নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসন কি নির্বাচনের আগে আরও গভীর সঙ্কটে পড়তে চলেছেন?
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে শ্রীনি-মামলা আরও দু’সপ্তাহ পিছিয়ে যাওয়ার পর শুধু উপরোক্ত প্রশ্ন উঠে পড়াই নয়, নির্বাচনে সরে দাঁড়ানো বোর্ড প্রেসিডেন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে রীতিমতো হুলুস্থুল পড়ে গিয়েছে। বোর্ডমহলে সবাই মোটামুটি বলাবলি করছেন, সুপ্রিম কোর্টের নতুন সিদ্ধান্তে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার একটাই রাস্তা খোলা শ্রীনির সামনে। সেটা হচ্ছে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়া। কিন্তু বলা হচ্ছে, তার আগে আরও বৃহত্তর সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে শ্রীনিকে।
আজ, শুক্রবার চেন্নাইয়ে এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) বৈঠক। যা শ্রীনিবাসন নিজেই ডেকেছেন, এবং যেখানে ভারতীয় বোর্ড প্রধান হিসেবে তাঁরই থাকার কথা। প্রশ্ন উঠছে বর্তমান পরিস্থিতিতে বৈঠকে কী ভাবে ঢুকবেন শ্রীনি?
পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার ভিসা পাননি। কিন্তু বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য পাকিস্তানি প্রতিনিধিরা ভিসা পেয়ে গিয়েছেন। পাক বোর্ডের সিওও শুভান আহমেদ আসছেন চেন্নাইয়ের সভায়। যেখানে ভারত ছাড়াও থাকবেন বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা বোর্ডের মহাকর্তারা। পাকিস্তানের ভারত সফর নিয়ে কথাবার্তা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু শ্রীনি কী করবেন? বোর্ডমহলে কেউ কেউ বলছেন, এশীয় কাউন্সিলের বৈঠকে ঢুকতে গেলে আদালত অবমাননার দায়ে পড়তে হতে পারে শ্রীনিবাসনকে। কারণ তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন, যত দিন না তদন্ত কমিশন আইপিএল গড়াপেটা নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছবে, তত দিন তিনি বোর্ড প্রেসিডেন্টের চেয়ার থেকে সরে থাকবেন। বম্বে হাইকোর্টে যেটা হলফনামায় বলা আছে। তদন্ত কমিশন নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছয়নি সুপ্রিম কোর্ট। মনে করা হচ্ছে, এই অবস্থায় শ্রীনি এশীয় কাউন্সিলের বৈঠকে ঢুকলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গড়াতে পারে। শ্রীনির পয়লা নম্বর প্রতিদ্বন্দ্বী এবং বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিব আদিত্য বর্মা ফোনে এ দিন বলেও দিলেন, “এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের বৈঠকে শ্রীনি গেলে সেটা আত্মহত্যা হবে!”
এমনিতেই মনে করা হচ্ছে দিন দিন আরও তীব্র সঙ্কটে পড়ছেন শ্রীনি। সুপ্রিম কোর্ট এ দিন শুনানি পিছিয়ে দেওয়ায় যা নাকি আরও বাড়ল। বোর্ডমহলে বলাবলি চলছে, ব্যাপারটা যে এ দিকে যেতে পারে সেটা আন্দাজ করাই যাচ্ছিল। যে বুধবারের পর বৃহস্পতিবারও শ্রীনি মামলা হয়তো শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে উঠবে না। যেহেতু লিস্টে ছিল দশ নম্বরে। অতএব পিছোবে। আর সেক্ষেত্রে শ্রীনিকে নির্বাচন লড়তে গেলে আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর নির্বাচন করা যাবে না। পিছোতে হবে। বোর্ডের অন্তর্বর্তিকালীন প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া বললেন, “আরও আটচল্লিশ থেকে বাহাত্তর ঘণ্টা না গেলে কিছু বলা যাচ্ছে না।” শুধু তাই নয়, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর চেন্নাইয়ে বোর্ডের বিশেষ সাধারণ সভার বৈঠকে ললিত মোদীর ভাগ্য নির্ধারণও এর ফলে অনিশ্চিত হয়ে পড়ল বলে মনে করা হচ্ছে। আদালতের সিদ্ধান্তে। সিদ্ধান্ত মানেশুনানি পিছিয়ে দেওয়া।
বোর্ড বনাম বিহার ক্রিকেট সংস্থার মামলা এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ নয়, পরে শুনলেও চলবে এই কারণ দেখিয়ে এ দিন দু’সপ্তাহের জন্য মামলার শুনানি মুলতুবি করে দেয় সর্বোচ্চ আদালত। কারণ, বিকেল ৩.৪০-এ যখন মামলা আদালতে ওঠার কথা ছিল, তখন আদালতের কাজ শেষ হতে মাত্র ২০ মিনিট বাকি। এই সময়ের মধ্যে শুনানি হওয়া সম্ভব ছিল না। বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তি প্রয়োজন, এই বলে বোর্ডের আইনজীবীরা অনেক অনুরোধ করেন। কিন্তু দুই বিচারপতির বেঞ্চ তা রক্ষা করেনি। বিচারপতি এ কে পট্টনায়েক এবং বিচারপতি জে এস খেহারের বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দেয়, বোর্ড চাইলে প্রধান বিচারপতির কাছে যেতে পারে বা অন্য বেঞ্চে মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আবেদন জানাতে পারে। বৃহস্পতিবার আর তা সম্ভব হয়নি।
এ দিকে, বোর্ডের এই টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে শুক্রবার অরুণ জেটলি, নিরঞ্জন শাহর শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি বসছে রবি সাওয়ানির রিপোর্ট নিয়ে আলোচনা করতে। এই সভায় ডাকা হয়েছে শ্রীসন্ত, অঙ্কিত চহ্বাণ, হরমীত সিংহ, সিদ্ধার্থ ত্রিবেদী ও অমিত সিংহকে। তবে অজিত চান্ডিলাকে ডাকা হয়নি। কারণ, ৯ সেপ্টম্বর তিনি জামিনে ছাড়া পাওয়ায় তাঁর সঙ্গে রবি সাওয়ানি নিজেও কথা বলতে পারেননি। শ্রীসন্ত, চহ্বাণকে পাঁচ বছরের নির্বাসন দেওয়া হতে পারে, রাতে এমন সম্ভাবনার কথাও জানা গেল।
|