অধ্যক্ষাকে ইস্তফা দিতে জোর করে পুলিশই, অভিযোগ
ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশ নিষ্ক্রিয় বলে অভিযোগ আগেই উঠেছিল। এ বার তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, স্কুলের অধ্যক্ষাকে দিয়ে পদত্যাগপত্র লেখানোর ব্যাপারে অত্যধিক সক্রিয় হওয়ার। চার্চ অফ নর্থ ইন্ডিয়ার তরফে সোমবার এই অভিযোগ করা হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগটি মহাকরণ ইতিমধ্যেই কবুল করেছে। নতুন অভিযোগ কী ভাবে সামাল দেওয়া হবে, তা নিয়েই চিন্তায় পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা।
চার্চ অফ নর্থ ইন্ডিয়ার (সিএনআই) কলকাতা ডায়োসেসের পক্ষে আবির অধিকারী এ দিন বলেন, তাঁদের কাছে যা খবর, তাতে বৃহস্পতিবার ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে বিক্ষোভের দিন পুলিশই অধ্যক্ষা হেলেন সরকারকে ইস্তফা দিতে জোর করেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার বিশাল গর্গ বলেন, “এটি বাইরে আলোচনার বিষয় নয়।” তিনি কিছু না-বললেও এই অভিযোগের সত্যতা প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট পুলিশ মহলের একাংশ। এবং সেই সক্রিয়তা সম্পর্কে তাঁদের ব্যাখ্যা, বিক্ষোভকারীদের সে দিন দাবি ছিল, অধ্যক্ষাকে পদত্যাগ করতে হবে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে বাধ্য হয়েই ওই দাবি পূরণে হস্তক্ষেপ করতে হয়। এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ পুলিশেরই একটি অংশ। তাঁরা বলছেন, পদত্যাগ করা, না-করা পুরোটাই অধ্যক্ষার ব্যক্তিগত বিষয়। এর বাইরে যে সংস্থা স্কুলের পঠনপাঠন নিয়ন্ত্রণ করে, একমাত্র তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এতে পুলিশের ভূমিকা থাকতে পারে না। এটা পুলিশের অনধিকার চর্চা।
স্কুলে ঢুকতে চেয়ে অনুরোধ পুলিশকে। সোমবার ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলের সামনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
একাধিক পুলিশকর্তার আবার পাল্টা বক্তব্য, উন্মত্ত জনতার বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের জেরে সে দিন স্কুল চত্বরে যে রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তাতে পুলিশ দিশেহারা হয়ে পড়ে। প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলাতে যে যে পদক্ষেপ করার কথা (যেমন লাঠিচার্জ, জলকামান ব্যবহার), তাতেও কার্যত নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত গোটা বাহিনী এক সময় কোণঠাসা হয়ে পড়ে। সে দিন ক্রাইস্ট চার্চ স্কুলে কর্মরত একাধিক অফিসার বলেন, “হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নিচুতলার কর্মীরা বারবার লাঠি চালানোর অনুমতি চান। কিন্তু সেই অনুমতি না-পাওয়ায় তাঁরা আরও কুঁকড়ে যান।” শুধু তাই নয়, র্যাফকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েও দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এতে বাকি বাহিনীর মনোবল কার্যত তলানিতে পৌঁছে যায়।
কিন্তু পুলিশকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাধীনতা দেওয়া হয়নি কেন? পুলিশকর্তাদের একাংশের দাবি, প্রশাসনের উপরমহল থেকে নির্দেশ ছিল, বিক্ষোভকারীদের উপর জোর খাটানো যাবে না। বুঝিয়ে-সুজিয়ে বাড়ি পাঠাতে হবে। তাই জলকামান ব্যবহার করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার পরিকল্পনা থেকে সরতে হয় পুলিশকে। উপরমহলের নির্দেশ মেনে ‘অ্যাকশন’-এর বদলে হাতজোড় করেই জনতাকে শান্ত করার পথে হাঁটে পুলিশ। তাতেও বিক্ষোভকারীরা দমেননি। দিনভর হামলার পরে বিকেলের দিকে স্কুল-গেটে জড়ো হয়ে অধ্যক্ষার পদত্যাগের দাবিতে অনড় থাকেন তাঁরা।
মহাকরণ সূত্রের খবর, এর পরেই অধ্যক্ষার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলতে উদ্যোগী হয় পুলিশ। তাঁকে বোঝানো হয়, পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে জনতাকে শান্ত করার আরও কোনও পথ খোলা নেই। ওই দিন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পক্ষে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল ডিসি ডিডি দেবাশিস বেজকে। দেবাশিসবাবু সোমবার বলেন, “কী প্রতিকূলতার মধ্যে যে আমরা পরিস্থিতি সামলেছি তা অধ্যক্ষা এবং অন্য শিক্ষিকারা জানেন। লাঠিতে এক জনও জখম হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেত। আর স্কুলের যে ভৌগোলিক অবস্থান, তাতে লাঠি চালালে বহু মানুষ জখম হতেন। আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল কোনও শিক্ষিকা যেন হামলার শিকার না হন, তা দেখা। ওঁদের বাঁচাতে গিয়ে আমাদের কিছু কর্মীরাই আহত হন।”
সেই সব হামলাকারীর বিরুদ্ধে মামলা করা হল না কেন? জবাব নেই। আসলে ভাঙচুরের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানোর নির্দেশ শনিবারের আগে তাঁদের কাছে পৌঁছয়নি বলে একাধিক পুলিশ কর্তা অভিযোগ করেছেন।
পুলিশ তাতে তেমন গা না-লাগানোয় স্কুল খুলতে দেরি হচ্ছে বলেও অভিযোগ করছেন শিক্ষিকাদের কেউ কেউ। তাঁদের অভিযোগ, দমদম থানা বলছে, ফরেন্সিক তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত স্কুলের ভিতরে কোনও কিছুই সরানো যাবে না। কিন্তু সোমবারেও ফরেন্সিক দল আসেনি। অথচ স্কুলের ভিতরে যে সব আবর্জনা পড়ে রয়েছে সেগুলি না-সরালে এবং বিভিন্ন ভাঙা অংশ মেরামত না করলে স্কুল চালু করা যাবে না। ফরেন্সিক বিভাগ থেকে বলা হয়, পুলিশ সবে তাদের ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা বলেছে।

পুরনো খবর:
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.