গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তাল মুজফ্ফরনগর, নিহত ২৬
দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত উত্তরপ্রদেশের মুজফ্ফরনগর। শনি ও রবিবার মিলিয়ে ইতিমধ্যেই সেখানে মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। শুধু রবিবারই প্রাণ হারিয়েছেন ১০ জন। আহত প্রায় শতাধিক। কোতোয়ালি, নই মন্ডির মতো এলাকায় আজ দিনভর জারি রয়েছে কার্ফু। পাল্লা দিয়ে চলছে সেনা টহলও। যদিও রাজ্য প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।
প্রত্যাশিত ভাবেই ঘটনায় লেগেছে রাজনীতির রংও। কংগ্রেস থেকে বিরোধী বহুজন সমাজ পার্টি, মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদবের সমালোচনায় সরব সব দলই। এমনকী রাজ্যের এই সঙ্কটে ছেলের পাশে দাঁড়াননি মুলায়ম সিংহ যাদবও। এ ভাবে চললে ২০১৪-এর লোকসভা ভোটের আগে দল বেকায়দায় পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারও।
সংঘর্ষে আহত শিশুদের চিকিৎসা চলছে জেলা হাসপাতালে। ছবি: পিটিআই
সংঘর্ষের সূত্রপাত কিছু দিন আগে। ২৭ অগস্ট কাওয়াল গ্রামে মৃত্যু হয় তিন জনের। তার প্রতিবাদে গত কাল মহাপঞ্চায়েতের ডাক দিয়েছিল এক গোষ্ঠী। তাতে যোগ দিতে যখন বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক জড়ো হচ্ছিল, তখনই একের পর এক সংঘর্ষের খবর আসতে থাকে। গণ্ডগোলের মাঝে পড়ে কাল মৃত্যু হয় টিভি চ্যানেলের এক সাংবাদিকেরও। অশান্তির আগুন নেভেনি আজও।
পুলিশের দাবি, ক’দিন আগে ওই তিন ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে একটি ভুয়ো ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল ইন্টারনেটে। ইন্টারনেটে তা দেখানো বন্ধ করা গেলেও সেই ঘটনার সিডি ছেপে বেরিয়ে গিয়েছে বাজারে। গ্রামের বাড়ি বাড়ি ছড়িয়েও পড়েছে তা।
রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত ডিজি অরুণ কুমার জানিয়েছেন, শহরের থেকেও ছবিটা বেশি খারাপ গ্রামের দিকে। বহু গ্রামে আজ সারাদিন ধরে গোলাগুলির আওয়াজ শোনা গিয়েছে। ভয়ে ঘরছাড়া প্রচুর মানুষ। বন্দুক নিয়ে তাণ্ডব চালিয়ে আখের খেতে গা ঢাকা দিচ্ছে হামলাকারীরা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রামগুলোয় এ ভাবে দুষ্কৃতীদের মোকাবিলা করতে রীতিমতো বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকে, জানিয়েছেন এক পুলিশ অফিসার।
সব চেয়ে শোচনীয় অবস্থা খুৎবা গ্রামের। সেখানে সাত জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। দোকানপাট ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। মনসুরপুরে গুলিবিদ্ধ এক মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মৃত্যু হয় তাঁর। তবে প্রশাসনের দাবি, শক্ত হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছে সিআরপি, র্যাফ ও পুলিশ। হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ৫২ জনকে। টহল দেওয়ার সময়ে এক বার সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করেও গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। পাল্টা জবাব দেয় সেনাও।
বিকেল বেলা লখনউয়ে জেলার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। পরে স্বরাষ্ট্রসচিব কমল সাক্সেনা এক সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজধানীতে। সিসাউলি, শাহপুর, ফুগনার মতো এলাকায় কত কোম্পানি আধাসেনা ও সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, তা সবিস্তার জানান তিনি। তাঁর কথায়, রাজ্যের হিসেব মতো সংঘর্ষে ২৬ জন নয়, এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৯ জনের। তবে এর মধ্যে পুলিশের গুলিতে নিহত হননি কেউ।
হিংসা যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তাই মুজফ্ফরনগরে সমস্ত স্কুল, কলেজ আগামী তিন দিনের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। আগামী কাল প্রাথমিক স্কুল থেকে কলেজ সবই বন্ধ থাকবে মেরঠেও। লাগোয়া উত্তরাখণ্ডেও জারি করা হয়েছে কড়া সতর্কতা।
প্রশাসক অখিলেশের ব্যর্থতা নিয়ে যখন বিরোধী দলগুলি সরব, তার মধ্যেই প্রশাসনের অস্বস্তি আরও বাড়িয়েছেন সমাজবাদী পার্টি প্রধান মুলায়ম সিংহ যাদব স্বয়ং। সরকারি কর্তাদের বাড়িতে ডেকে পাঠিয়ে গোটা ঘটনায় নিজের অসন্তোষ জানিয়েছেন তিনি। ছেলে অখিলেশকেও সতর্ক করেছেন, গোষ্ঠী সংঘর্ষ এ ভাবে চলতে থাকলে প্রশাসক হিসাবে তাঁর ভাবমূর্তি কিন্তু মাটিতে মিশে যাবে।
সমাজবাদী পার্টি কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের শরিক হলেও এই পরিস্থিতে অখিলেশ সরকারের সমালোচনা করতে ছাড়েনি কংগ্রেসও। কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ আজ বলেছেন, গত এক বছরে উত্তরপ্রদেশে ২২টি গোষ্ঠী সংঘর্ষ হয়েছে। বহুজন সমাজ পার্টির আমলেও পরিস্থিতি এতটা খারাপ ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব রাজ্য শাসন ঠিকমতো করতে পারছেন না। এই অবস্থায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারির দাবি তুলেছে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি। মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব অবশ্য এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, যাদের ধরা হয়েছে, অভিযোগ প্রমাণিত হলে রেহাই মিলবে না তাদের কারওই। পাশাপাশি নিহত সাংবাদিকের পরিবারকে এককালীন ১৫ লক্ষ টাকা ও বাকি নিহতদের পরিবারপিছু ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলেও রবিবার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.