আলো বিভ্রাটে বাগানেও লোডশেডিং
জর্জ: ১ (মানে)
মোহনবাগান: ১ (কাতসুমি)
লকাতা লিগের উদ্বোধনী ম্যাচে চার গোল করার আনন্দে বিভোর সবুজ-মেরুন জনতা যে তৃপ্তির ঢেকুর তুলবেন, তার উপায় নেই! মোহনবাগানের চাকা দ্বিতীয় ম্যাচেই আটকে গেল জর্জের ‘চোরাবালি’তে। শনিবার ম্যাচের পরে বারাসত স্টেডিয়াম জুড়ে শুধুই আশঙ্কা আর হা-হুতাশ, নতুন মরসুমে এরিক-কাতসুমির মতো বিদেশি দিয়ে কি ট্রফির খরা কাটবে না?
স্থানীয় লিগের হালও অনেকটা মোহনবাগানের মতোই! বড় স্পনসর পেলেও পরিকাঠামো যে তিমিরে পড়ে ছিল, সেই তিমিরেই রয়েছে। কোনও উন্নতি হয়নি। লিগের শুরুতেই ইস্টবেঙ্গল মাঠে ফ্লাডলাইটের অভাবে ম্যাচ ভেস্তে গিয়েছিল। এ দিন ফ্লাইলাইটের জন্যই আবার বেআব্রু হল বাংলা ফুটবল। আলো-বিভ্রাটের জেরে প্রায় পনেরো মিনিট খেলা বন্ধ রাখতে হল।
আলো থেকে আঁধারে। বিরতিতে ‘ফুটবলার’ শ্রাবন্তী।
এখানেই অবশ্য শেষ নয়। কলকাতা লিগের ম্যাচ হবে আর বিতর্ক থাকবে না, সেটা কী হয়? ম্যাচের পরে ড্রেসিংরুমে ঢোকার সময় বাগানের গোলকিপার সন্দীপ নন্দীকে ধাক্কা মারার অভিযোগ উঠল পুলিশের বিরুদ্ধে। সন্দীপ বললেন, “আমি গেট দিয়ে ঢোকার সময় প্রথমে একজন পুলিশ অফিসার বাধা দেন। আমি নিজের পরিচয় দিলেও, উনি শোনেননি। আমাকে ধাক্কা মারেন তিনি।” সন্দীপের গায়ে হাত দেওয়া নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়েন বাগান কর্তারা। নিমেষের মধ্যে পরিস্থিতি এতটাই বড় আকার নিয়ে ফেলে যে তা সামলাতে পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদেরও হিমশিম খেতে দেখা যায় স্টেডিয়ামে। যদিও বারাসত পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, “গোটা ব্যাপারটাই একটা ভুল বোঝাবুঝি থেকে তৈরি হয়েছে। আর কিছুই নয়।” সন্দীপ অবশ্য এ দিনের দলে ছিলেন না।
পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, ম্যাচ থামেনি। সন্দীপ-বিতর্কে শুরুতে ঝামেলা বাধলেও, পরে সব ঠান্ডা হয়ে যায়। কিন্তু মোহনবাগান কি পারবে তার পায়ের নীচের হারিয়ে যাওয়া জমি শেষ পর্যন্ত পুনরুদ্ধার করতে? কলকাতা লিগে এক একটা পয়েন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে শুরুতেই দু’পয়েন্ট নষ্ট করে ট্রফির দৌড় থেকে একটু হলেও পিছিয়ে পড়ল করিম বেঞ্চারিফার দল। বাগান কোচ অবশ্য স্টেডিয়াম ছাড়ার আগে বলে গেলেন, “এখনও জল অনেক দূর গড়াবে। এত তাড়াতাড়ি কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবেন না।” করিমকে আত্মবিশ্বাসী শোনালেও, ফুটবলারদের খেলায় সেই আত্মবিশ্বাস কোথায়? সেই গগনে গগনে ফুটবল আর অজস্র মিস পাসে ভরা। জর্জের বিরুদ্ধেই চল্লিশ মিনিটে গোল খাওয়ার পরে বাকি এক ঘণ্টা কেঁপে কেঁপে এক শেষ সবুজ-মেরুন জার্সি! তা হলে ইস্টবেঙ্গল, ডেম্পো কিংবা চার্চিলের বিরুদ্ধে কী হবে? বাগানে উইং প্লে বলে কিছু নেই। যা পেনিট্রেশন হচ্ছে, সব মাঝমাঠ ধরে। কিন্তু তা দিয়ে কি আর গোলের সন্ধান পাওয়া যায়? বিশেষ করে যখন জর্জের দুই স্টপার গৌতম দেবনাথ ও কৌস্তভ বন্দ্যেপাধ্যায় ঠাঁয় দাঁড়িয়ে নিজেদের বক্সে। উইংয়ে অ্যান্টনি পেরেরা ও লেফট ব্যাকে ব্যাঙ্ককের গাফিলতির জন্যই সহজে গোল করে যান জর্জের বিদেশি স্ট্রাইকার মানে।
ম্যাচ এগোতে স্টেডিয়াম ডুবল অন্ধকারে। শনিবার বারাসতে।
মোহনবাগানের গোল শোধ দিতে লেগে গেল আরও আধ ঘণ্টা। এর ফাঁকে যে করিমের দল সুযোগ পায়নি, তা কিন্তু নয়। তবে একজন প্রকৃত স্ট্রাইকারের অভাবে ভুগতে হল বাগানকে। শঙ্কর ওরাও-মণীশ ভার্গবরা হেলায় নষ্ট করলেন তিন-চারটে সহজ সুযোগ। হোসে র‌্যামিরেজ ব্যারেটোর অকাল অবসরে বাগান যে কতটা ওডাফা-নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে, সেটা আবারও প্রমাণ হয়ে গেল বারাসতে। এ দিন গোটা ম্যাচে এক বারই জর্জ ডিফেন্সকে নড়বড়ে দেখিয়েছে। আর সেই সুযোগেই ১-১ করে মান বাঁচান কাতসুমি। আগামী দিনে অবশ্য তাঁর পিছনেও প্রচুর সময় দিতে হবে করিমচাচাকে। কাতসুমিকে ‘উইথ দ্য বল’ খুব ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। তবে বল ছাড়তেও তো জানতে হবে! প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত সময় বল পায়ে রাখতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলছেন জাপানি-মিডিও। তবে সব কিছুর মধ্যে কাতসুমি সামান্য আশার আলো জাগালেও, এরিক মুরান্ডাকে নিয়ে খুব একটা নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। অন্তত প্রথম দিনের বিচারে তাঁর গতি ও স্কিল খুব একটা আকর্ষণীয় লাগল না। দেখে মনে হল, এরিকের চেয়ে কুইন্টন জেকব অনেক গুণ ভাল ছিলেন। করিম বলছিলেন, “সবে এসেছে। আমি কী চাইছি, সেটা বুঝতে আরও একটু সময় লাগবে।” জর্জ কোচ এবং প্রাক্তন মোহনবাগান কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য অবশ্য সাফ জানিয়ে দিলেন, “এরিকের চেয়ে আমার দলের দুই বিদেশি মানে ও ওয়াহিদ অনেক ভাল।”
গোল করে কাতসুমি।
মোহনবাগানের আটকে যাওয়ার পিছনে আরও দু’টো বড় কারণ হল, জর্জের অযথা সময় নষ্ট করার খেলা ও কাতসুমির গোলের পরে আলো নিভে যাওয়া। তবে অজুহাত দিয়ে তো আর পয়েন্ট ফিরে পাওয়া যাবে না!
কথায় বলে যার শেষ ভাল, তার সব ভাল। মনে হচ্ছে, কলকাতা লিগের ট্রফি জিততে হলে করিমকে শেষ পর্যন্ত অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে!

