|
সার্কেল ম্যানেজারের
বদলি ঘিরে বিতর্ক
অরুণ মুখোপাধ্যায় • সিউড়ি |
|
এক জনকে তিন বছর পরে বদলি। অন্য জনের কাছে মাত্র ন’ মাসের মাথায় বদলির নির্দেশ এসেছে। টানা তিন বছর পরে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের রামপুরহাটের ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার নারায়ণচন্দ্র রায়কে বদলি করা নিয়ে খুব একটা আপত্তি না থাকলেও জেলা বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের সার্কেল ম্যানেজার কল্লোলকান্তি দাসের বদলি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অধিকাংশ কর্মী। এর প্রতিবাদে সোমবার সিউড়িতে বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের জেলা অফিসের সামনে সব শ্রেণির বিদ্যুৎকর্মীরা বিক্ষোভে সমিল হন। দুপুর দেড়টা থেকে ২টো পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে।
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হুগলির বাসিন্দা নারায়ণবাবুকে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এবং মেদিনীপুরের বাসিন্দা কল্লোলবাবুকে বালুরঘাটে বদলি করার নির্দেশ এসেছে গত শনিবার। রুটিন বদলি হিসেবে দেখানো হলেও বিদ্যুৎ দফতরের কর্মীদের একাংশ দাবি করেন, কাজে যোগ দিয়েই কল্লোলবাবু দুর্নীতির অখড়া ভাঙতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন। বহু বকেয়া রাজস্বও আদায় হয়েছে। তাই জেলার বিদ্যুৎ দফতরের কিছু অফিসার ও এক শ্রেণির দুর্নীতিগ্রস্থ ঠিকাদারের বিষ নজরে পড়েন তিনি।
প্রসঙ্গত, জেলা বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের গুদাম প্রায় ফাঁকা থাকলেও জেলার কয়েকজন ঠিকাদারের গুদামে প্রচুর নতুন ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম মজুত রয়েছে। এই অভিযোগ পেয়ে গত জুলাই মাসে তল্লাশি চালিয়ে মজুত ট্রান্সফর্মারের হদিশ পায় জেলা বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের তদন্তকারী একটি দল। ওই সময় তল্লাশি চালিয়ে আমোদপুর, লাভপুর ও বোলপুরের কয়েকজন অনুমোদিত ঠিকাদারের গুদামে প্রচুর পরিমাণ নতুন ট্রান্সফর্মার ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের হদিশ মিলেছিল। লাভপুরের একটি ঠিকাদারের কাছে থাকা ৩৫টির মতো ট্রান্সফর্মার মিলেছিল একটি কাঠকলের গুদামে।
তল্লাশি সংক্রান্ত রিপোর্ট পেয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর কলকাতা থেকে পাঁচ জনের একটি দল (স্পেশাল অডিট টিম) জেলায় আসে। ওই দল বোলপুর মহকুমা জুড়ে তল্লাশি শুরু করে। ওই দলের চোখে পড়ে বোলপুরের কাছে সাত্তোর গ্রামে ব্যাপক হুকিং করে সাবমার্সিবল পাম্প চলছিল। ওই দলটি মাঠে নামতেই চাষিরা তেড়ে আসেন বলে অভিযোগ। টানা দু’সপ্তাহ ধরে ওই তল্লাশি চলার কথা ছিল। ঠিক এই সময়েই কল্লোলবাবুর বদলির নির্দেশ আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের অধিকাংশ কর্মী।
গত পাঁচ সেপ্টেম্বর কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছিল। বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, তারাপীঠ ঢোকার মুখে বড়শাল গ্রামে ১১ হাজার ভোল্টের তার ছিঁড়ে গিয়ে ওই বিপত্তি ঘটেছিল। রামপুরহাটের বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের কর্মীদের অভিযোগ, সমগ্র রামপুরহাট এলাকাতেই কোনও রক্ষণাবেক্ষেণ হয় না ঠিকাদারদের গাফিলতিতে। সেক্ষেত্রে সেখানকার ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার নারায়ণবাবু কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ। তাই ওই বদলির নির্দেশ।
কিন্তু কম সময় জেলায় আসা কল্লোলবাবুকে কেন বদলির নির্দেশ দেওয়া হল? বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের জেলা চিফ অ্যাডভাইজার মিলন মুখোপাধ্যায় বলেন, “এই জেলায় বিদ্যুৎ বাবদ রাজস্ব আদায় খুবই কম ছিল। কল্লোলবাবু আসার পরে সেই রাজস্ব আদায় বাড়িয়েছেন এবং দুর্নীতি রুখতে ব্যবস্থা নিচ্ছিলেন। তাঁকে অন্তত এক বছর রাখা উচিত ছিল।” প্রভাবশালী কাউকে দিয়ে বদলি করা হয়েছে বলে দাবি মিলনবাবুর। কাজে জেলার বাইরে থাকায় কল্লোলবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
|