স্বাস্থ্যকর্তা এসে হাসপাতালে বসে। আউটডোরে রোগীর ভিড়। অথচ চিকিৎসকরা এলেন নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্যকর্তা বার বার সময়ে আসতে অনুরোধ করেন। উত্তরে তিন চিকিৎসক সাফ জানিয়ে দেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাঁরা আসতে পারবেন না। হুগলির শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের ছবিটা বদলাতে এ বার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ‘নজিরবিহীন’ সিদ্ধান্ত নিল। এক সঙ্গে ১৫ জন চিকিৎসককে বদলির নির্দেশ ধরানো হল। তাঁদের পরিবর্তে ১৪ চিকিৎসককে বিভিন্ন জায়গা থেকে ওয়ালশে পাঠানোরও নির্দেশ এসেছে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এটা ‘শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’। সময়মতো না আসা, চেম্বারে রোগী দেখা, রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহার-সহ নানা অভিযোগ ছিল ওয়ালশে দীর্ঘদিন কর্মরত কিছু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ বার থেকে স্বাস্থ্য দফতরে পুরস্কার ও তিরস্কার দু’টিই খুব স্পষ্ট ভাবে থাকবে। এত দিন এটা হত না।” তাঁর সংযোজন, “কাজ করতে হবে। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এটা একেবারে স্পষ্ট বার্তা। কাজ না করলে তিনি যে-ই হোন, ছাড় পাবেন না। যেটা ওয়ালশ হাসপাতালে হয়েছে।”
কর্তব্যে গাফিলতি ছাড়া, স্বাস্থ্যকর্তাদের হয়রান করার অভিযোগও রয়েছে ওই ডাক্তারদের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগে হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা হাসপাতালে আচমকা এসে চার জন চিকিৎসকের দেখা তিনি পাননি। এ নিয়ে তাঁদের শো’কজ করা হয়। তা নিয়ে এসিএমওএইচ (শ্রীরামপুর)-কে কার্যত ঘেরাও করা হয় বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দফতরের তরফে রাজ্যে কড়া রিপোর্ট পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা অবশ্য ওই অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁদের বক্তব্য, ‘তুচ্ছ কারণে পরিকল্পনা করেই’ তাঁদের বদলি করা হয়েছে।
কয়েক মাস আগে রাজ্য বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্যরা ওয়ালশের পরিকাঠামো দেখতে আসেন। অব্যবস্থা নিয়ে রোগী এবং তাঁদের বাড়ির লোকজনের ক্ষোভ দেখে তাজ্জব বনে যান তাঁরা। চিকিৎসক এবং কর্মীদের একাংশের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায় মহিলাদের। সেই সময় যিনি সুপার ছিলেন, সেই বিবেকানন্দ সরকারকেও কিছু দিন আগে উত্তরবঙ্গে বদলি করা হয়। শ্রীরামপুরের চিকিৎসক-বিধায়ক সুদীপ্ত রায় বলেন, “এই বদলিতে হাসপাতাল এবং সার্বিক ভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি হবে।” হাসপাতাল সুপার ত্রিদিব মুস্তাফি জানান, ইতিমধ্যে ৫ জন চিকিৎসককে ছাড়া হয়েছে।
চক্ষু বিভাগে এক জন চিকিৎসক যোগ দিয়েছেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বদলি হওয়া জেলার তালিকায় রয়েছে দার্জিলিং, কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, পুরুলিয়া, বীরভূম, পূর্ব মেদিনীপুর। |