নিজস্ব ঘর নেই, কাজ চলছে বারান্দা, ক্লাবঘরে
ন্যূনতম চাহিদা একখানা ঘর। তা-ও আহামরি কিছু নয়। কাজ চালানোর মতো হলেই হল। দেড়-দু’শতক জমিতেই সেই চাহিদা মেটে। কিন্তু সেটুকুই বা হচ্ছে কই? দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্পের (আইসিডিএস) বেশির ভাগ কাজ চলে চেয়েচিন্তে পাওয়া বাড়ির বারান্দার এক ফালি, বৈঠকখানা, ক্লাব কিংবা আটচালার ছাউনির তলায়।
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বর্তমানে এই জেলায় ১০ হাজার ৫৮০টি আইসিডিএস কেন্দ্র রয়েছে। আরও ১১ হাজার ১৬টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নিজস্ব বাড়ি রয়েছে মাত্র ১৪৮৯টি কেন্দ্রের। বিভিন্ন ক্লাব, বৈঠকখানা, বারান্দায় চলছে ২ হাজার ৯০৪টি কেন্দ্র। কিছু প্রাথমিক স্কুলের ভবনও এই কাজে লাগানো হয়। বাকিগুলির অস্তিত্ব খাতায়-কলমে থাকলেও কার্যত তেমন কোনও পরিষেবাই মেলে না বলে জানালেন স্থানীয় মানুষ। ফলে মা-শিশুর স্বাস্থ্য পরিষেবার দিকটি কার্যত অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে।
কিন্তু কেন তৈরি করা যাচ্ছে না ঘর?
বাড়ির বারান্দায় চলছে কেন্দ্র।—নিজস্ব চিত্র।
মূল সমস্যাটা জমির, জানালেন সুসংহত শিশু বিকাশ কেন্দ্রের জেলা প্রকল্প আধিকারিক অনিল সরকার। তাঁর মতে, টাকা এসে পড়ে থাকলেও জমির অভাবে তৈরি করা যাচ্ছে না পাকা ঘর। কিন্তু জমি সমস্যা তো রাতারাতি মিটবে না? সে ক্ষেত্রে উপায়? সম্প্রতি নেওয়া সরকারি একটি সিদ্ধান্ত থেকে সামান্য কিছু আশার কথা শোনা গেল। অনিলবাবু জানালেন, কিছু কিছু প্রাথমিক স্কুল ভবন থেকে আইসিডিএস প্রকল্প চালানো হয়। কিন্তু এমন বহু প্রাথমিক স্কুল আছে, যেখানে এই প্রকল্প চলে না। সেই সমস্ত স্কুলগুলি থেকে আইসিডিএস প্রকল্পের কাজ চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাতে সমস্যা কিছুটা মিটবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ওই সরকারি আধিকারিক।
কিন্তু এই মুহূর্তে জল-জঙ্গল ঘেরা সুন্দরবনের গ্রামগুলিতে কেমন চলছে আইসিডিএস প্রকল্পের কাজ?
মন্দিরবাজার ব্লকের কেচারকুড় পঞ্চায়েতে পূর্ব কৃষ্ণদেবপুর সুসংহত শিশুবিকাশ কেন্দ্রটি ২০০৭ সালে অনুমোদন পায়। তার পর থেকে গ্রামের ঠাকুরবাড়ির বারান্দাতেই চলছিল কাজ। সম্প্রতি তা উঠে এসেছে এক গ্রামবাসীর বাড়ির বারান্দায়। খড় ও টালির চালের এক চিলতে সেই পরিসরে পানীয় জল, শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই। কেন্দ্রে নিয়মিত আসে ৪৬টি শিশু, জনা পনেরো গর্ভবতী-প্রসূতি। রয়েছেন কর্মী ও সহায়িকা। সকাল ১১টা নাগাদ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, রাস্তায় এক হাঁটু কাদা মাড়িয়েই মায়েরা তাঁদের শিশুদের রেখে যাচ্ছেন কেন্দ্রে। এসেছেন কয়েক জন প্রসূতিও। বারান্দায় কোনও রকমে ঠাসাঠাসি করে চলছে শিশুদের পঠনপাঠন। বাড়ির রান্নাঘরেই চলছে প্রকল্পের খিচুরি রান্না। কেন্দ্রের কর্মী ভগবতী হালদার এবং সহায়িকা অনিতা রায় জানালেন, “নির্দিষ্ট কোনও ঘর না থাকায় পরিষেবা দিতে ভীষণ সমস্যা হচ্ছে। কেন্দ্রের পঠন-পাঠনের পাশাপাশি খাতাপত্র, ওজন করার যন্ত্রপাতি রাখতে অসুবিধা হয়।” জমি না মেলায় ঘর তৈরি করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
একই অবস্থা এই ব্লকের আচনা পঞ্চায়েতের সুসংহত শিশু বিকাশ কেন্দ্রের। ১৯৭২ সালে অনুমোদনের পর থেকেই সেটির কাজ চলছে গ্রামের একটি আটচালায়। পরিষেবা পায় ৭৫ জন শিশু ও ২০ জন প্রসূতি। বেহাল পরিকাঠামোয় কাজকর্ম চালাতে প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে জানালেন কর্মী ও সহায়িকা। কর্মী জয়ন্তী হালদার বলেন, “প্রতিদিন সকলকে পুষ্টিকর খাবার যেমন ডিম, সয়াবিন খাওয়ানোর জন্য যে সাজ-সরঞ্জাম প্রয়োজন, তা নেই। রান্নার জায়গার অভাব। বেশ কয়েকটি ওজন মাপার যন্ত্র ভাল ভাবে রাখা যাচ্ছে না। এ ছাড়া, শৌচাগার ও পানীয় জলের সমস্যা তো রয়েছেই।”

দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আইসিডিএস প্রকল্প
মূল লক্ষ্য
১) গ্রামের শিশুদের পুষ্টি, শারীরিক ও মানসিক বিকাশ।
২) স্কুল-ছুট কমানো।
৩) প্রসূতি ও গর্ভবতীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো, গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টির ব্যবস্থা করা।
৪) সঠিক সময়ে তাঁদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া।
কর্মী ও সহায়িকাদের কাজ
১) গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশু, গর্ভবতী ও প্রসূতিদের কেন্দ্রে নিয়ে আসা।
২) শিশুদের পড়াশোনা করানো ও তাদের পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করা।
৩) প্রসূতি ও গর্ভবতী মায়েদের উপযুক্ত পুষ্টিকর খাবার দেওয়া, স্বাস্থ্য সচেতনত করা।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.