মহাকরণের অভিযোগ ছিল, পাহাড় অচল করে মোর্চার আন্দোলনের পিছনে আর্থিক মদত জোগাচ্ছে পাহাড়ের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। এমনকী আর্থিক সাহায্য আসছে বিদেশ থেকেও বলে দাবি করেছিলেন মহাকরণের এক পদস্থ কর্তা। গোয়েন্দা রিপোর্টে এমনই খবর মিলেছে তাঁদের, শনিবার, সরকারি সূত্রে এমনই দাবি করা হয়েছিল।
সে দিন বিকেলেই কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন মোর্চা নেতৃত্ব। এ বার, দার্জিলিঙে দলের সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে এ ব্যাপারে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিলেন মোর্চা সভাপতিও। সোমবার সিংমারিতে দলীয় কার্যালয়ে বসে বিমল গুরুঙ্গের দাবি, “দল চালাতে শাসক দল কোথা থেকে টাকা পাচ্ছে, কারা তাদের তহবিলে টাকা দিচ্ছে সে খবরও আমরা জানি। যথাসময়ে প্রকাশ করব।”
এ দিন, মোর্চা সভাপতি বলেন, ‘‘আমাদের আন্দোলনের যাবতীয় খরচ চলে দলের কর্মী-সমর্থকদের চাঁদায়। তবুও রাজ্য সরকার বারেবারেই, আমাদের আন্দোলনে টাকা কোথা থেকে আসছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এমনকী, আমাদের আন্দোলনে বিদেশি টাকার অনুপ্রবেশের গন্ধও পাচ্ছে। জেনে রাখুন, এটা ভিত্তিহীন সন্দেহ।”
শাসক দলকে পাল্টা সতর্ক করার সঙ্গে সরকারকে হুমকিও দিয়ে রাখছেন তিনি, ২০ অক্টেবরের পরে প্রয়োজনে পাহাড়ে আন্দোলন আগের চেয়েও তীব্র করার কথা ভাবা হবে বলে। তিনি বলেন, “পাহাড়ের মানুষ আমাদের আন্দোলনের পাশে রয়েছেন। সকলের সাহায্য নিয়ে আগামী ২০ অক্টোবরের পরে আন্দোলন আগের চেয়ে তীব্র করার কথা ভাবা হতে পারে।”
তবে, মোর্চা প্রধানের হুঁশিয়ারিতে এখনই পায়ে পা মাড়িয়ে তর্জায় যাচ্ছেন না তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় পুর নির্বাচনের প্রচারে এখন আলিপুরদুয়ারে। সেখানে তিনি বলেন, “এ নিয়ে আমি এখনই কিছু বলছি না। যা বলার রাজ্য সরকারই বলবে।” তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া, “ভিত্তিহীন ও অস্পষ্ট মন্তব্যের জবাব দেওয়া যায় না।”
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দেড় মাস ধরে পাহাড় অচল করে রাখার সময়ে মোর্চা কোথা থেকে অর্থ ও রসদ সংগ্রহ করেছে তা নিয়ে সরকারি তরফে তদন্ত হচ্ছে। ইতিমধ্যেই একাধিক ব্যবসায়ী, ঠিকাদারকে পাহাড়ে অশান্তিতে মদত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কয়েক জনের ব্যাপারে বিশদে খোঁজ খবর নেওয়াও শুরু হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীদের দার্জিলিং ছাড়াও সিকিম ও পড়শি রাষ্ট্র নেপালেও ব্যবসা রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এ নিয়ে কিছুটা চাপেও রয়েছে মোর্চা নেতৃত্ব। কারণ, খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে গত শনিবার মহাকরণে পাহাড় নিয়ে যে পর্যালোচনা হয়েছে, সেখানেও পাহাড়ে অশান্তিতে ‘মদতদাতাদের’ চিহ্নিত করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। মোর্চার অন্দরের খবর, এই অবস্থায় মোর্চা নেতৃত্ব, তাঁদের আন্দোলন যে পাহাড়ের সাধারণ মানুষের চাঁদায় চলছে তা বোঝাতে দলের প্রতিটি শাখাকে ‘দান সংগ্রহের’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ দিন মোর্চার লেবং-বাদামতাং শাখার পক্ষ থেকে মোর্চা সভাপতির হাতে কিছু টাকাও তুলে দেওয়া হয়। শাখা সদস্যের দেওয়া সেই ‘ডোনেশন বক্স’ হাতে নিয়ে গুরুঙ্গ সাংবাদিকদের ডেকে তা ঘটা করে দেখান।
এ দিকে, সোমবার, মোর্চা সভাপতির অনুরোধে দার্জিলিঙের অল ইন্ডিয়া লেপচা অ্যাসোসিয়েশন তাদের রিলে অনশন প্রত্যাহার করে নিয়েছে বলেও জানা গিয়েছে।
|