কারও জন্য প্রথম সুযোগ। কারও জন্য ফের শৃঙ্গজয়। আবার কারও সামনে ‘আনফিনিশড বিজনেস’ শেষ করার চ্যালেঞ্জ। অপেক্ষা শেষ। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইউরোপ জয়ের অভিযানে নেমে পড়ছেন বিশ্ব ফুটবলের মহারথীরা।
তবে পরীক্ষা যতটা না ফুটবলারদের, হয়তো তার থেকেও বেশি কোচেদের। বিশেষ করে সে সব কোচের জন্য, যাঁরা এ বছর নতুন টিম নিয়ে নামছেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। |
হোসে মোরিনহোর চ্যালেঞ্জ যেমন, নিজের প্রিয় ক্লাব চেলসিকে ইউরোপসেরা করা। শেষ বার মোরিনহো চেলসির কোচ থাকাকালীন, তিনবারের চেষ্টাতেও জিততে পারেননি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। অনেকে মনে করেন, মোরিনহোকে চেলসি কোচ হিসাবে সরিয়ে দেওয়ার পিছনে সেটাই ছিল বড় কারণ। দ্বিতীয়বার চেলসিতে ফিরেই আগেভাগে মোরিনহো বলে দিয়েছেন, “ট্রফি জেতার খিদে আমার আগের মতোই রয়েছে। চেলসিকে আবার ইউরোপিয়ান ফুটবলের শৃঙ্গে বসাতে চাই।” সঙ্গে থাকছে কেরিয়ারে তৃতীয় ক্লাবের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার এক সুবর্ণ সুযোগ। মোরিনহোর চ্যালেঞ্জ কঠিন হলেও, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার জন্য সবচেয়ে বেশি চাপ থাকবে কার্লো আন্সেলোত্তির উপরে। রিয়াল মাদ্রিদের হটসিটে বসানোর সময় ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ মোটামুটি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ক্লাবকে দশ নম্বর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ দেওয়াটাই হবে কোচের প্রধান কাজ। রিয়ালের কোচের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অভিজ্ঞতা থাকলেও, তাঁর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার কোচ জেরার্ডো মার্টিনোর আবার অন্য সমস্যা। ইউরোপ সেরার যুদ্ধে অভিষেক হতে যাচ্ছে তাঁর। তবে স্বস্তি একটাই, এখনও ইউরোপে এসে কোনও ম্যাচ হারেননি মেসির দেশের কোচ। বরং মরসুম শুরুতে ট্রফিও পেয়েছেন। তবু বার্সা কোচ বেশ সতর্ক। বলছেন, “যদি ভেবে নিই গ্রুপটা সোজা পেয়েছি আর তাই আরামে উঠে যাব শেষ ষোলোয়, তাহলে মস্ত বড় ভুল করব।” |
কার্লো আন্সেলোত্তি (রিয়াল মাদ্রিদ)
শক্তি
• আক্রমণে বেল, রোনাল্ডো ও ইস্কোর ত্রিফলা দলের অস্ত্র।
• ওভারল্যাপিং রাইট ব্যাক ও লেফট ব্যাকরা থাকায় প্রতিআক্রমণে ভয়ঙ্কর।
দুর্বলতা
• মেসুট ওজিল ক্লাব ছাড়ায় ভাল প্লে মেকার নেই।
• রক্ষণে র্যামোস ছাড়া সাপোর্টিং ফুলব্যাক নেই।
লিগের রেকর্ড
• এসি মিলানের কোচ হিসাবে ২০০৩ এবং ২০০৭ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী। এসি মিলানে ফুটবলার হিসাবেও ১৯৮৯, ১৯৯০ সালে চ্যাম্পিয়ন। প্রথম ম্যাচ- গ্রুপ বি- গালাতাসারে বনাম রিয়াল মাদ্রিদ (মঙ্গলবার) |
জেরার্ডো মার্টিনো (বার্সেলোনা)
শক্তি
• এতদিন ছিলেন মেসি। এ বার পাশে নেইমার।
