পোলিওর প্রতিষেধক খাওয়ানোর বদলে শিশুদের মুখে দেওয়া হল হেপাটাইটিস-বি ভ্যাকসিন। রবিবার এই ঘটনা জানাজানি হওয়ায় গোঘাটের খাটুলে একটি পোলিও টিকাকরণ কেন্দ্রে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকেরা। ছয় স্বাস্থ্যকর্মীকে সাসপেন্ড করেছেন হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।
ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। তবে এতে শিশুদের ক্ষতির আশঙ্কা নেই।” এ দিন ৭৯ জন শিশুকে আনা হয় আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে। তাদের কারও বমি হচ্ছিল। কয়েক জনের শারীরিক অস্বস্তি ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে সকলকেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের সুপার নির্মাল্য রায় জানিয়েছেন, এই ঘটনায় আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ওই ভ্যাকসিন মল-মূত্র দিয়ে বেরিয়ে যাবে। এর কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
ব্লক স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের কামারপুকুর স্টোর থেকে পোলিও টিকা এনে রাখা হয়েছিল স্থানীয় বেঙ্গাই পঞ্চায়েতে। রবিবার সকাল ৭টার আগেই টিকাকরণের নিযুক্ত দুই আশা কর্মী, এক জন অঙ্গনওয়ারি কর্মী এবং এক জন গ্রামীণ স্বাস্থ্যকর্মী ওই টিকা এনে কাজ শুরু করেন।
কেন্দ্রের সুপারভাইজার ময়না রায় জানান, এক কর্মী ফোনে জানান, পোলিও টিকার এক একটি ফাইল থেকে ২২ জন শিশুকে দু’ফোঁটা করে খাওয়ানোর পরেও ফাইল শেষ হচ্ছে না। হিসেব মতো, ১৮ জনকে খাওয়ানোর পরেই ওই ফাইল শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। ময়নাদেবী গিয়ে দেখি দেখেন, পোলিওর বদলে হেপাটাইটিস-বি প্রতিষেধক (যা ইঞ্জেকশন দেওয়ার কথা) খাওয়ানো হচ্ছে। টিকাকরণ বন্ধ করার নির্দেশ দেন তিনি। ময়নাদেবীকেও এ দিন সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।
এ দিকে, ঘটনা জানাজানি হতেই স্থানীয় মানুষ অশান্ত হয়ে ওঠেন। ঘটনাস্থলে যান জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তনিমা মণ্ডল-সহ ব্লক ও মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় এবং এসডিপিও শিবপ্রসাদ পাত্রও যান এলাকায়। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সংশ্লিষ্ট কর্মীদের সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিলে ঘেরাও ওঠে।
তনিমাদেবী বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে ত্রুটি প্রমাণিত হওয়ায় ওই কেন্দ্রে পালস পোলিও কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্য দফতরের ৫ কর্মী এবং অন্য দফতরের ১ জনকে (অঙ্গনওয়ারি কর্মী) সাসপেন্ড করা হল। পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বিভাগীয় তদন্তের পরে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষে মৃণালকান্তি মণ্ডলও বলেন, “আমাদের বিক্ষোভ ছিল গাফিলতির বিরুদ্ধে। এতে পোলিও টিকাকরণ কর্মসূচি নিয়ে কেউ যেন বিভ্রান্ত না হন।” |