|
|
|
|
তারিফ রাজ্যেরও |
হাইকোর্টেই ফিরল মোর্চার বন্ধ-মামলা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
দার্জিলিং পাহাড়ে বন্ধের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশের প্রশংসা করল সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি হাইকোর্টের ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা তাদের কাছে যে মামলা দায়ের করেছিল, সুপ্রিম কোর্ট সেটি হাইকোর্টেই ফেরত পাঠিয়ে দিল। হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যকর করার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগকেও আজ সাধুবাদ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য শুনে রাজ্য সরকার ও মোর্চা দু’তরফেই সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। রাজ্যের আইনজীবীদের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আর মোর্চার নেতারা একে দেখছেন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হিসেবে।
পাহাড়ে জনজীবন সচল রাখার সঙ্গে সঙ্গে যাদের জন্য সেখানে জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। নির্দেশ না-মানায় মোর্চা নেতৃত্বকে ভর্ৎসনা করে প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তুলেছিল, লাগাতার বন্ধের ফলে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি মোর্চা কেন পুষিয়ে দেবে না? “সংবিধান মানুষকে যে মৌলিক অধিকার দিয়েছে, পাহাড়ে তার একটাও সুরক্ষিত নয়।’’ এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মিশ্র।
ওই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে মোর্চা সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল। আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ কে পট্টনায়ক ও বিচারপতি জগদীশ সিংহ খেহরের ডিভিশন বেঞ্চে মামলাটি ওঠে। এক সময় বিচারপতি পট্টনায়ক মন্তব্য করেন, “পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষত কলকাতায় বসে বন্ধের বিরুদ্ধে নির্দেশ দেওয়াটা প্রশংসনীয়। এ জন্য সাহস দরকার। কলকাতা হাইকোর্ট সেই সাহস দেখিয়েছে।” শুধু তা-ই নয়, হাইকোর্টের নির্দেশের প্রেক্ষাপটে রাজ্য সরকারের মনোভাবও সুপ্রিম কোর্টের তারিফ কুড়িয়েছে। কী রকম?
আজ রাজ্যের তরফে সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত অন্যতম আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক পাহাড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকাকে ‘যথেষ্ট ইতিবাচক’ হিসেবে অভিহিত করেছে ডিভিশন বেঞ্চ। কল্যাণবাবুর কথায়, “এ ব্যাপারে রাজ্য যা করেছে, সুপ্রিম কোর্টের মতে তা যথাযথ ও যথেষ্ট।” প্রসঙ্গত, আজ কলকাতায় মিলনমেলার মাঠে ক্ষুদ্রশিল্প প্রসার সংক্রান্ত এক মেলার উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সরকার কোনও রকম বন্ধ বা ধর্মঘট বরদাস্ত করবে না। “আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে। কিন্তু অহেতুক বন্ধ বা ধর্মঘট করে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা হলে মানা হবে না।” ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর। মমতার দাবি, আগের সরকারের আমলে পশ্চিমবঙ্গে প্রায় সাত-আট লক্ষ কর্মদিবস নষ্ট হলেও তাঁদের আমলে এখনও একটিও কর্মদিবস মার যায়নি। |
পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষত কলকাতায় বসে বন্ধের বিরুদ্ধে নির্দেশ দেওয়াটা প্রশংসনীয়। এ জন্য সাহস দরকার। কলকাতা হাইকোর্ট সেই সাহস দেখিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এ কে পট্টনায়ক |
|
