চায়ের দোকান থেকে ফেরার পথে সোমবার রাতে বাড়ির অদূরে আততায়ীদের গুলিতে খুন হলেন উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, সিপিএমের জাহাঙ্গির আলম মণ্ডল (৫০)। রাজ্যে ত্রি-স্তর পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হওয়ার পরে এই প্রথম এই মাপের নেতা খুন হলেন।
জাহাঙ্গির আলম মণ্ডল
|
এই ঘটনায় সিপিএম অভিযোগের আঙুল তুলেছে তৃণমূলের দিকে। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজ, বুধবার বসিরহাট মহকুমায় ১২ ঘণ্টা বন্ধের ডাকও দিয়েছে তারা। খুনের কারণ রাজনৈতিক বলে দাবি নিহতের পরিবারের। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই খুন। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে আট জনের নামে খুনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু পুলিশ অভিযুক্তদের নাম জানাতে চায়নি। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী বলেন, “খুনের পিছনে চারটি কারণ উঠে আসছে। রাজনৈতিক, পারিবারিক, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং সীমান্তের চোরাচালান। সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |
এই ঘটনা নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও মঙ্গলবার বারাসতে এক প্রশাসনিক বৈঠকে জেলায় অপরাধ বাড়তে থাকায় পুলিশের সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশকে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করার পরামর্শ দেন। পরে এক জনসভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা সীমান্তবর্তী জেলা। পুলিশকে আরও দায়িত্ব নিতে হবে। সক্রিয় হতে হবে। ভাড়াটে গুন্ডারা সীমান্তের ওপার থেকে এসে খুন করে, দুষ্টুমি করে পালাচ্ছে। এরা ভয়ঙ্কর। বনগাঁ, স্বরূপনগর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর অস্ত্র ঢুকছে। এ সব মানা হবে না।” জাহাঙ্গিরের বাড়ি তকিপুরের নয়দাপাড়ায়। সোমবার রাত ১০টা নাগাদ স্থানীয় তালপুকুর বাজারের একটি চায়ের দোকান থেকে বন্ধু-চিকিৎসকের সঙ্গে সাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য বেরোন জাহাঙ্গির। কিছুটা আসার পরে তাঁর বন্ধু অন্য পথ ধরেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ির আধ কিলোমিটার আগে, দিঘিরধার এলাকায় জাহাঙ্গিরের পথ আটকায় তিনটি মোটরবাইকে চড়ে আসা আট জন। তাঁর বাঁ দিকের চোয়ালের নীচে রিভলভার ঠেকিয়ে গুলি করা হয়। গুলি মাথার ডান দিক ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। |
বসিরহাট হাসপাতাল থেকে জাহাঙ্গির আলমের
দেহ নিয়ে মিছিল সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের। ছবি: নির্মল বসু। |
দেহ উদ্ধার করতে গিয়ে পুলিশ বাধা পায়। আততায়ীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে মঙ্গলবার ভোর ৪টে পর্যন্ত দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। বাধা দেওয়া হয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও। একটি টিভি চ্যানেলের প্রতিনিধি প্রহৃত হন। শেষমেশ স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার পরে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তে পাঠায়। ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার হাসনাবাদের বিভিন্ন
এলাকায় অবরোধ করেন সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা।
স্ত্রী, দুই ছেলে এবং বৃদ্ধা মাকে নিয়ে থাকতেন জাহাঙ্গির। তিনি তকিপুরের একটি শিশু-শ্রমিক স্কুলের করণিক ছিলেন। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে জিতে আমলানি পঞ্চায়েতের প্রধান হন। এ বারই প্রথম পঞ্চায়েত সমিতির ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী রিনা বলেন, “সভাপতি পদ ছাড়ার জন্য ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছিল আমার স্বামীকে। ওঁকে রাজনৈতিক কারণেই খুন করা হল। অথৈ জলে পড়লাম। আমরা চাই, রাজ্য সরকার অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক।” কারা জাহাঙ্গিরকে হুমকি দিচ্ছিল, কাদের বিরুদ্ধেই বা খুনের অভিযোগ, তা নিয়ে নিহতের স্ত্রী কোনও মন্তব্য করতে চাননি। পড়শিদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেখা যেত জাহাঙ্গিরকে। সে কারণেও তিনি খুন হতে পারেন।
এ দিন কলকাতায় দেহ এনে বিক্ষোভের পরিকল্পনা ছিল সিপিএমের। কিন্তু ব্যারাকপুর থেকে বিশেষজ্ঞ এনে ময়না-তদন্ত মেটাতে বিকেল গড়িয়ে যায়। তা নিয়ে হাসপাতালে বিক্ষোভও দেখায় সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মৃণাল চক্রবর্তী বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটের গোড়া থেকেই ভীতি প্রদর্শন, হুমকি এ সব চলছিল। তাতেও কাজ না হওয়ায় তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা সভাপতিকে সরিয়ে দিল।” অভিযোগ উড়িয়ে বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুরুল ইসলাম বলেন, “যত দূর জেনেছি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই খুন হন সভাপতি।” তাঁর সংযোজন, “আততায়ীদের গ্রেফতার করার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।”
|
এই সংক্রান্ত আরও খবর...
পুজোর পরে নয়া দাওয়াই, হুমকি গৌতম দেবের |