রাজ্য সরকার পাহাড়ে কড়া পদক্ষেপ অব্যাহত রেখেছে। বন্ধ উঠতেই পাহাড়ে নিজেদের সংগঠন আরও মজবুত করতে জোর দিয়েছে তৃণমূলও।
শুক্রবার সন্ধ্যায় রেশন সামগ্রী অবৈধ ভাবে মজুত করার অভিযোগে খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের সাব ইনস্পেক্টর পদ মর্যাদার অফিসার নবীন সুব্বাকে দার্জিলিং থানার পুলিশ আটক করে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রেশন সামগ্রী চোরাপথে বিলি করার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। প্রসঙ্গত নবীনবাবুর স্ত্রী নারী মোর্চার সক্রিয় সদস্য। সম্প্রতি পাঁচ শতাধিক রেশন ডিলার ও কয়েকজন ডিস্ট্রিবিউটরকে মোর্চার ডাকা বন্ধের সময়ে জিনিসপত্র বিলি না করার অভিযোগে শো কজ করেছে রাজ্য।
এ দিন সকালে কার্শিয়াঙের লাটপাঞ্চারে গিয়েছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সংগঠনকে চাঙ্গা করতেই যে তিনি পাহাড়ে গিয়েছিলেন তার বার্তা দিতে গত ৩ সেপ্টেম্বর কালিম্পঙে মুখ্যমন্ত্রীর সভা থেকে ফেরার পথে জখম তৃণমূল নেতা রাম সুব্বাকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান তিনি। সেই ঘটনার পর থেকেই কার্শিয়াঙের লাটপাঞ্চারের তৃণমূলের কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্য রাম সুব্বা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এদিন তাঁর চিকিৎসার জন্য অর্থ সাহায্যও করেছেন গৌতমবাবু। সেই সঙ্গে এ দিন পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের তরফে বিনা মূল্যে চাল-আটা এবং আলু বিলি করা হয়েছে। লাটপাঞ্চার এবং শেরলুতে গৌতমবাবু খাদ্যসামগ্রী বিলি করেন। তিনি বলেন, “আগে যা হয়েছে তা ভুলে গিয়ে, জিটিএ-এর মাধ্যমে উন্নয়ন হোক তাই চাইছি। মোর্চা সদস্যদের বলব, তাঁরাও নির্বাচিত প্রতিনিধি। তাই তাঁদেরও উন্নয়নের দায়বদ্ধতা রয়েছে।” |
পাহাড়ের তিনটি মহকুমাতেই এ দিন চিরাচরিত পোষাকে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে গোর্খাল্যান্ড জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির ডাকে ধর্নার কর্মসূচি ছিল। দার্জিলিঙে চৌরাস্তায়, কালিম্পঙে বাসস্ট্যান্ড, মিরিকে লেকের সামনে এবং কালিম্পঙে মহকুমা শাসকের দফতরের সামনে অবস্থান হয়। কোথাও কিন্তু বিশেষ ভিড় হয়নি। মোর্চার মুখপাত্র তথা কালিম্পঙের বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী অবশ্য বলেন, “এদিনের কর্মসূচি ছিল ইউনিট ভিত্তিক। সে কারণেই হয়তো মনে হয়েছে কর্মসূচিতে বেশি লোক সমাগম হয়নি। কারণ এর আগে মোর্চার সভাগুলিতে মানুষের ভিড় উপচে পড়েছিল। আবার যখন সে ধরনের কর্মসূচি হবে, তখন ফের বেশি ভিড় হবে।” মোর্চার সহকারী সম্পাদক রাজু প্রধান জানিয়েছেন, রাজ্যের অন্য প্রান্ত থেকে দার্জিলিং যে স্বতন্ত্র, সেই বার্তা দিতেই এ দিন গোর্খাদের রীতি মেনে পোষাক পরা হয়েছিল। এ দিকে জিটিএ চেয়ারম্যান প্রদীপ প্রধান জানিয়েছেন, জিটিএ বৈঠক নিয়ে এ দিনও তিনি কোনও চিঠি পাননি।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর পাহাড় সফরের সমালোচনা করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। শিলিগুড়িতে অশোকবাবু বলেন, “পাহাড়ের একের পর এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে তৃণমূল ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করছে। সমস্ত মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।” তিনি জানান, শিলিগুড়িতেও প্রচুর ব্যবসায়ী তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। সকলেই আতঙ্কে রয়েছেন। অশোকবাবুর দাবি, “এই ভাবে দল ভাঙানোর নোংরা খেলায় মেতেছে তৃণমূল। প্রচার কুড়োতেই গৌতম দেব বন্ধ উঠে যাওয়ার পরেও খাদ্য বিলি করছেন।” অশোকবাবুর কটাক্ষ, “ডেঙ্গি মোকাবিলায় ব্যর্থ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর মানুষের নজর ঘোরাতে এসব করছে।” তবে গৌতমবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “পাহাড়ের ব্যবসায়ীদের
কোন ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে তা কী উনি জানেন? পুলিশ আইন অনুযায়ী কাজ করছে। সিপিএমের দলীয় কার্যালয়ে এসে কি ব্যবসায়ীরা বলে গিয়েছেন যে, তাঁরা আতঙ্কে ভুগছেন?” |