বোর্ড আইনের সামান্য একটা ফাঁক। আর সেটাকে ব্যবহার করেই শুক্রবার নয়াদিল্লির শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসে পড়লেন নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন! বৈঠক থেকে বেরিয়ে বলেও দিলেন, “আমি মিটিংটা চেয়ার করেছি। আমি এখনও বোর্ড প্রেসিডেন্ট। মিটিং চেয়ার করার অধিকার আমার আছে।”
এ দিন দুপুর-দুপুর শান্তাকুমারন শ্রীসন্তের আজীবন নির্বাসনের শাস্তি নিয়ে যখন দেশের ক্রিকেটমহলে হইচই পড়ে গিয়েছে, তখনও কেউ কেউ টের পাননি যে শ্রীসন্তদের শাস্তির পরোয়ানায় বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে সই করেছেন শ্রীনিবাসন। তাঁরই উপস্থিতিতে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি শ্রীসন্তদের নিয়ে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছল। পরের দিকে ব্যাপারটা জানাজানি হতে বলাবলি শুরু হয়ে যায় যে, শ্রীনি কী ভাবে প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসে পড়লেন? এ তো পুরোপুরি আদালত অবমাননার ব্যাপার! বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিব আদিত্য বর্মা থেকে শুরু করে শ্রীনির বিরোধী গোষ্ঠী সবাই মোটামুটি ধরে নিতে শুরু করেন যে, এর ফলে আরও বেশি বিপদে পড়তে চলেছেন শ্রীনি। আদিত্য এ-ও জানিয়ে দন, আগামী ২৫ তারিখ তাঁর আইনজীবী হরিশ সালভে ফিরছেন। তার আগে অন্য আইনজীবীদের সঙ্গেও এটা নিয়ে তিনি বসবেন।
কিন্তু ঘটনা হচ্ছে, বোর্ড-আইনের এমন এক ফাঁক ব্যবহার করেছেন শ্রীনি, যা কেউ আন্দাজ করতে পারেনি। বোর্ডের শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠক বসে খুব কম। সেটা কোনও ভাবেই বোর্ডের দৈনন্দিন কাজকর্মের মধ্যে পড়ে না। |
শ্রীনি-গোষ্ঠী থেকে বলা হচ্ছে, শ্রীনিবাসন তো বোর্ডের দৈনন্দিন কাজকর্ম থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। যেটা এখন দেখছেন জগমোহন ডালমিয়া। এবং স্পট ফিক্সিংয়ে অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির রায় ঘোষণা রোজ রোজ ঘটবে না। তাই এই বৈঠকে যোগ দেওয়ায় আদালত অবমাননার কোপে পড়বেন না শ্রীনি। আরও বলা হচ্ছে, অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়ার যেহেতু বোর্ডের কাগজপত্রে সইসাবুদ করতে পারবেন না, তাই শ্রীনির বৈঠকে থাকা খুবই জরুরি ছিল। নইলে শ্রীসন্তদের বিরুদ্ধে বোর্ড কী ভাবে তার রায় ঘোষণা করত? সেটা শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি ঘোষণা করে দিতে পারে না।
শ্রীনির বৈঠকে থাকা নিয়ে রাতে ডালমিয়া কিছু বলতে চাননি। আইনি জটিলতার ব্যাখ্যা দিয়ে। তবে কেউ কেউ মনে করছেন শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠকে যোগ দেওয়ায় শ্রীনির এ দিন অসুবিধে হল না ঠিকই, কিন্তু শনিবার এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের বৈঠকে ভারতীয় বোর্ডের প্রতিনিধিত্ব করলে ভালই অসুবিধে হবে। তখন আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে হতে পারে শ্রীনিকে।
শুক্রবার শ্রীনির বৈঠকে যোগ দেওয়াকে ঘিরে একপ্রস্ত নাটকও হয়ে গেল। শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির বৈঠক নয়াদিল্লির যে হোটেলে ছিল, সেখানে হাজির ছিলেন বিহার সংস্থার সচিব আদিত্য বর্মাও। শোনা যাচ্ছে, শ্রীনির মিটিং চেয়ার করা নিয়ে তিনি প্রথমে প্রবল আপত্তি তুললেও তা ধোপে টেকেনি। বরং তাঁকেই হোটেল ছেড়ে মিটিংয়ের মাঝপথে বেরিয়ে যেতে হয়। বলা হচ্ছে, আদিত্য বুঝে গিয়েছিলেন যে অন্তত এই বৈঠকে শ্রীনির চেয়ার করা নিয়ে প্রতিবাদ করে লাভ হবে না। রাতে দিল্লি থেকে ফিরে ফোনে আদিত্য পাল্টা বললেন, “কে বলল আমি পালিয়েছি? আমি দেখতে গিয়েছিলাম শ্রীনি সত্যি সত্যিই বৈঠকে ঢুকছে কি না। মিটিং চেয়ার করছে কি না। বৈঠকের মিনিট্স হাতে পাব না জানি। কিন্তু মিডিয়ায় যা বেরোবে, সেগুলো নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে তাড়াতাড়ি যাব। যে লোকটা হলফনামা দিয়ে প্রেসিডেন্টের চেয়ার থেকে সরে দাঁড়িয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত রায় দেওয়ার আগে সে কোন অধিকারে আবার সেই চেয়ারে বসল?”
|