দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরে অবশেষে আলোর মুখ দেখলেন উত্তর ২৪ পরগনার সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষ। বিদ্যুতের দাবি নিয়ে দীর্ঘ লড়াই-আন্দোলনের পরে গত ৪ সেপ্টেম্বর হিঙ্গলগঞ্জের মঠবাড়ির গ্রামবাসীরা মেতে উঠলেন আনন্দে। কারণ এ দিন থেকে তাঁদের ঘরে আলো জ্বলল।
বসিরহাট মহকুমার হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে মোট ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত। সাহেবখালি নদীর এক পারে ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতে অনেক আগেই বিদ্যুৎ পৌঁছে গিয়েছিল। বাকি ছিল নদীর অপর পারে দুলদুলি, সাহেবখালি, যোগেশগঞ্জ, গোবিন্দকাটি এবং কালিতলা এই পাঁচটি পঞ্চায়েতের ৭৫টি গ্রাম। ২০০৯ সালে আয়লার তাণ্ডবের পর আরও বেশি করে বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন এই পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা। সম্প্রতি রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পে এখানে শুরু হয় খুঁটি পোতার কাজ। বসানো হয়েছে ৬৮টি ট্রান্সফর্মার। নদী পার করে বিদ্যুতের তার নিয়ে যেতে বসানো হয়েছে ৪টি বড় টাওয়ার। বুধবার প্রথম দফায় দুলদুলি পঞ্চায়েতের মঠবাড়ি গ্রামে বিপিএল তালিকাভুক্ত পরিবারগুলিকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। |
রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, গ্রামে গ্রামে শিবির করে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে ইতিমধ্যেই আবেদনপত্র নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ১০০০ পরিবার বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। প্রথম পর্যায়ে মঠবাড়ি গ্রামের বাজার এবং পূর্বপাড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। গ্রামের এক বাসিন্দা স্বাস্থ্যকর্মী মণিকা হালদার বলেন, “বিদ্যুতের অভাবে এতদিন প্রসূতি মহিলাদের খুব কষ্ট সহ্য করতে হত। জরুরি ইঞ্জেকশন সংরক্ষণ করা যেত না। সাপের উপদ্রব-সহ চোর-ডাকাতের ভয় তো ছিলই। তা ছাড়া ছেলেমেয়েদের পড়াশোনারও অসুবিধা হত। সেই সমস্যা অবশেষে দূর হল।” দুলদুলি পঞ্চায়েতের ময়বাড়ি গ্রামের সদস্য অনিমেষ হালদার বলেন, “এখানকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বিদ্যুৎ। সেই দাবি পূরণ করতে পেরে ভাল লাগছে। দুর্গাপুজোর আগেই উৎসবে মেতেছেন এখানকার মানুষ।”
হিঙ্গলগঞ্জের বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের আধিকারিক আলমগীর শেখ বলেন, “আপাতত ২টি ট্রান্সফর্মারের সাহায্যে ১৪০ টি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে অধিকাংশ গ্রাহকের বাড়িতে ও রাস্তায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।” বিডিও বিশ্বজিত বসু বলেন, “অনেক বাধা পেরিয়ে সুন্দরবনের মানুষের সুবিধার্থে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হল।” |