পাহাড়ের বন্ধ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ-মামলাটি দায়ের করেছিলেন আইনজীবী রমাপ্রসাদ সরকার। রাজ্যের তরফে হাইকোর্টকে বলা হয়, সরকার বন্ধের বিরুদ্ধে। ৭ অগস্ট হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, পাহাড়ে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে হবে। নির্দেশ ঠিকঠাক কার্যকর না-হওয়ায় ১৪ অগস্ট হাইকোর্ট ক্ষোভ প্রকাশ করে। বন্ধের জেরে পাহাড়ে কত সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে, মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গকে তা হলফনামা দিয়ে জানাতে বলা হয়। মোর্চা কেন ক্ষতিপূরণ দেবে না, হাইকোর্ট সেই ব্যাখাও তলব করে।
এরই বিরুদ্ধে ৩ সেপ্টেম্বর মোর্চার তরফে শীর্ষ আদালতে বিশেষ অনুমতির আবেদন (স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন) দাখিল করে অভিযোগ করা হয়, কলকাতা হাইকোর্ট মোর্চার মতামত না-শুনে রাজ্যের রিপোর্টের ভিত্তিতে একতরফা রায় দিয়েছে। আবেদনে এ-ও দাবি করা হয়, গত ২৭ জুলাই থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাহাড়ে যে আন্দোলন হয়েছে, তাতে চা ও সিঙ্কোনা বাগান খোলা ছিল, উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণের বাসও নির্বিঘ্নে যাতায়াত করেছে। সওয়ালে মোর্চার কৌঁসুলি রাজীব ধবন যুক্তি দেখিয়েছিলেন, “মোর্চা কোনও বন্ধ ডাকেনি। পৃথক রাজ্যের দাবিতে সংগঠনের পক্ষে হরতাল ও বিক্ষোভ হয়েছে, যার কোনওটাই অবৈধ বা অসাংবিধানিক নয়।” পাল্টা সওয়ালে রাজ্যের কৌঁসুলি মুকুল রোহতগি বলেন, “মোর্চা বন্ধই ডেকেছিল। তাই ওদের মামলা খারিজ করা হোক।”
দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে সুপ্রিম কোর্ট আজ জানিয়েছে, এই মামলায় তারা হস্তক্ষেপ করবে না। মোর্চার যা বক্তব্য, কলকাতা হাইকোর্টই শুনবে। মোর্চা পাহাড়ে বন্ধ করেছে, নাকি হরতাল সেটাও তাদের হাইকোর্টের সামনেই ব্যাখ্যা করতে হবে।
এতে মোর্চা নেতৃত্ব সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ আজ দার্জিলিঙে বলেন, “রাজ্যের রিপোর্টের ভিত্তিতে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে, আমাদের থেকে কিছু জানতে চাওয়া হয়নি। এখন আমরা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পেলাম। পাহাড়ের আন্দোলন সংক্রান্ত যত তথ্য ও যুক্তি আমাদের হাতে রয়েছে, সবই পেশ করা হবে। আমরা খুশি।’’ মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি আজ সুপ্রিম কোর্টে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমরা শান্তিপূর্ণ হরতালের ডাক দিয়েছিলাম। বন্ধ নয়। অথচ আমাদের কথা হাইকোর্টে শোনা হয়নি। তবে সুপ্রিম কোর্ট শুনেছে। এবং জানিয়ে দিয়েছে, হাইকোর্টে এ বার আমাদের কথা শোনা হবে।” উপরন্তু মোর্চা সদস্যদের গ্রেফতারির তথ্য শীর্ষ আদালতের গোচরে আনাটাকেও নিজেদের সাফল্য হিসেবে দেখছেন রোশন। “আমাদের হাজারের বেশি সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এটা নথিভুক্ত করেছে।” বলেন রোশন। তাঁর মতে, “আমাদের দাবি ও আন্দোলনের প্রতি যাঁদের সমর্থন, তাঁরাও এ দেশের নাগরিক। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের অধিকার প্রতি নাগরিকের রয়েছে। আমাদের মূল বক্তব্য এটাই।”
রাজ্য সরকারের আইনজীবীদের দাবি, সুপ্রিম কোর্ট আদতে রাজ্যেরই পাশে দাঁড়িয়েছে। কল্যাণবাবুর বক্তব্য, “হাইকোর্টে মোর্চার কৌঁসুলিরা ছিলেন। মোর্চার কথা ওখানে শোনা হয়নি তা সুপ্রিম কোর্ট বিশ্বাস করেনি। বরং তারা সাফ জানিয়েছে, মোর্চাকে যা বলার, হাইকোর্টেই বলতে হবে।” কল্যাণবাবুর মন্তব্য, “বন্ধের বিরুদ্ধে নির্দেশ দেওয়ায় হাইকোর্টের প্রশংসা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এ-ও জানিয়েছে, রাজ্যের রিপোর্টই চূড়ান্ত।”
|
পুরনো খবর: বনধ নিয়ে উদ্বেগ কমিশনের, আরও চাপে মোর্চা |
|
|
|
|
|