মোহনবাগান: শিল্টন, ওয়াহিদ, ইচে(রড্রিগেজ), কিংশুক, ব্যাঙ্কক, কাতসুমি, ডেনসন, আদিল, অ্যান্টনি, মণীশ, শঙ্কর (এরিক)।

ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

পুরনো খবর:

নিজেদের মাঠে ফ্লাডলাইট তৈরি করতে চায় ইস্টবেঙ্গল
শুধু কলকাতা লিগ নয়, আই লিগের ম্যাচও নিজেদের মাঠে খেলতে চাইছে ইস্টবেঙ্গল। ফ্লাডলাইটে। এ দিন ক্লাবের বার্ষিক সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হল, নিজেদের মাঠে ফ্লাডলাইটের জন্য সেনাবাহিনীর কাছে আবেদন করা হবে। সবুজ সঙ্কেত পেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লাল-হলুদ কর্তারা নিজেদের মাঠে আলোর ব্যবস্থা করবেন। তিন প্রধানের মধ্যে মোহনবাগান মাঠেই একমাত্র ফ্লাডলাইট আছে। কিন্তু ব্যবহার না করে করে তা এখন অকেজো। গ্যালারির মতোই তা নিয়ে উদাসীন সবুজ-মেরুন কর্তারা। এ দিন লাল-হলুদের শীর্ষকর্তা দেবব্রত সরকার বলেন,“সদস্য-সমর্থকরা যাতে আই লিগ নিজেদের মাঠে ফ্লাডলাইটে দেখতে পারেন তার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা চাই আই লিগ ম্যাচও ইস্টবেঙ্গল মাঠে হোক।” সেনাদের কাছে ইস্টবেঙ্গল আবেদন জানাবে গ্যালারির উপর ছাউনি তৈরির অনুমতি দেওয়ার জন্য। এ ছাড়াও সভায় সদস্যদের বার্ষিক চাঁদা বাড়ানো নিয়ে প্রস্তাব ওঠে। সঙ্গে নতুন সদস্যরা যাতে ক্লাবের ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে টাকা দিতে পারে সেই ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। সভার আগে সংবর্ধিত করা হয় ভারতের প্রথম ফুটবলার-সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমরেশ চৌধুরী, মানস ভট্টাচার্য, অলোক মুখোপাধ্যায়রা। সংবর্ধনা পেয়ে বাগানের ঘরের ছেলে প্রসূন আপ্লুত। বলেন, “এই সম্মান আমার কাছে অর্জুন পুরস্কার পাওয়ার থেকেও বড় প্রাপ্তি।”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.