়, ৩৫০-৪০০ টাকার মধ্যে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফি নিতে বলা হয়। রুদ্রবাবু বলেন, “নার্সিংহোমগুলি যাতে তাদের কাছে আসা ডেঙ্গি আক্রান্তদের ব্যাপারে তথ্য ঠিক মতো দেন তা বলা হয়েছে। অনেকে তা মানছে না। তাদের এ ব্যাপারে সতর্ক করা হয়। সেখানে সচেতনতা প্রচারে ব্যানার, ফ্লেক্স লাগাতে বলা হয়েছে।” |