কার্শিয়াংয়ের শিটং-এর গুম্ফাগাঁও এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মী পূর্ণ বাহাদুর রাই। তৃণমূল কর্মী হওয়ায় তাঁকে মোর্চা সমর্থকেরা গাড়িতে উঠতে দেন না বলে অভিযোগ। তাঁর কথায়, “ছেলে কার্শিয়াং-এ পড়ায়। সেখানে যেতে হয়। কিন্তু বাড়ি থেকে দিলারাম হেঁটে যেতে হয়। তৃণমূল করায় আমকে গাড়িতে উঠতে দেওয়া হয় না।” |
বন্ধের রাজনীতি থেকে মোর্চা আপাতত সরে এলে আলাদা রাজ্যের দাবি নিয়ে আন্দোলন এখনও পাহাড়ে অব্যাহত। লাটপাঞ্চার বাজার এলাকায় পোস্টারে লেখা, ‘চাল নয়, গোর্খাল্যান্ড দাও’। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এলাকার বাড়ি, দোকানের দেওয়ালে বাংলা, নেপালি ভাষায় লেখা ওই পোস্টার। আর এই পরিস্থিতির মধ্যেই শুক্রবার মোর্চার ‘ঘাঁটি’ বলে পরিচিত কার্শিয়াং মহকুমার লাটপাঞ্চার ও শেলপু এলাকায় গিয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে চাল, আটা ও আলু বিলি করলেন রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। উল্লেখ্য, ওই এলাকা থেকে জিটিএ ভোটে জিতেছেন মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি। সব দেখেশুনে মন্ত্রী বললেন, “আমরা শান্তি উন্নয়নের পক্ষে। মোর্চা সদস্যদের বলছি, জিটিএ-র কাজ করুন। আমরা পাশে থাকব। কোন রাজনীতি নয়, শুধুমাত্র উন্নয়নের জন্যই এখানে এসেছি।” |
মন্ত্রীর সফর নিয়ে রোশন গিরি বলেন, “মন্ত্রীর এলাকায় আসা, রসদ বিলিতে কোনও প্রভাব পড়বে না। মানুষ আমাদের সঙ্গেই আছেন।” ৩ সেপ্টেম্বরে কালিম্পঙের সভা থেকে ফেরার পথে লাটপাঞ্চার সিঙ্কোনা প্ল্যানটেশন তৃণমূল কর্মচারী ইউনিয়নের সদস্য রাম সুব্বার ওপর হামলা হয়। তিনি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি ছিলেন। এ দিন তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেন মন্ত্রী। বাড়িতে ফিরে রাম বলেন, “শিলিগুড়ি থাকতে শুনেছি তৃণমূল কর্মীদের বাড়িতে ঢিল ছোড়া হচ্ছে। আমার বাড়িতে কিছু এখনও হয়নি। তবে আতঙ্কে রয়েছি।” শুধু তৃণমূল সমর্থক নন, এলাকার সাধারণ মানুষও যে এখন পাহাড়ের অবস্থা নিয়ে শঙ্কিত তা কেউ গোপন করেননি। রেশন নিতে আসা স্থানীয় গাঁধী গ্রামের বাসিন্দা শান্তা দেওয়ান, উমা দেওয়ান, প্রতিমা রাই, রোশনা রাইরা এই দিন বলেন, “মন্ত্রী আসায় আমরা খুশি। খাবারের জিনিসপত্র পেলাম। তবে কখন কী হয় ঠিক নেই। মন্ত্রী, পুলিশ-প্রশাসন পাশে থাকলে তবে ভরসা।” |
শিটং এলাকায় ধনবীর রাই-র বাড়িতেও যান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। তৃণমূলে যাওয়ায় ১৯ জুন ধনবীরের দোকান পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ আছে মোর্চা সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এ দিন মন্ত্রীর সামনে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন ধনবীর। তাঁকে নতুন দোকান তৈরির জন্য আর্থিক সাহায্য করেন গৌতমবাবু। পরে শিটং-সহ এলাকায় ঘুরে ঘুরে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “এলাকায় প্রচুর সিঙ্কোনা চাষ হয়। কারখানা ছাড়াও পর্যটন বিকাশে কাজ হবে। নামথিং পোখরি লেককে সাজা হবে। রাস্তার কাজ হবে।” শতাধিক বাসিন্দার মধ্যে মন্ত্রী চাল-আটা-আলু বিলি করেন।
|