বোর্ডের রায়ে কেরিয়ার শেষ কেরল এক্সপ্রেসের
আজীবন নির্বাসনের সঙ্গে উচিত ছিল
শ্রীসন্তের বিশ্বকাপ পদকও কেড়ে নেওয়া
শান্তাকুমারন শ্রীসন্তের আজীবন নির্বাসনের খবরটা বোর্ড ঘোষণা করার পরপরই প্রচুর ফোন পাচ্ছিলাম। কেউ বলছিলেন, এমন কেলেঙ্কারির পরিবেশে একটা কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখরক্ষা করল বোর্ড। কাউকে আবার বলতে শুনলাম, এর পর থেকে বুকিদের ফোন ধরার আগে দু’বার ভাববে ক্রিকেটাররা। চট করে কেউ এ সব নোংরামি করতে সাহস পাবে না। ধরা পড়লে শ্রীসন্তদের ‘ওষুধ’ নিজেদের কপালে জুটতে কতক্ষণ?
তবে আমার ব্যক্তিগত মত হল, যতটা ভাবা হচ্ছে, ততটাও কিছু হবে না! ক্রিকেটমহলে শ্রীসন্তদের শাস্তি নিয়ে যা হইচই দেখছি, মনে হয় না এতটা দরকার আছে বলে।
আমি কারও ভাবনা বা ব্যক্তিগত মতামতকে আঘাত করতে চাই না। কিন্তু একটা প্রশ্ন তুলতে চাই। আজ থেকে পনেরো বছর আগে, ১৯৯৯-এও তো এক ভারত অধিনায়কের আজীবন নির্বাসন হয়েছিল। আর এক জনকে পাঁচ বছরের নির্বাসনে পাঠানো হয়েছিল। তাতে লাভ হয়েছে কিছু? বন্ধ হয়েছে গড়াপেটা? সে দিনের সেই অভিযুক্ত অধিনায়ক আজ দেশের সাংসদ। অন্য জন চুটিয়ে টিভি কমেন্ট্রি করার পর দিব্যি টুর্নামেন্ট খেলতে নেমে পড়েছে!
’৯৯-এ ওরা সবাই যখন ম্যাচ ফিক্সিংয়ে ধরা পড়ল, সেটা আমার প্রথম রঞ্জি মরসুম। মনে আছে খবরটা শুনে চমকে গিয়েছিলাম। ওদের কেউ ছিল আমার ভীষণ প্রিয় ব্যাটসম্যান। কেউ পছন্দের অধিনায়ক। তখন মাঠে সবাই আলোচনা করতাম, এত বড় বড় ক্রিকেটারের এমন কঠোর শাস্তির পর ভবিষ্যতে আর কোনও ভারতীয় গড়াপেটা করার সাহস দেখাবে না। অবস্থা দেখুন, কয়েক জন ভারতীয়ই আবার ফিক্সিং করার সাহসটা দেখাল! অর্থাৎ, সে দিনের শাস্তির কোনও প্রভাবই পড়েনি পরবর্তী প্রজন্মের ক্রিকেটারদের উপর। যেটা খুব অবাক করা নয় বোধহয়। এক জন অল্পবয়সী ক্রিকেটার যদি দেখে শাস্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এক মহাতারকা ক্রিকেটার অনায়াসে জনগণের মুখ হয়ে যাচ্ছে, সাংসদ হয়ে যাচ্ছে, তা হলে সে-ও তো ভাববে যে, যদি আমি অন্যায় করি কয়েক দিন লোকে কথা বলবে। তার পর ভুলে যাবে। আমি আমার মতো জীবনকে ঠিক গুছিয়ে নিতে পারব।
“সব সময় চেষ্টা করেছি যাতে ক্রিকেট পরিচ্ছন্ন থাকে। তাই আজকের প্রক্রিয়াকেও
তারই অংশ হিসেবে ধরতে হবে। আমি তো বলব ক্রিকেট জিতল। দরকারও ছিল।
আশা করব, এর থেকে ক্রিকেটাররা কিছু শিখবে।”

“নিউজ চ্যানেলগুলো দেখছি...আমার আজীবন নির্বাসন? খুব অবাক লাগছে!”
, “আমি কামব্যাক করবই। তার জন্য ট্রেনিংও শুরু করে দিয়েছি।”

বোর্ডের সিদ্ধান্তে আমি তাই কিছুটা হতাশই। সিদ্ধার্থ ত্রিবেদীকে বুকিদের ফোনের কথা গোপন রাখার জন্য এক বছরের নির্বাসনটাই যা ভাল। নতুন। পরে বুকিদের ফোন পেলেও ক্রিকেটাররা লুকোতে সাহস পাবে না। কিন্তু বাকি যা হল, খুবই গতানুগতিক। নতুনত্ব বলতে কী বোঝাতে চাইছি? দেখুন, যে সব ক্রিকেটার ধরা পড়েছিল, প্রথম থেকেই তাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে রাগ শ্রীসন্তের উপর। কী পায়নি ও? একটা টি-টোয়েন্টি, একটা ওয়ান ডে— দু’টো বিশ্বকাপ খেলেছে। কুড়ি-পঁচিশটা টেস্ট খেলেছে। আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরেও তো শুনছিলাম ওকে নিয়ে যাওয়ার কথা হচ্ছিল। টাকা, খ্যাতি, গ্ল্যামার— সব পেয়েছে। তবু গড়াপেটার মতো জঘন্য জিনিসে জড়িয়ে পড়ার আগে এতটুকু ভাবল না?
বোর্ডের উচিত ছিল আজীবন নির্বাসনের সঙ্গে শ্রীসন্তের দু’টো বিশ্বকাপ পদকও কেড়ে নেওয়া। আইওসি যদি ডোপিংয়ে অভিযুক্ত লান্স আর্মস্ট্রংয়ের সমস্ত পদক কেড়ে নিতে পারে, তা হলে শ্রীসন্তের বিশ্বকাপ পদক কেড়ে নিতে বোর্ডের অসুবিধে কোথায়? শুধু তাই নয়, বিশ্বকাপে যে পুরস্কার অর্থ পেয়েছে শ্রীসন্ত, সেটাও ফেরত চাওয়া উচিত ছিল। দরকার ছিল, বিশ্বকাপের যাবতীয় ছবি থেকে শ্রীসন্তকে মুছে ফেলা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওর যাবতীয় রেকর্ড উধাও করে দেওয়া। দেখতাম, তখন ও বাকি জীবন কী নিয়ে কথা বলে? কী করে টাকা উপার্জন করে? অঙ্কিতদের বয়স কম, তাই ওদের দেখে করুণা হলেও হতে পারে। কিন্তু সাত-আট বছর দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলার পর এ জিনিস যে করতে পারে, তার প্রতি কোনও দয়ামায়া দেখানোই উচিত নয়।
তাই আজকের শাস্তি কতটা ভাল হল না ভেবে, ভাবা উচিত কতটা সুদূরপ্রসারী হল? ভাবা উচিত, আজীবন নির্বাসনের শাস্তি সত্যিই এক জন ক্রিকেটারকে গড়াপেটা থেকে দূরে রাখার জন্য যথেষ্ট তো?
কেন জানি না মনে হচ্ছে, আজ থেকে বারো-পনেরো বছর পরে আরও একটা শান্তাকুমারন শ্রীসন্তকে দেখলে, আমি অন্তত আশ্চর্য হব না!

পুরনো খবর:






First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.