যে সাহস এখনও দেখাতে পারেনি শ্রীনিবাসনের বোর্ড, আজ সেটাই করে দেখাল রাজস্থান রয়্যালস ফ্র্যাঞ্চাইজি!
লোধি রোডে দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেলে এসে রাহুল দ্রাবিড়ের দলের মালিক আর মালকিন রাজ কুন্দ্রা এবং শিল্পা শেট্টি স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িত তাঁদের তিন ক্রিকেটার শান্তাকুমারন শ্রীসন্ত, অজিত চান্ডিলা ও অঙ্কিত চহ্বাণের নামে টিমের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের অভিযোগে এফআইআর করে যান। দিল্লিতে আসার আগেই শিল্পারা এ দিন জয়পুরে দলের অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড়ের
সঙ্গে পরামর্শ করে ওই তিন ক্রিকেটারের সঙ্গে রাজস্থান রয়্যালসের চুক্তি বাতিল করেন।
দেশের এক জন টেস্ট প্লেয়ার-সহ তিন-তিন জন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে এফআইআর করার পর বলিউড নায়িকা এই প্রতিবেদককে বললেন, “দিল্লি পুলিশ শ্রীসন্তদের কুকীর্তি ফাঁস করার পরমুহূর্তেই আমরা ওই তিন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে এফআইআর করব ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে চিন্তা করলাম, বোর্ডের সঙ্গে কথা না
বলে এই পদক্ষেপ নেওয়াটা ঠিক
হবে কি না। তাই এফআইআর করতে পাঁচ দিন কেটে গেল।” উত্তেজিত শিল্পা আরও বললেন, “ওই তিন ক্রিকেটার আদালতে জামিনের আবেদন করলেও আমাদের আইনজীবী তার বিরোধিতা করবে।”
এই কড়া সিদ্ধান্তটাও কি আপনারা বোর্ডের সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়েছেন? শিল্পার জবাব, “ঠিক তা নয়। তবে গোটা ক্রিকেট বিশ্বে আমাদের দলের বদনাম হওয়ার জন্য এমনিতেই ওই ক্রিকেটারদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ করতাম। তার পর বোর্ড কর্তারাও একই পরামর্শ দিলেন।” আর অভিযুক্ত তিন ক্রিকেটার দোষী প্রমাণিত হলে? শিল্পার মুখ এ বার রাগে লাল। বললেন, “ওদের চিরতরে নির্বাসন দিতে পারলে খুব ভাল হতো। তবে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে তিন জনেরই চুক্তি বাতিল করেছি। এর পর দেখি পুলিশ আর ক্রিকেট বোর্ড কী করে।” স্পট-ফিক্সিং নিয়ে এ দিন সুপ্রিম কোর্টেও একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে।
এ দিকে শ্রীসন্তের অবস্থা ভাঙবেন তবু মচকাবেন না গোছের। শ্রীসন্ত এ দিন তাঁর আইনজীবীর ‘পারফরম্যান্স’-এ অখুশি হয়ে তাঁকে পাল্টেই ফেললেন! অনেকেই মনে করছেন, শিল্পারা যে দিল্লি এসে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করলেন, কিছুটা হলেও সে কারণে এই পদক্ষেপ শ্রীসন্তের। কেরলের এই ক্রিকেটার অবশ্য ক্রমেই আরও জালে জড়িয়ে পড়ছেন। গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন রঞ্জি ক্রিকেটার বাবু রাও-ও এ দিন পুলিশি জেরার মুখে শ্রীসন্তকেই দায়ী করেছেন তাঁকে স্পট ফিক্সিং কাণ্ডে জড়ানোর জন্য। পুলিশের সামনে বাবু রাও আরও কবুল করেছেন, তাঁর ও মনীশ গুড্ডেওয়ারের চান্ডিলার সঙ্গেও সুসম্পর্ক রয়েছে। যার ফলে তাঁরা মিলেমিশেই স্পট ফিক্সিংয়ের জন্য জুনিয়র ক্রিকেটারদের টোপ দেওয়ার কাজ করতেন।
মুম্বই ও দিল্লি পুলিশের চিরুনি তল্লাশিতে শ্রীসন্ত ও চান্ডিলার নামই ঘুরে-ফিরে আসছে। পুলিশের ধারণা, এই দু’জনই সম্ভবত স্পট ফিক্সিংয়ের ‘কিং পিন’ ক্রিকেটার। দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেলের তদন্তকারীরা এ দিন শ্রীসন্তের ‘ভয়েস টেস্টিং’-এর জন্য তাঁকে সিএফএলএল দফতরেও নিয়ে যান। মুম্বই পুলিশ আবার শ্রীসন্তের ল্যাপটপ থেকে বারো জন মহিলা এসকর্টের ছবি দিল্লিকে পাঠিয়েছে আজ। এঁদের মধ্যে বলিউডের কিছু স্বল্পনামী নায়িকাও আছেন বলে দিল্লি পুলিশের খবর। তাঁদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছবি দেখিয়েই বুকি জিজু ক্রিকেটারদের ব্ল্যাক মেল করে স্পট ফিক্সিংয়ে জড়াতেন কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যে সব ‘কাস্টিং ডিরেক্টর’ এই মহিলাদের শ্রীসন্তদের কাছে পৌঁছে দিতেন, তাঁদেরও ধরেছে দিল্লি পুলিশ। এমন এক জন মহিলা ও এক জন ‘কাস্টিং ডিরেক্টর’কে এ দিনই শ্রীসন্ত-চান্ডিলাদের সামনে বসিয়ে জেরা করেছে পুলিশ।
এ দিনই চান্ডিলাকে সঙ্গে নিয়ে ফরিদাবাদে তাঁর পিসির বাড়িতে যায় পুলিশ। সেখানে চান্ডিলার একটি ক্রিকেট কিট থেকে মেলে নগদ ২০ লক্ষ টাকা। উদ্ধার হয় তিনটে মোবাইল, একটি ল্যাপটপও। দিল্লি পুলিশ সঞ্জয় দুবে নামের পূর্ব দিল্লির এক বুকিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পেরেছে, আইপিএল সিক্সে মোট আঠারোটি ম্যাচ ‘ফিক্স’ করিয়েছে করাচি ও দুবাইয়ের ডি-কোম্পানি। তাদের মাধ্যম ছিল দিল্লি, মুম্বই, চন্ডিগড়, চেন্নাই, জয়পুর, হায়দরাবাদ কলকাতা বলতে গেলে গোটা ভারতের বুকিরা।
|
স্থগিতাদেশ চেয়ে মামলা
সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
চলতি আইপিএলের উপর স্থগিতাদেশ চেয়ে সোমবার একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হল সুপ্রিম কোর্টে। লখনউ-এর বাসিন্দা সাদর্শ অবস্তী এই মামলা করেছেন। স্পট ফিক্সিং সহ অন্য অনিয়মের তদন্ত করতে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গঠনেরও আর্জি জানান তিনি। |