ক্রাইস্ট চার্চের অচলাবস্থা
চার দিন পরেও স্কুলের সর্বত্র ছড়িয়ে তাণ্ডবের ক্ষতচিহ্ন
ন্মত্ত হামলার পরে কেটে গিয়েছে চার-চারটে দিন। স্কুল চত্বরের এখানে-ওখানে, সর্বত্র বৃহস্পতিবারের তাণ্ডবের চিহ্ন। ভাঙাচোরা কোনও কিছুই সরানো হয়নি। অপেক্ষা ফরেন্সিক তদন্তের। এবং অনিশ্চয়তা, ফের স্বাভাবিক অবস্থায় স্কুল খোলা নিয়ে।
দমদমের ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে সে দিনের হামলার পর থেকেই বন্ধ অধ্যক্ষার ঘর। আলো নেভানো। জানলা দিয়ে বিকেলের আলো যেটুকু ঢুকেছে, তাতে আধো অন্ধকার সেই ঘরের হাল দেখে চমকে উঠতে হয়। গোটা ঘরে ছড়ানো কাচের টুকরো। মেঝেতে ছড়িয়েছিটিয়ে মোটা মোটা পড়ার বই, গল্পের বই, ছাত্রীদের খাতা, ফাইল। অধ্যক্ষার রিভলভিং চেয়ারটি ক্ষতিগ্রস্ত। দর্শনার্থীদের জন্য রাখা চেয়ারগুলোর অধিকাংশও আস্ত রাখেনি হামলাকারীরা। হ্যাঁচকা টান মেরে ছিঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুতের তারও। টেবিলের ড্রয়ার আধখোলা পড়ে। কেউ কি ড্রয়ার ঘেঁটে নথি নষ্ট করতে গিয়েছিলেন সে দিন? উত্তর মেলেনি।
ছোট্ট ঘরটাতেই বৃহস্পতিবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা লুকিয়ে বসেছিলেন অধ্যক্ষা-সহ অন্য শিক্ষিকারা। ঘরের পিছনে দিকে জানলার রড বেঁকানো। তার দশা দেখে আশঙ্কা হয়, কোনওক্রমে আর একটা রড ভেঙে ফেলা গেলে ঘরে অনায়াসে কেউ ঢুকে পড়ারও সুযোগ ছিল সে দিন।
প্রধান শিক্ষিকার ঘরের সামনে রয়েছে তাঁর অফিসঘর। ওই ঘরটিও লণ্ডভণ্ড করা হয়েছিল। ভাঙা হয়েছিল ল্যাপটপ, কম্পিউটার-সহ বেশ কিছু আসবাবপত্র। অফিসঘরে পুলিশ পাহারা না থাকলেও প্রধান শিক্ষিকার ঘরে তো পুলিশ পাহারা ছিল। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠে, ওই পুলিশদের টপকে ওই ঘরে হামলাকারীরা ঢুকলো কী ভাবে? তার কোনও সদুত্তর মেলেনি পুলিশের কাছে।
ক্রাইস্ট চার্চ স্কুল এখনও যে অবস্থায়। সোমবার। —নিজস্ব চিত্র।
গোটা স্কুলের চেহারাটাই কার্যত একই রকম। বৃহস্পতিবার রাতে ভাঙচুরের পরে যে অবস্থা হয়েছিল স্কুলের বারান্দা, অডিটোরিয়াম, টিচার্স রুমের, চার দিন পরেও প্রায় একই হাল সর্বত্র। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাচ। ভাঙা চেয়ার-টেবিল। সে দিনের ভিড়টাই নেই শুধু। তার জায়গায় খাঁ খাঁ করছে স্কুল প্রাঙ্গণ। স্কুল গেটের সামনে বেঞ্চে বসে জনা কয়েক পুলিশ। স্কুলের বাগানে স্কুলের দু’জন কর্মী ঘোরাঘুরি করছেন। ব্যস, ওইটুকুই। ছাত্রী-শিক্ষিকাদের ভিড়ে গমগম করা স্কুলবাড়ি জুড়ে নিস্তব্ধতা।
বাগান পেরিয়ে স্কুলের মূল ভবন। তার সামনে আধখোলা গ্রিল। গ্রিলের ভিতরে বারান্দায় বসে ছিলেন কয়েক জন পুলিশ। রাতদিন ওখানে পুলিশ থাকায় ভাঙা কাচের টুকরো বারান্দার এক কোণে জড়ো করে রাখা। অধ্যক্ষার ঘরের সামনে অফিসঘরও হামলার পরদিন থেকেই বন্ধ। পুলিশ জানায়, সিল করে রাখা আছে ওই ঘর। অফিসঘরের উল্টো দিকে শিক্ষিকাদের বসার ঘরও বন্ধ। তারও জানলার কাচ ভাঙা। বারান্দা পেরিয়ে অডিটোরিয়ামেও সে দিন তাণ্ডব চালিয়েছিল হামলাকীরা। সেই অডিটোরিয়ামেও বিভিন্ন জায়গায় এখনও পড়ে ভাঙা কাচের টুকরো। অডিটোরিয়ামেও ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন কয়েক জন পুলিশকর্মী।
স্কুলের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে মনে হচ্ছিল, বলে না দিলে বোধহয় অনেকে বুঝতেই পারবেন না, এ জায়গাটা আসলে কী!
পুলিশ জানায়, ফরেন্সিক তদন্তের নমুনা সংগ্রহের জন্য স্কুলের কোথাও হাত দেওয়া যায়নি। হামলার পর থেকে একই অবস্থায় রেখে দেওয়া হয়েছে সমস্ত চিহ্ন।
কিন্তু চার দিন পরেও কেন হল না নমুনা সংগ্রহ? পুলিশ জানায়, ফরেন্সিক দল গিয়ে প্রাথমিক তদন্ত সেরে এসেছে। কিন্তু আরও কিছু নমুনা দরকার। সে কারণেই কোনও কিছু সরানো যায়নি ঘটনাস্থল থেকে।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.