• মাঝমাঠে জাভি, ইনিয়েস্তা, ফাব্রেগাসের মতো ফুটবলার।
দুর্বলতা
• রক্ষণ দুর্বল। পুয়োল পুরোপুরি সুস্থ নন, পিকের ফর্ম খারাপ ও অ্যালবা চোটের জন্য বাইরে।
• ডেভিড ভিয়া না থাকায় দলে সেন্টার ফরোয়ার্ডের অভাব।
লিগের রেকর্ড
• চ্যাম্পিয়ন্স লিগে অভিষেক ঘটতে চলেছে মার্টিনোর। প্রথম ম্যাচ - গ্রুপ এইচে বার্সেলোনা বনাম আয়াখস (বুধবার) |
হোসে মোরিনহো (চেলসি)
শক্তি
• এ বছর সুরলে ও উইলিয়ানের মতো ফুটবলার সই করানোর পরে দলে আক্রমণের বিকল্প অনেক।
• গোলে পের চেকের অভিজ্ঞতা। সঙ্গে রক্ষণে টেরি-ইভানোভিচের মতো অভিজ্ঞ ফুটবলার।
দুর্বলতা
• কোনও ভাল সেন্টার ফরোয়ার্ড না থাকা। তোরেস ও ডেম্বা ধারাবাহিক নয়। স্যামুয়েল এটোও ফর্মে নেই।
• রক্ষণে দুর্বলতা ডেভিড লুইজ।
লিগের রেকর্ড
এফসি পোর্তো (২০০৪) ও ইন্টার মিলানের (২০১০) সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছিলেন। প্রথম ম্যাচ - চেলসি বনাম বাসেল (বুধবার) |
ডেভিড মোয়েস (ম্যান ইউ)
শক্তি
• আক্রমণে ফর্মে থাকা রবিন ফান পার্সি।
• ওয়েন রুনি এক্স ফ্যাক্টর। গোলের মধ্যে আছেন।
দুর্বলতা
• অ্যাশলি ইয়াং, ভ্যালেন্সিয়া, নানির মতো ফুটবলারদের ধারাবাহিকতার অভাব।
• চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার অভিজ্ঞতা নেই কোচের।
লিগের রেকর্ড
ডেভিড মোয়েসের অভিষেক। এর আগে ২০০৫-এ যোগ্যতা অর্জন ম্যাচ খেলেছিলেন। প্রথম ম্যাচ ম্যান ইউ বনাম বেয়ার লেভারকুসেন (মঙ্গলবার) |
|
মার্টিনোর মতোই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্বাদ সর্বপ্রথম পেতে চলেছেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের কোচ ডেভিড মোয়েস। কিন্তু ফার্গুসনের সাতাশ বছরের সাম্রাজ্যের উত্তরসূরি হয়ে কি মোয়েস পারবেন ম্যান ইউকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতাতে? সোমবার ম্যান ইউ কোচ বলেন, “যখন ম্যাঞ্চেস্টারের দায়িত্ব নিই, তখন থেকেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। এর আগে এভার্টনের হয়ে খেলেছি, কিন্তু গ্রুপ পর্বে উঠতে পারিনি। ম্যাঞ্চেস্টার হল এমনই দল, যারা অনেক দূর যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।” এই চার কোচ যদি বৃত্তের এক দিকে থাকেন, তা হলে অন্য দিকে রয়েছেন পেপ গুয়ার্দিওলা। এক বছর ছুটি কাটিয়ে আবার ফুটবলবিশ্বে নতুন চ্যালেঞ্জের সামনে তিনি। গত মরসুমের ত্রিমুকুটজয়ী বায়ার্ন মিউনিখের কোচ হয়ে ইউরোপে সাফল্যের ধারা ধরে রাখার দায়িত্ব এ বার বার্সেলোনার প্রাক্তন কোচের ঘাড়ে। বার্সেলোনার কোচ হিসাবে দু’বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার অভিজ্ঞতা গুয়ার্দিওলার প্লাস পয়েন্ট। টুর্নামেন্টের গুরুত্ব বিবেচনা করেই বুন্দেশলিগায় হ্যানোভারকে হারিয়ে গুয়ার্দিওলা বলে রেখেছেন, “বুন্দেশলিগায় জিতলাম। এখন শুধু মন দিতে চাই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দিকে।”
|