গ্যাস সিলিন্ডারবাহী ট্রাকের চালকদের কর্মবিরতির জেরে দু’দিন ধরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার রান্নার গ্যাস পেতে নাকাল হলেন কলকাতা-সহ সাতটি জেলার বহু গ্রাহক। সোমবার দুপুরে কর্মবিরতি উঠে গেলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যাপ্ত সিলিন্ডার সরবরাহ করা যায়নি বলে গ্যাস সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে।
ওই রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস সংস্থার ‘ফিলিং প্ল্যান্ট’ রয়েছে উলুবেড়িয়ার বীরশিবপুরে। সেখান থেকেই কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর এবং হাওড়া ও হুগলির গ্রাহকদের জন্য গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া হয়। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, টেন্ডার ডেকে পরিবহণ সংস্থার থেকে গ্যাস সিলিন্ডার বহন করার জন্য ট্রাক নেওয়া হয়। গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটররাও টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে সিলিন্ডার বহনের বরাত পান।
শনিবার বিকেলে সদ্য বরাত পাওয়া দিঘার এক ডিস্ট্রিবিউটর প্ল্যান্টে ট্রাক পাঠান। প্রথমে ট্রাকটিকে প্ল্যান্টে ঢুকতে দেয়নি সেখানকার চালকদের সংগঠন।
বাধা পেয়ে ওই ডিস্ট্রিবিউটর হাওড়া জেলা পুলিশের শরণাপন্ন হন। পুলিশের সহযোগিতায় ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁর ট্রাকটিকে প্ল্যান্টে ঢোকানো হয়। গ্যাস সংস্থা ট্রাকে এলপিজি সিলিন্ডার ভর্তি করে দেয়। এর পরেই চালকদের সংগঠন কর্মবিরতি শুরু করে।
|
কাজ বন্ধ ছিল এখানেই।—নিজস্ব চিত্র। |
এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫০টি সিলিন্ডারবাহী ট্রাক ছাড়ে। এক-একটি ট্রাকে ৩০০ করে সিলিন্ডার থাকে। সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানি হতে উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক পুলক রায়ের হস্তক্ষেপে কর্মবিরতি উঠে যায়। কিন্তু এর জেরে অন্তত কুড়ি হাজার সিলিন্ডার সময়ে সরবরাহ করা যায়নি এবং সোমবার ৫০টির জায়গায় মাত্র ৩০টি গাড়িতে সিলিন্ডার সরবরাহ করা সম্ভব হয় বলে গ্যাস সংস্থা জানিয়েছে।
কিন্তু কেন বাধা দেওয়া হয় ওই ডিস্ট্রিবিউটরের ট্রাককে? কেনই বা কর্মবিরতি?
ওই সংগঠনের বক্তব্য, যে সংস্থাই সিলিন্ডার বহনের বরাত পাক, তারা নিজস্ব চালক নিয়োগ করতে পারবে না। চালক নিয়োগ করতে হবে এই সংগঠন থেকে। কিন্তু সদ্য বরাত পাওয়া এই ডিস্ট্রিবিউটর সংগঠন থেকে চালক নিয়োগ করতে অস্বীকার করেন। নিজেদের তৃণমূল প্রভাবিত বলে দাবি করে চালকদের সংগঠনের নেতা শিবশঙ্কর দেব শর্মা বলেন, “ওই ট্রাক চালাতে বিশেষ প্রশিক্ষণ দরকার। যাঁদের সেই প্রশিক্ষণ আছে সেই সব চালকদের নিয়েই আমরা সংগঠন করেছি। সেই কারণেই বাইরের কোনও চালককে আমরা প্ল্যান্টে ঢুকতে দিই না। এটা জানা সত্ত্বেও গ্যাস সংস্থা বাইরের ট্রাকে সিলিন্ডার ভর্তি করিয়ে দিলেন। তার প্রতিবাদেই আমরা কর্মবিরতি পালন করি।”
গ্যাস সংস্থার দাবি, এ ধরনের কোনও প্রশিক্ষণ ট্রাক-চালকদের দরকার নেই। তা ছাড়া, প্ল্যান্টে কোনও ট্রাক এলে তাতে সিলিন্ডার ভর্তি করাতেই হবে। সেই কারণেই দিঘার ডিস্ট্রিবিউটরের ট্রাকে সিলিন্ডার ভর্তি করানো হয়েছিল।
বিধায়ক পুলকবাবু বলেন, “ওই প্ল্যান্টে তৃণমূল অনুমোদিত কোনও চালকদের সংগঠন আছে কি না, আমার জানা নেই। আমি চালকদের বলি, সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু কর্মবিরতি আগে তুলতে হবে। তার পরে সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে।” শিবশঙ্করবাবুও বলেন, “জরুরি পরিষেবার কথা মাথায় রেখে আমরা কর্মবিরতি তুলে নিই।” |