সপ্তাহ খানেক আগে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে নার্সিংহোমে ভর্তি এক ব্যক্তির মৃত্যু হল। রবিবার শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের কাছে তিলক রোডের এক নার্সিংহোমে তাঁর মৃত্যু হয়। ডেঙ্গিতে নয়, ইন্টারস্টিশিয়াল লাংস ডিজিস (আইএলডি)-এ তিনি মারা গিয়েছেন বলে চিকিৎসক এবং তাঁর পরিবারের লোকেরা দাবি করেছেন। নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁর নাম সুরঞ্জন চক্রবর্তী (৬১)। বাড়ি শিলিগুড়ির লেক টাউনে। চিকিৎসক সি পি শর্মার অধীনে ভর্তি ছিলেন। ওই চিকিৎসক জানান, ডেঙ্গি-আক্রাম্ত সুরঞ্জনবাবুকে খালপাড়ার অন্য একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়েছিল। ডেঙ্গি সংক্রমণ থেকে তিনি সুস্থও হয়ে ওঠেন। তবে সেই সময় থেকে তাঁর ফুসফুসে অপর এক সংক্রমণ ধরা পড়ে। সে জন্য সেখানকার চিকিৎসক তাঁর কাছে রেফার করেছেন। গত শুক্রবার তিনি তিলক রোডে নার্সিংহোমে ভর্তি হন। |
বিধান মার্কেট মাছ বাজারে ডেঙ্গি
নিয়ে সচেতনতা
প্রচারে বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য।— নিজস্ব চিত্র। |
ডেঙ্গিতে আক্রান্ত শিলিগুড়িতে ইতিমধ্যেই ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন কিশোরী রশ্মি মাঝি এবং সাদ্দাম হোসেন নামে এক কিশোর। বাড়ি লিম্বুবস্তি এবং গাঁধীনগরে। প্রকাশনগরের বাসিন্দা রেখা সাহানি নামে এক কিশোরী জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেও স্বাস্থ্য দফতরের দাবি রেখা ডেঙ্গিতে মারা যাননি। এর পর এ দিন শহরের মাঝে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুরঞ্জনবাবুর মৃত্যু নিয়ে তাই খোঁজ খবর নেয় স্বাস্থ্য দফতরও। দার্জিলিং জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুবীর ভৌমিক বলেন, “সুরঞ্জনবাবু ডেঙ্গিতে মারা যাননি। স্বাস্থ্য দফতর থেকেও বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হয়েছে।” মৃতের ছেলে বাবিন চক্রবর্তী জানান, গত সোমবার তাঁর বাবাকে খালপাড়ার নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছিল। ডেঙ্গিতে প্রথমে আক্রান্ত হলেও ওই রোগ থেকে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর রক্তে অনুচক্রিকার সংখ্যাও স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। ফুসফুসের রোগের জন্য তাঁকে শুক্রবার অন্য এক নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছিল। জ্বর নিয়ে এখনও বহু রোগী আসছেন চিকিৎসা করাতে আসছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল, বিভিন্ন নার্সিংহোমে। এ দিন ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের ভূপেন্দ্রনগরে জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের তরফে শিবির করা হয়। সেখানে এ দিন ৫৩ জন রোগী এসেছিলেন। ১৩ জনের এনএস-১ পরীক্ষায় ডেঙ্গি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। নিশ্চিত হতে রক্তের নমুনা উঃবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন জেলা প্রশাসনের তরফে সোমবার দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতর, শিলিগুড়ি শহরের বিভিন্ন নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। শিলিগুড়ি পুর এলাকায় এবং মহকুমার অন্যান্য অংশে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা অন্তত ৪০০ জন। জলপাইগুড়ি জেলার অধীনে থাকা শিলিগুড়ির লাগোয়া এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাও শতাধিক। আক্রান্তের সংখ্যা এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। যদিও জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, “পরিস্থিতি কিছুটা হলেও উন্নত।” কী ভাবে তারা ওই দাবি করছেন তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে মশার লার্ভা মারার তেল স্প্রে করার কাজ শুরু করতেও অনেক দেরি হয়েছে। পুরসভার তরফে নানা ওয়ার্ডে পর্যাপ্ত তেল না মেলার অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই। রাজ্যের স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ি বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যের উ্যদোগে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে মশা মারার তেল স্প্রে করার কাজ শুরু হয়। স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে ৪০টি দল করে সে কাজ হচ্ছে। এ দিনও হিলকার্ট রোড, বিধান রোড, বিধান মার্কেট সব্জি, মাছ মাংসের বাজার, ৬, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডে মশার লার্ভা মারার তেল স্প্রে করেন। সচেতনতা প্রচারে এ দিন তাদের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় যান ইস্টবেঙ্গল ফ্যানস ক্লাবের সদস্যরা। মাটিগাড়ায় দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফে এ দিন জ্বরে আক্রান্তদের চিকিৎসায় শিবির হয়। সেবক, রম্ভিতে অন্তত ৮ জনের রক্তে ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। |