ভারতীয় ক্রিকেটের ভাগ্যাকাশে ম্যাচ গড়াপেটার রাহুগ্রাস ফিরে এল ১৩ বছর পর।
এ বার কলঙ্কিত আইপিএল। একাধিক ম্যাচে স্পট ফিক্সিংয়ের দায়ে টেস্ট ক্রিকেটার শান্তাকুমারন শ্রীসন্ত-সহ রাজস্থান রয়্যালসের তিন বোলার আপাতত পাঁচ দিনের জন্য দিল্লি পুলিশের হেফাজতে। তিন জনকেই সাসপেন্ড করেছে বিসিসিআই। ধরা পড়েছে ১১ বুকিও।
মুম্বইয়ে গত কাল গভীর রাতে রাজস্থানের টিম হোটেলে হানা দিয়ে দুই স্পিনার অজিত চান্ডিলা এবং অঙ্কিত চহ্বাণকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ। শ্রীসন্তকে ধরা হয় মুম্বইয়েই তাঁর এক বন্ধুর বাড়ি থেকে। অভিযুক্ত ক্রিকেটারদের এ দিনই দিল্লি আনা হয়। দিল্লির পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার নাম না করেও বুঝিয়ে দিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে ডি-কোম্পানির যোগ থাকার সম্ভাবনা যথেষ্ট। সেই সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, আরও কয়েক জন ক্রিকেটার ও বুকিকেও গ্রেফতার করা হতে পারে।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, মার্চ নাগাদ দুবাইয়ের একটি ফোন কল ট্যাপ করে আইপিএল গড়াপেটার ছক প্রথম জানতে পারে পুলিশ। ফোনটি দুবাই থেকেই করা হয়েছিল, না দুবাইয়ের নম্বর দিয়ে অন্য কোনও দেশ থেকে, তা অবশ্য নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। তবে এর পর থেকেই সন্দেহভাজন ক্রিকেটার ও বুকিদের উপর নজর রাখা শুরু হয়। |
ফোনে আড়ি পাতাও হচ্ছিল। কয়েকশো ঘণ্টার কথোপকথন রেকর্ড করে ক্রিকেটার ও বুকিদের একাংশকে চিহ্নিত করে ফেলে পুলিশ। এমনকী শ্রীসন্তদের ধরতে পুলিশ অফিসাররা কাল ওয়াংখেড়েতে খেলাও দেখেন।
আজ দুপুরে লোধি রোডের ইন্ডিয়া হ্যাবিট্যাট সেন্টারে সাংবাদিক সম্মেলন করেন দিল্লি পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। সবিস্তার জানানো হয়, বুকিদের সঙ্গে ক্রিকেটারদের টেলিফোনে কী কথা হয়েছিল। কথোপকথনের রেকর্ডেই স্পষ্ট, শ্রীসন্তদের ‘ডিউটি’ ছিল নির্দিষ্ট ওভারে নির্দিষ্ট রান দেওয়া (সেটা ১৩ বা তার বেশি হতে পারে)। ফোনে কথা বলার পাশাপাশি ব্ল্যাকবেরি ও হোয়াটসঅ্যাপ মেসেঞ্জারেও বুকিদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল শ্রীসন্থদের। ঠিক হয়েছিল, কথামতো কাজ শুরুর আগে তাঁরা মাঠ থেকে বুকিদের নির্দিষ্ট সঙ্কেত দেবেন। সূত্র ধরিয়ে দিচ্ছিলেন পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার। একই টেবিলে ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকা (একেবারেই পুলিশসুলভ চেহারাবর্জিত) বিশেষ সেলের ডেপুটি কমিশনার সঞ্জীব যাদব ম্যাচের ক্লিপিংস ধরে ধরে ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন। ল্যাপটপে চালানো ভিডিও দেখানো হচ্ছিল প্রোজেক্টরে। সঞ্জীব জানালেন, গত কাল ওয়াংখেড়ের ম্যাচে বুকিদের তরফে অঙ্কিতকে বলা হয়েছিল রিস্ট ব্যান্ড ঘুরিয়ে সঙ্কেত দিতে।
|
একই ভাবে ৯ তারিখ কিংস ইলেভেন ম্যাচে শ্রীসন্তের সঙ্গে কথা হয়েছিল যে, ওভার শুরুর আগে তিনি কোমরে তোয়ালে গুঁজে নেবেন। আর ৫ মে পুণের সঙ্গে ম্যাচে ঠিক হয়েছিল, অজিত জার্সি তুলে আবার নামিয়ে নেবেন। অর্থাৎ বার্তা পাঠাবেন যে, তাঁরা তৈরি, বেটিং শুরু করা হোক। মজার ব্যাপার, অজিত কিন্তু সে দিন বুকিদের সঙ্কেত না পাঠিয়েই ওভার শুরু করে দেন। ফলে বুকিরা তৈরি হতে পারেনি। তাই ম্যাচ শেষের পর অজিতকে প্রাপ্য টাকাও দিতে চায়নি তারা। ধৃত অন্যতম বুকি জিজু জর্নাদন কিন্তু এক প্রাক্তন ক্রিকেটার। দিল্লির সিপি জানান, এর্নাকুলাম ক্লাবে শ্রীসন্তের সঙ্গেই খেলত জিজু। জিজু ছাড়াও মুম্বইয়ের বুকি চন্দ্রেশ পটেল, আমদাবাদের অমিত কুমার, পঞ্জাবের দীপক কুমার ও মানান, দিল্লির রাকেশ-সহ মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশের বিভিন্ন দল। তাদের ও তিন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০ (প্রতারণা) ও ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এর পাশাপাশি অভিযোগ আনা হচ্ছে ‘মকোকা’ (মহারাষ্ট্র কন্ট্রোল অফ অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যাক্ট) আইনেও। |
ভিড়ে ঠাসা ওই সাংবাদিক বৈঠকেই এক অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক পুলিশ কমিশনারকে জিজ্ঞাসা করেন, রাজস্থান রয়্যালসের ব্যাটসম্যান শেন ওয়াটসনের হোটেলের ঘর থেকে প্রচুর টাকা উদ্ধার হয়েছে কি না। জবাবে নীরজ কুমার জানান, এমন কোনও খবর তাঁদের কাছে নেই। কোনও বিদেশি ক্রিকেটারের বিরুদ্ধেই আপাতত তাঁরা তদন্ত করছেন না। তবে অন্ধকার জগতের সঙ্গে আইপিএলের স্পট ফিক্সিংয়ের সম্পর্কের প্রমাণ তাঁদের হাতে রয়েছে। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, দাউদ ইব্রাহিম বা টাইগার মেমনরা এতে জড়িত কি না। নীরজ কুমার বলেন, “কারও নাম এখন করা যাবে না। তবে এটুকু বলতেই পারি, আইপিএলের স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত বুকিদের টিকি বাঁধা রয়েছে বিদেশে।”
আজ দিল্লি বিমানবন্দর থেকে ক্রিকেটারদের প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় লোধি কলোনির পুলিশ কোয়ার্টারে। শারীরিক পরীক্ষার পর তাঁদের এক দফা জেরা করা হয়। দুপুরে চরম উত্তেজনার মধ্যে তাঁদের তোলা হয় সাকেত কোর্টে। কিন্তু কোর্টের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় পুলিশকে ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়ি দৌড়তে হয়। সেখান থেকেই আসে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ। |