এ বারে আর প্রচার কমিটির মুখোশের আড়ালে নয়, তিনি আবির্ভূত মুখোমুখি। ‘হাইটেক’ প্রচার কী হতে পারে, গুজরাতে বিধানসভার নির্বাচনে দেখিয়ে দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার পরে প্রচারকে তিনি কোন স্তরে নিয়ে যেতে পারেন, কংগ্রেস নেতৃত্ব তার কূল-কিনারাও খুঁজে পাচ্ছে না। আর তাই ভোটের আট মাস আগে থেকেই প্রচার-কৌশল নির্ধারণে পেশাদার সংস্থাগুলির সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করে দিলেন কংগ্রেস নেতারা।
কংগ্রেস সূত্রে খবর, দলের ওয়ার রুমে এখন চরম ব্যস্ততা। এক ডজন পেশাদার সংস্থার সঙ্গে ইতিমধ্যেই বৈঠক করেছেন রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ নেতারা। বৈদ্যুতিন মাধ্যমে প্রচারের জন্য একটি পেশাদার সংস্থার সঙ্গে চুক্তি প্রায় পাকা। স্থির হয়েছে, প্রথম পর্যায়ের বিজ্ঞাপনে ৫০০ কোটি টাকার বরাত দেওয়া হবে তাদের। এখানেই শেষ নয়, প্রচারে অভিনবত্ব আনতে আরও কিছু দেশি-বিদেশি পেশাদার সংস্থার সঙ্গে কথা চলছে। লোকসভা ভোটের আগে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের সময় থেকেই যাতে প্রচারের চমকে ভোটারদের আকর্ষণ করা যায়, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। ২০০৯-এর এপ্রিল-মে মাসে গত লোকসভা ভোটে কিন্তু এই তাড়াহুড়ো দেখায়নি কংগ্রেস। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে প্রদেশ কংগ্রেস সংগঠনগুলিই নিজের নিজের মতো প্রচারের ব্যবস্থা করেছিল। ২০০৮-এর নভেম্বরে বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের বেশ কিছু দিন পরে লোকসভা ভোটের প্রচারের প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। এ বার এই আগাম প্রস্তুতির মূলত দুটি কারণ বলা হচ্ছে কংগ্রেস সূত্রে। প্রথম কারণটা যদি সনিয়া গাঁধীর হাত থেকে দলের নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার রাশ রাহুলের হাতে চলে যাওয়া হয়, দ্বিতীয় কারণটি অবশ্যই নরেন্দ্র মোদী। টিভি, এফএম রেডিও-সহ বৈদ্যুতিন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন, ও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার ছাপিয়েও গুজরাতে গত বিধানসভা ভোটের প্রচারে নতুন নজির তৈরি করেছিলেন মোদী। থ্রিডি হলোগ্রাফিক ব্যবস্থায় এক সঙ্গে ৫৩টি জনসভায় ‘লাইভ’ দেখানো হয়েছে মোদীর বক্তৃতা। এমনকী সেই প্রযুক্তি ও ব্যবস্থাপনার জন্য ‘গিনেস বুক’-এ নাম উঠেছে হায়দরাবাদের সংশ্লিষ্ট সংস্থাটির।
কংগ্রেস নিশ্চিত, এ বার তার থেকে আরও কয়েক ধাপ এগোনোর চেষ্টা করবেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী। কংগ্রেসের প্রচার কমিটির সদস্য জানান, মোদীর প্রচার মোকাবিলায় তাঁরাও প্রযুক্তির সন্ধানে রয়েছেন। তবে তার ধরণধারন নিয়ে এখন কিছু জানাতে চাইছেন না তাঁরা।
তবে বৈদ্যুতিন মাধ্যমে কংগ্রেসের প্রচারের বিষয় কী হবে তা মোটামুটি স্থির করে ফেলেছেন দলীয় নেতৃত্ব। খাদ্য সুরক্ষা, ১০০ দিন কাজ, জমি নীতি-সহ সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে প্রচারের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কংগ্রেসের ভূমিকা নিয়েও প্রচার চালানো হবে গণমাধ্যমে। মোদী যখন গুজরাতের সাফল্য তুলে ধরে প্রচারে নামবেন, তখন তাঁর দাবিকে ‘মিথ্যা প্রমাণিত’ করতে ভুয়ো সংঘর্ষ, অপুষ্টি, জলসঙ্কটের মতো পরিস্থিতিকে প্রচারে তুলে ধরবে। তবে এ সবই প্রস্তুতি কাহিনী। প্রচারে শেষ পর্যন্ত কে কাকে টেক্কা দেবে, তার বিচার অবশ্যই ভোটাররা করবেন। |