গুজরাতে ভুয়ো সংঘর্ষে অভিযুক্ত পুলিশকর্তা ডিজি বানজারার পত্রবোমায় বিজেপি যখন টালমাটাল, নতুন করে তখন আশার আলো দেখছে কংগ্রেস। ডান ‘হাত’-এ খাদ্য সুরক্ষা, জমি বিল-সহ গুচ্ছ সামাজিক কর্মসূচির পাশাপাশি বাম হাতে সেই পত্রবোমা নিয়েই এ বার ভোট যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে চলেছে কংগ্রেস। আর সেই দুই বিষয়কে সামনে রেখে মূল্যবৃদ্ধি, আর্থিক মন্দা, দুর্নীতির মতো যাবতীয় বিরুদ্ধ-বিষয়কে ঢেকে দিতে চাইছেন সনিয়া-রাহুল।
সংসদে এ বার বাদল অধিবেশন শুরু হওয়ার সময় থেকেই টাকার দাম দ্রুত পড়তে শুরু করে। মুখ থুবড়ে পড়ে শেয়ারবাজারও। আর্থিক মন্দার সেই পরিবেশে দৃশ্যত মনমরা ছিলেন কংগ্রেস নেতারা। এটুকুই ভরসা ছিল, কোনও মতে খাদ্য সুরক্ষা বিল সংসদে পাশ করানো গেলে অন্তত মুখরক্ষা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাদল অধিবেশনে শুধু খাদ্য সুরক্ষা বিলই নয়, জমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত নতুন বিল, এমনকী হকার বিলও পাশ করাতে পেরেছে সরকার। তাতেও অবশ্য বিনিযোগকারীদের আস্থা খুব একটা ফেরেনি। উল্টে ভর্তুকির বোঝা বাড়ার আশঙ্কায় খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্পের কড়া সমালোচনা করছে শিল্পমহল। কিন্তু এই নিন্দে-মন্দে দলকে ভ্রূক্ষেপ না করার নির্দেশ দিচ্ছেন রাহুল গাঁধী। তাঁর নির্দেশ, লোকসভার ভোট প্রচারের অভিমুখ করা হোক গ্রাম ও গরিবকেই। সংসদে সদ্য পাশ হওয়া জমি বিলে সরকার জমি-মালিককে কত বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে, সেটাও বেশি করা তুলে ধরা হোক। গরিবমুখী সেই প্রচার জোরদার করতে সরকারকে দিয়ে শহরের গরিবদের কর্মসংস্থান ও বাসস্থানের প্রকল্পটিও পাশ করিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস।
কংগ্রেসের কৌশলের মধ্যে এ পর্যন্ত নতুন কোনও চমক নেই। কিন্তু বাদল অধিবেশন শেষ হওয়ার প্রাক-মুহূর্তে বানজারার পত্রবোমাই খুশির পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। দলের শীর্ষ নেতারা স্বীকার করছেন, লোকসভা ভোটের ঘোড়া ছুটিয়ে এগিয়ে চলা মোদীকে কব্জা করার কোনও অস্ত্রই তাঁরা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। গুজরাত দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে এনে মোদী-বিরোধী প্রচার চালানো নিয়েও দ্বিধা ছিল। সে ক্ষেত্রে ধর্মীয় মেরুকরণের পরিবেশ তৈরি হয়ে বিজেপিরই লাভ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু গুজরাতে ভুয়ো সংঘর্ষ নিয়ে রাজ্য পুলিশের প্রাক্তন কর্তা বানজারা যে ভাবে মোদীর নাম জড়িয়েছেন, তাতে আপাতত খুবই উৎসাহী কংগ্রেস।
পত্রবোমার ধাক্কায় এখন রক্ষণাত্মক বিজেপি। এ ঘটনায় বিজেপির মধ্যেও তোলপাড় শুরু হয়েছে। দলের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে মোদীর নাম ঘোষণার পথে কাঁটা বিছিয়ে দিতে উঠে পড়ে লেগেছেন বিজেপি শীর্ষ নেতাদের একাংশ। তার থেকেও বড় কথা, বানজারার চিঠিকে ভুয়ো সংঘর্ষের ঘটনায় সাক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে সিবিআই। তা নিয়েই কংগ্রেসের উৎসাহ সব থেকে বেশি। তাঁদের বক্তব্য, বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী যদি ভোটের আগে এ ভাবে কালিমালিপ্ত হন, সেটাই হবে কংগ্রেসের মোক্ষম অস্ত্র।
কিন্তু ভুয়ো তদন্তে মোদীর নাম জড়ালে হিতে বিপরীত হবে না তো কংগ্রেসের? সিবিআইকে অপব্যবহারের অভিযোগ উঠবে না তো সনিয়া-রাহুলের বিরুদ্ধে?
জবাবে কংগ্রেসের এক শীর্ষনেতা আজ বলেন, সম্প্রতি একাধিক ঘটনায় সরকারকে প্রবল অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে সিবিআই। রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছে পবন বনশলকে। এমনকী কয়লা কেলেঙ্কারির ঘটনায় খোদ প্রধানমন্ত্রীকেও তারা জেরা করতে পারে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে। কংগ্রেস সত্যিই সিবিআই-কে অপব্যবহার করলে তাদের এই অস্বস্তি পোয়াতে হত না। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথও বলেছেন, “সিবিআই চাইলে প্রধানমন্ত্রীকেও জেরা করতে পারে। কারণ প্রধানমন্ত্রীও আইনের ঊর্ধ্বে নন।”
এ কথা বলে কংগ্রেস নেতারা আসলে প্রেক্ষাপট তৈরি করতে চাইছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। যাতে সিবিআই এর পর ভুয়ো সংঘর্ষ মামলায় মোদীর নাম জড়ালে কংগ্রেসের দিকে আঙুল উঠতে না পারে।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, সিবিআই সরকারি ভাবে এই পদক্ষেপ না করা পর্যন্ত বানজারার চিঠি নিয়ে খুব বেশি মুখর না হওয়ারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। কিন্তু সিবিআই সেই প্রক্রিয়া শুরু করা মাত্রই মোদী-বিরোধী প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইছে কংগ্রেস।
বস্তুত খাদ্য সুরক্ষা ও জমি বিল পাশের পর রাজ্যে রাজ্যে কংগ্রেস নেতারা প্রচারে নেমে পড়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও বিভিন্ন রাজ্যে সফরে যাচ্ছেন। তবে দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, লোকসভা ভোটের জন্য সনিয়া-রাহুল আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রচারে নামবেন নভেম্বরের পর। তার আগে কেবল মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগড়, রাজস্থানের বিধানসভা ভোটে কয়েকটি জনসভা করবেন মা-ছেলে। |