হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসের (এইচপিএল) শেয়ার নিলাম প্রক্রিয়া ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্যে আজ, মঙ্গলবার অথবা কাল বুধবারের মধ্যে বৈঠকে বসতে চলেছে এই সংক্রান্ত বিশেষ মন্ত্রিগোষ্ঠী। পেট্রোকেম
কিনতে আগ্রহী ৫টি সংস্থা যে চারটি প্রশ্ন তুলেছে, সেগুলি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। পাশাপাশি, আগ্রহী সংস্থাগুলিকে ১৫ দিনের মধ্যে নিলামের দর দিতে বলে নোটিস পাঠানো হবে। মহাকরণ সূত্রে এই
খবর মিলেছে।
নিলামের প্রস্তুতি নিয়ে এ দিন মহাকরণে বৈঠক করেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বৈঠকে এইচপিএলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুমন্ত্র চৌধুরি, শিল্প সচিব চঞ্চলমল বাচোয়াত এবং শিল্প উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কৃষ্ণ গুপ্ত উপস্থিত ছিলেন। পরে পার্থবাবু বলেন, “সরকার ঘোষিত সময়সীমার (৩০ সেপ্টেম্বর) মধ্যেই হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস বিক্রির কাজ শেষ করতে চায়। সেই লক্ষ্যেই সরকার এগোচ্ছে। চলতি সপ্তাহে মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকেই বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।” মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পার্থবাবু ছাড়াও এই মন্ত্রিগোষ্ঠীতে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত।
তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা গেল, ইন্ডিয়ান অয়েল এবং ওএনজিসি এবং দু’টি বেসরকারি সংস্থা কেয়ার্ন ইন্ডিয়া ও মুকেশ অম্বানীর রিলায়্যান্স হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালস কেনার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে। গত শনিবার রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের দফতরে এই সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন পরামর্শদাতা সংস্থা (ট্র্যানজাকশন অ্যাডভাইজার) ডেলয়েট এবং নিগমের কর্তারা। আগ্রহী সংস্থাগুলি পেট্রোকেম নিয়ে চারটি প্রশ্ন তুলেছে। সেগুলি হল:
• চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত যে বিপুল লোকসানের বোঝা পেট্রোকেমের ঘাড়ে চেপেছে, তার কতটা দায়ভার নতুন মালিকের উপরে বর্তাবে?
• সংস্থার হস্তান্তর পর্বে (সংস্থার শেয়ার কেনা থেকে নিয়ন্ত্রণ হাতে আসার মধ্যবর্তী সময়) পরিচালন পর্ষদে ক্রেতা সংস্থার প্রতিনিধি থাকবে কি না?
• রাজ্য সরকার যে ৬৭.৫০ কোটি শেয়ার বিক্রি করতে চাইছে তার মধ্যে ১৫.৫০ কোটি শেয়ার নিজেদের বলে দাবি করেছে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। এই বিতর্কিত শেয়ার নিয়ে সরকারের অবস্থান কী?
• সংস্থা কেনার
পরে পাঁচ বছর তা বিক্রি না-করার শর্ত কেন রাখা হয়েছে?
গত মে মাসে হলদিয়া পেট্রোকেমে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে দিতে চেয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল রাজ্য সরকার। ইচ্ছাপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা ছিল ১০ জুন। এর পরে শেয়ার কিনতে চেয়ে দাম জানানোর সময়সীমা ৩১ আগস্ট ঠিক হয়। কিন্তু শেয়ার কেনার চুক্তিপত্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সময়সীমা পিছিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর ধার্য হয়েছে। কিন্তু তার পরেও নতুন
করে ওঠা এই চারটি প্রশ্ন সেই সময়সীমাও পিছিয়ে দিতে পারে
বলে শিল্প দফতরের কর্তাদের একাংশের আশঙ্কা।
ইতিমধ্যে মূলধনের অভাবে হলদিয়া পেট্রোকেমের দৈনন্দিন কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে। কারণ, ন্যাপথা কেনার টাকা নেই। আর নিলাম না-হওয়া পর্যন্ত ব্যাঙ্ক কোনও ঋণও দেবে না। সরকারের অবশ্য দাবি, সংস্থা চালু রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু নিলাম যত পিছোচ্ছে, ততই সঙ্কট বাড়ছে পেট্রোকেমের।
আগ্রহী সংস্থাগুলির তোলা প্রশ্ন প্রসঙ্গে শিল্প দফতরের এক শীর্ষ কর্তা এ দিন বলেন, পেট্রোকেম বিক্রি নিয়ে আলোচনার সময়ই (ডিউ ডিলিজেন্স) তার আর্থিক হাল কী তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্পষ্টই বলে দেওয়া হয়েছে, যে সংস্থা পেট্রোকেম কিনবে, তাদেরই লোকসানের দায় নিতে হবে। হস্তান্তর পর্বে পেট্রোকেমের পরিচালন পর্ষদে ক্রেতা সংস্থার প্রতিনিধি রাখার বিষয়ে নিলামের পরামর্শদাতা সংস্থা ডেলয়েটই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানান ওই কর্তা। এ ব্যাপারে সরকারের কিছু বলার নেই। বিতর্কিত শেয়ার প্রসঙ্গে ওই কর্তার বক্তব্য, হলদিয়া পেট্রোকেম কিনতে চাইলে এই ঝুঁকি নিতেই হবে। আর পাঁচ বছর শেয়ার বিক্রি না-করার শর্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, মন্ত্রিগোষ্ঠী চাইলে তা কমিয়ে তিন বা দু’বছর করে দিতে পারে। শিল্প দফতরের একার পক্ষে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।
চারটি প্রশ্ন ছাড়াও পেট্রোকেম কেনার ব্যাপারে ওএনজিসি একটি প্রস্তাব দিয়েছে। আগ্রহী তিনটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মধ্যে থেকে কনসোর্টিয়াম গড়ে নিলামে অংশ নিতে চেয়েছে তারা। এই প্রস্তাবে সরকারের আপত্তি রয়েছে বলেই শিল্প দফতর সূত্রের খবর। সরকারের বক্তব্য, আগ্রহী সংস্থার মধ্যে জোট বেঁধে নিলামে যোগ দেওয়া যাবে না। তবে নিজের হাতে ৫১ শতাংশ শেয়ার রেখে বাইরের কোনও সংস্থার সঙ্গে জোট বাঁধা যাবে। সরকারের এই অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে ওএনজিসি-র নিলামে যোগদান অনিশ্চিত হয়ে পড়ল বলে অনেকের মত। |