বাবার স্বপ্নপূরণ
মাকে না জানিয়ে এভারেস্টে উঠল ষোলোর কিশোর
ংবি সাবিত্রী ভাবছেন, পড়াশোনা করতে কয়েক দিনের জন্য বাইরে গিয়েছে তাঁর ছেলে। বছর ষোলোর কিশোর যে এভারেস্টে গিয়েছে তা এখনও টের পাননি ওই মহিলা।
বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছনোর পর স্যাটেলাইট ফোনে বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে নামেইরাকপাম চিংখেইনগাংবা’র।
কিন্তু পাহাড় থেকে যতক্ষণ না ছেলে নীচে নামছে—ততদিন স্ত্রীকে সে কথা জানাতে পারছেন না মণিপুরের পাটসই গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান, দেশের সর্বকনিষ্ঠ এভারেস্ট-বিজয়ীর (দিল্লির অর্জুন বাজপেয়ীর মতো) বাবা নামেইরাকপাম টোম্বা।
তাঁর ‘স্বপ্ন-পূরণ’ করতেই যে বাড়িতে মিথ্যা বলে ছেলে গিয়েছে এভারেস্টে!
সাবিত্রীকে এই অভিযানের বিষয়ে জানাতে ছেলেকে নিষেধ করেছিলেন টোম্বাই। বিপদের আশঙ্কায় যদি স্ত্রী বাধা দিয়ে বসেন। নামেইরাকপাম বাড়ি ফেরার পরই সুসংবাদটা সাবিত্রীকে জানাবেন বলে তিনি ঠিক করেছেন।
ষোলো বছরের সেই এভারেস্ট জয়ী কিশোর। —নিজস্ব চিত্র
এভারেস্টে আরোহনের স্বপ্ন দেখতেন টোম্বাও। আশির দশকে বন্ধুদের সঙ্গে ‘মণিপুর মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং অ্যাসোসিয়েশন’ (এমএমটিএ) প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। নিজের চেষ্টায় হিমাচলে পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণও নিতে যান। দার্জিলিং মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট-এও গিয়েছিলেন।
কিন্তু, দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে এভারেস্ট-বিজয়ের স্বপ্ন দেখা সম্ভব নয়তা টের পান অচিরেই।
টোম্বা জানিয়েছেন, ছেলের জন্মের পরই সেই অধরা স্বপ্নটা ফের দেখতে শুরু করেন। ঠিক করেন, তা এ বার পূর্ণ করবে নামেইরাকপামই।
ছোট থেকেই ছেলেকে পর্বতারোহনের ‘নেশা’ ধরিয়ে দেন তিনি। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং’ থেকে পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণ নেয় ওই কিশোর। প্রাক-এভারেস্ট অভিযানেও যোগ দেয়। প্রতিবারই ছেলের সাফল্য টোম্বাকে আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
এমএমটিএ প্রতিষ্ঠার তিন দশক পর, ওই সংগঠনের উদ্যোগ এবং মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় এভারেস্ট অভিযানের আয়োজন হয়। তখন সবে মাধ্যমিক পাশ করেছে নামেইরাকপাম। দেরি করতে চাননি টোম্বা। বাকিটা ইতিহাস।
পাহাড় নিয়ে স্বামী, ছেলের মাতামাতি পছন্দ করতেন না সাবিত্রী। ছেলে শুধু মন দিয়ে লেখাপড়া করুকএমনই ইচ্ছা ছিল তাঁর।
এ বার যে জীবনের খুব ‘কঠিন’ পরীক্ষা দিতে চলেছে নামেইরাকপাম—সে কথা স্ত্রীকে জানাননি টোম্বা। তাঁর আশঙ্কা, অভিযানের কথা জানলে বাধা দিতে পারেন সাবিত্রী।
স্কুলে একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েই এভারেস্টে রওনা দেয় নামেইরাকপাম। বাবা দুঁদে পঞ্চায়েত প্রধান। ছেলে এভারেস্ট-জয়ী।
কিন্তু তাতে কী? মিথ্যা বলে ছেলেকে এভারেস্টে পাঠিয়েছেন জানতে পারলে সাবিত্রীদেবী যে বাড়ি মাথায় করবেন, সেই ভয়েই আপাতত রাজ্যবাসীর সঙ্গে আনন্দে মাততে পারছেন না টোম্বা।
তিনি বলেন, “এই অভিযানে মৃত্যুর হাতছানি থাকে সব সময়ই। ওঁরা শেষ বেস-ক্যাম্পে পৌঁছনোর পর থেকেই নাওয়া-খাওয়া ভুলেছিলাম। স্ত্রীকেও কিছু বলতেও পারিনি। ছেলে এভারেস্টে পা রাখার পর মনে হল, আমি যেন চাঁদে পৌঁছে গিয়েছি।
শুধু ভয় হয়, সব জানতে পারলে সাবিত্রী আমাকে ক্ষমা করবে কি?”




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.