২০১১ সালে মগরাহাটে বিষাক্ত চোলাই মদ খেয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১৭৫ জনের। ওই ঘটনার পরে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ। ব্যবসা ছাড়তে বাধ্য হয় অনেকে। চোলাই কারবারিদের একাংশ প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানান, তাঁদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হোক। চোলাইয়ের বেআইনি কারবার ছেড়ে বিকল্প পেশার দাবি জানিয়ে পোস্টারও পড়েছিল কিছু এলাকায়। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছেছিল সেই দাবি। সে সময়ে অবশ্য প্রশাসনের তরফে তেমন কোনও আশার কথা শোনানো যায়নি। তবে চোলাই কারবারিদের বিকল্প কর্মসংস্থান চেয়ে সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ-প্রশাসনের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। চোলাই মদের কারবার রুখতে আরও বেশি সংখ্যায় দেশি মদের দোকানের লাইসেন্স দেওয়া যায় কিনা, তা-ও ভেবে দেখার প্রস্তাব গিয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে।
সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রান্তে নারী পাচারের সমস্যাও দীর্ঘ দিনের। ভিন রাজ্য থেকে উদ্ধার হওয়া মেয়েদের জন্যও বৃত্তিমূলক শিক্ষা বা এককালীন আর্থিক সাহায্য করা যায় কিনা, তা ভেবে দেখতেও মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জেলা পুলিশ কর্তাদের দাবি, মগরাহাট-কাণ্ডের পর থেকে চোলাইয়ের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু হয়। যার ফলে বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় চোলাইয়ের রমরমা প্রায় অস্তমিত। কিন্তু তাতে আবার দু’টি সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এক দিকে, চোলাই মদ তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই কর্মহীন হয়ে পড়ছেন। বহু লোকের কার্যত অনাহারে দিন কাটানোর মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অন্য দিকে, চোলাই-আসক্তেরা পুরনো কারবারিদের মদ তৈরি চালু করার জন্য চাপ দিচ্ছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার পরেও গ্রাহকদের হাতে মার খেতে হচ্ছে কারবারিদের। এখানেই উঠে আসছে পুনর্বাসন এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের দাবির কথা। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “রাজ্য সরকার প্রায় প্রতি বছর এলাকার উন্নয়ন প্রকল্পে ক্লাবগুলিকে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য করছেন। সে ক্ষেত্রে বাস্তব সমস্যাগুলির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে।” জেলার এসপি প্রবীণ ত্রিপাঠি বলেন, “জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব রাখা হয়েছে।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রাজ্য পুলিশ এলাকায় ২৯টি থানা রয়েছে। আর কলকাতা পুলিশের বর্ধিত এলাকায় আরও ১৭টি থানা। মোট ৪৬টি থানা এলাকায় বিদেশি ও দেশি মদের দোকানের মোট সংখ্যা ২৬৪। তার মধ্যে ১৭১টি দেশি মদের দোকান। দেশি মদের দোকান বাড়িয়ে চোলাইয়ের কারবারে ইতি টানতে পদক্ষেপ করার প্রস্তাব মহাকরণে পাঠিয়েছেন জেলার কর্তারা। এতে চোলাইয়ের বিষক্রিয়ার হাত থেকেও নিস্তার মিলবে বলে তাঁদের আশা।
যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করে আনা মেয়েদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানও একই রকম জরুরি বলে মনে করছেন জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা। ওই মহিলাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থাও করা উচিত বলে তাঁদের মত। পুলিশের এক কর্তা বলেন, “যৌনপল্লিতে মেয়েদের নানা রকম স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো হয়। যৌনপল্লি থেকে ফিরে আসার পরেও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জনিত নানা অসুখে ভোগেন মেয়েরা। এর চিকিৎসাও ব্যয়বহুল। ওই মহিলাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাও অত্যন্ত জরুরি।”
|