প্রতি সোমবার সকালে এলাকার বিধায়ক নিয়ম করে বসেন নাগেরবাজার লাগোয়া দলীয় কার্যালয়ে। নিজের বিধানসভা এলাকার মানুষের অভাব অভিযোগ শোনেন তিনি। তাড়াতাড়ি স্কুল খোলার দাবি নিয়ে দমদমের ক্রাইস্ট চার্চের এক দল অভিভাবক সোমবার সাত সকালেই হাজির হন ওই বিধায়কের দরবারে। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, এলাকার বিধায়ক শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এ ব্যাপারে তাঁদের সাহায্য করতে পারবেন।
তাঁর সামনে হাজির ১০-১২ জন অভিভাবকের কথা মন দিয়ে শোনেন ব্রাত্যবাবু। কিন্তু ভরসা দিতে পারেননি। বরং কিছুটা অসহায় ভাবেই বললেন, “স্কুলটি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। আমি বড়জোর আবেদন করতে পারি স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে। জেলা স্কুল পরিদর্শকের কাছে আমি রিপোর্ট চেয়েছি। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরে স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব।”
ওই স্কুলের মৃত ছাত্রী ঐন্দ্রিলা দাসের বাড়িতে গত বৃহস্পতিবার গিয়েছিলেন ব্রাত্যবাবু। সেখানেও কিছু অভিভাবক তাঁকে দ্রুত ওই স্কুলে পঠনপাঠন চালু করার বিষয়ে উদ্যোগী হতে আর্জি জানিয়েছিলেন। স্কুল তাড়াতাড়ি খোলার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধও করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু ঘটনার চার দিন পরেও স্কুল না খোলায় অভিভাবক ও ছাত্রীদের অনেকেই হতাশ। তাঁদেরই এক দল এ দিন গিয়েছিলেন বিধায়কের দররারে। |
এক অভিভাবক বলেন, “পরীক্ষা মাঝপথে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকায় আমাদের মেয়েরা আশঙ্কায় ভুগছে। চিন্তায় অনেকে ভাল করে খাওয়া-দাওয়াও করছে না। আপনি ওদের এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচান।” আর এক অভিাভবকের আর্জি, “স্কুলের অনেক তথ্য নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে শুনেছি। স্কুল না খুললে তো কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। আপনি দয়া করে অবিলম্বে স্কুল খোলানোর ব্যবস্থা করুন।” আর এক অভিভাবকের মন্তব্য, “আমার মেয়ের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। ও যে প্রচণ্ড মানসিক চাপে আছে, তা বুঝতে পারছি। কিন্তু কী যে করি!”
এর পরেই ওঠে স্কুলে ভাঙচুরের প্রসঙ্গ। এক অভিভাবকের বক্তব্য, “এ ভাবে ভাঙচুর ঠিক হয়নি। পুলিশ গোড়াতেই ব্যবস্থা নিলে এমন হত না।” অন্য এক জন বলেন, “অধ্যক্ষা এবং অন্য শিক্ষিকাদের সে দিন যে ভাবে অপমান করা হয়েছে, তাতে আমাদের মেয়েদের মনেও প্রভাব পড়েছে।” এক অভিভাবকের অভিযোগ, “প্রথমে পুলিশ কিছু করেনি। এখন নিরপরাধ ছেলেদের ধরছে। আপনি এ সব দেখুন!”
চুপ করে বসে অনেক ক্ষণ সব দাবি শুনছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। এক সময়ে মন্তব্য করেন, “স্কুলে ভাঙচুর করা একেবারেই ঠিক হয়নি।”
এর পরেই অভিভাবকদের মধ্যে থেকে উঠে আসে অভিযোগ, এমন একটা ঘটনার পরেও রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। তাতে সমস্যা বাড়ছে। এ সবের মধ্যেই কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন কিছু অভিভাবক। যার জেরেই কার্যত ভণ্ডুল হয়ে যায় বিধায়কের সঙ্গে ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের অভিভাবকদের বৈঠকও।
|