|
|
|
|
প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করুন মোদীকে, জেটলিদের চাপে সঙ্ঘ
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
নরেন্দ্র মোদীকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে অবিলম্বে ঘোষণা করার জন্য আগামিকাল সমন্বয় বৈঠকের শেষ দিনে সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতের উপর প্রবল চাপ দিতে চলেছেন অরুণ জেটলি-সহ বিজেপির বেশ কিছু নেতা।
আরএসএস, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বিজেপির শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আজ থেকে দিল্লিতে শুরু হয়েছে সমন্বয় বৈঠক। কাল বৈঠকের শেষ দিনে উপস্থিত থাকার কথা সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবতের। বিজেপি সূত্রের খবর, কালকের বৈঠকে মোদীর নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করার জন্য ভাগবতের উপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিতে চলেছেন মোদী শিবিরের অন্যতম সেনাপতি অরুণ জেটলি। ইতিমধ্যেই রাজনাথ সিংহের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁকে পাশে পেতে সক্ষম হয়েছেন জেটলি। তিনিও মোদীর সমর্থনে কাল মুখ খুলতে পারেন বলে মনে করছে বিজেপির একাংশ। ওই অংশের ব্যাখ্যা, বর্তমান পরিস্থিতির ফায়দা নিয়ে সঙ্ঘের সাহায্যে রাজনাথ নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরতে চাইছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সেই অভিযোগ খণ্ডন করার দায় এসে বর্তেছে রাজনাথেরই ওপর। তাই রাজনাথ অনিচ্ছা সত্ত্বেও মোদীর পক্ষে মুখ খুলতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
তা ছাড়া আজ বৈঠকের প্রথম দিনেই উপস্থিত নেতাদের পক্ষ থেকে অবিলম্বে মোদীকে দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করার দাবি উঠেছে। ওই অংশের বক্তব্য, অতীতের মতোই এ বারও বিজেপির উচিত কোনও এক জন নেতাকে সামনে রেখে নির্বাচনে যাওয়া। সমর্থকদের দাবি, একান্তই যদি কালকের বৈঠকে মোদীর নাম ঘোষণা না করা হয়, তা হলে হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশ দিন ভাগবত। মোদী প্রশ্নে যে পিছিয়ে যাওয়ার রাস্তা নেই, ক্রমশ তা বুঝতে পারছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব।
যদিও এখন পর্যন্ত মোদী-বিরোধিতায় অনড় লালকৃষ্ণ আডবাণী। ইতিমধ্যেই মোহন ভাগবতকে মোদী প্রশ্নে নিজের আপত্তি জানিয়ে রেখেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, এ বিষয়ে সংসদীয় বোর্ড যা সিদ্ধান্ত তা চূড়ান্ত। আডবাণীর যুক্তি, পাঁচ রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে মোদীর নাম ঘোষণা করলে লাভের থেকে লোকসান বেশি। ওই রাজ্যগুলিতে খারাপ ফল করলে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে মোদীর নেতৃত্বেও। তা ছাড়া মোদীর নামে এনডিএ আরও ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপরন্তু গত দশ বছরে মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতি-র মতো নানা বিষয়ে জনগণের মধ্যে যে সরকার-বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে, তার সুফল পাওয়ার পরিবর্তে মোদী প্রশ্নে মেরুকরণের ধাক্কা সামলাতে হবে দলকে। তাঁর ওই আশঙ্কার কথা শুধু সঙ্ঘপ্রধানই নয়, খোদ মোদীকেও জানিয়ে রেখেছেন আডবাণী। ফলে অরুণ জেটলিরা যখন পিতৃপক্ষ শুরু হওয়ার আগেই মোদীর নাম ঘোষণা করার জন্য চাপ বাড়াচ্ছেন, আডবাণীও সক্রিয় রয়েছেন তা আটকাতে। দু’পক্ষের চাপের মুখে সঙ্ঘপ্রধান ঠিক কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই এখন দেখার।
মোদীর পক্ষে থাকা জেটলি বা সঙ্ঘ পরিবারের একাংশের বক্তব্য, মোদীর নাম ঘোষণা করা ছাড়া রাস্তা নেই। ২ থেকে দলের সাংসদ সংখ্যা যে সময়ে ২০০-এ পৌঁছেছিল, তা সম্ভব হয়েছিল বিজেপির হিন্দুত্ব নীতির জন্য। মোদীপন্থীদের বক্তব্য, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে বিজেপির হিন্দুত্ব নীতি মানে রাম মন্দির নয়। তা হল জাতীয় নিরাপত্তাকে সুনিশ্চিত করা। যা একমাত্র করতে পারেন মোদীই। বিরোধী অংশের বক্তব্য, মোদীর নাম যদি একান্তই ঘোষণা করতে হয়, তা হলে তা পাঁচ রাজ্যের ভোটের পরে হোক। তা ছাড়া ওই অংশের যুক্তি হল,আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা না করা হলেও ইতিমধ্যেই গোটা দেশ জেনে গিয়েছে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী মোদীই। তাই এখন তা ঘোষণা করে দিয়ে কংগ্রেসকে সুবিধা করে দেওয়া অর্থহীন। এর বিপক্ষে জেটলি-বেঙ্কাইয়া নাইডুরা যুক্তি দিচ্ছেন, মোদীর নাম ঘোষণা করা হলে দেশের কর্মী সমর্থকেরা উজ্জীবিত হয়ে উঠবেন। দলের আসন বাড়বে। মোদী শিবিরের ওই যুক্তিও একেবারে উড়িয়ে দিতে পারছে না সঙ্ঘ নেতৃত্ব।
মোদীর নাম ঘোষণার দায় কে নেবে তা নিয়েও পারস্পরিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপির মধ্যে। এক দিকে সঙ্ঘ পরিবারের বক্তব্য, তারা বিজেপিকে তাদের পরামর্শ দিতেই পারেন। কিন্তু মোদীর নাম ঘোষণা করা হবে কী না, সেই সিদ্ধান্ত একান্তই বিজেপির। কারণ সে ক্ষেত্রে ফল খারাপ হলে তার দায় নিতে হবে রাজনাথ তথা দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেই। অন্য দিকে রাজনাথ শিবিরের বক্তব্য, মোদীর নাম ঘোষণা করার জন্য স্পষ্ট নির্দেশ দিক সঙ্ঘ। সে ক্ষেত্রে মোদী প্রশ্নে শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে যে কোন্দল রয়েছে, তা এড়ানো সম্ভব হবে।
মোদী সমর্থকদের দাবি, আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর নরেন্দ্রভাইয়ের জন্মদিন। তার আগে তাঁর নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে জন্মদিনের উপহার দেওয়া হোক। ভাগবত এখন এই দাবি মেনে নেবেন, না আডবাণীর যুক্তিতেই সিলমোহর বসাবেন, সেটাই এখন দেখার। |
|
|
|
|
|