ইস্টবেঙ্গল- ৪ (চিডি, জোয়াকিম-২, লালরিন্দিকা)
পুলিশ এসি- ০ |
ট্রেভর জেমস মর্গ্যানের স্মৃতির ‘অ্যালবাম’-এ বন্দি লাল-হলুদ জনতাকে সাম্বার তালে নাচাতে শুরু করে দিলেন মার্কোস ফালোপা। একশো পঁয়ষট্টি মিনিটের পরীক্ষায় (ভেস্তে যাওয়া উদ্বোধনী ম্যাচ ও পুলিশ এসি ম্যাচ মিলিয়ে) সসম্মান উত্তীর্ণ তিনি।
তিন বছরে আটটি ট্রফি জেতা ব্রিটিশ কোচের উত্তরসূরি ইস্টবেঙ্গলে সাফ্যলের ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবেন কিনা, তা ভেবে সংশয়ে দিন কাটাচ্ছিলেন অনেকেই। কিন্তু পর পর দু’টো ম্যাচে যে ফুটবল উপহার দিলেন ফালোপা, তা মঙ্গলবার মহা-গুরুত্বপূর্ণ এএফসি কাপ কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচের আগে নিঃসন্দেহে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে ইস্টবেঙ্গলকে। কেন না আন্তর্জাতিক ম্যাচ জিততে ত্রিমুখী অস্ত্রে শান দিয়ে নিয়েছেন ব্রাজিলীয় কোচ!
এক) ‘ইউটিলিটি’ ফুটবলারের বিশ্বজনীন তত্ত্ব মুছে দেওয়া: মর্গ্যানের দলে হরমনজিৎ সিংহ খাবড়া কিংবা রহিম নবির মতো দু’একটা নির্দিষ্ট অপরিহার্য ফুটবলার থাকলেও, ফালোপার দলে সবাই অপরিহার্য। প্রয়োজনে কখনও সৌমিক দে-কে স্টপারে খেলাচ্ছেন, আবার উগা ওপারাকে চিডি-র জন্য ‘বল সাপ্লাই’ করতে পাঠাচ্ছেন। ভাসুম-নওবা, লালরিন্দিকা-লোবো, কোনও ফুটবলারেরই জায়গা নির্দিষ্ট নয়। এমনকী যে পেন ওরজির অভাব ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠকে ভোগাবে বলে মনে করা হচ্ছিল, সেই অন্ধ পেন-নির্ভরতাও ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছে লাল-হলুদ ব্রিগেড। বৃহস্পতিবার পুলিশ এসি-র বিরুদ্ধে নতুন মরসুমে নিজের প্রথম গোল করা চিডিও বলছিলেন, “স্ট্রাইকারদের সঙ্গে মানাতে আরও একটু সময় লাগবে। তবে মাঝমাঠ থেকে বল পেতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। আর মেহতাব ও সুয়োকা চলে এলে তো কোনও সমস্যাই থাকবে না।” বালোতেলির মতো নতুন চুলের স্টাইল করলে কী হবে, গোল করার স্টাইল ছিটেফোঁটা বদলাননি চিডি। ম্যাচের শুরুতেই পুলিশের ‘ব্যারিকেড’ ভেঙে তাঁর বাঁ পায়ের দুরন্ত গতির শট জালে জড়িয়ে যায়। |
দুই) মাটি ঘেঁষা ফুটবল: ছোট ছোট পাস ও বল পজেশনে জোর। দলের গড় উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি দিয়ে যে লং বল খেলা যাবে না, সেটা আগেই ধরে ফেলেছেন ফালোপা। গোটা নব্বই মিনিট মাটিতে বল রেখে খেলতে দেখা গেল লোবো-সুবোধদের। দু’একটা মিস পাস হলেও, বড় কোনও সমস্যা হয়নি বোঝাপড়ায়। বরং ভাসুম ও লালরিন্দিকার উইং প্লে দেখে মুগ্ধ কোচ ফালোপা বলছিলেন, “এএফসি কাপে ভাসুম-ডিকার একটা বড় ভূমিকা থাকবে। ওরা আমার স্টাইলটা খুব তাড়াতাড়ি রপ্ত করে ফেলেছে।” এ দিনের ম্যাচে ভাসুম গোল না পেলেও, জোয়াকিমকে দিয়ে একটি অনবদ্য গোল করালেন। মাঝমাঠ থেকে চার জন ফুটবলারকে বোকা বানিয়ে যে শৌখিন থ্রু-টা বাড়ালেন, তাতে ভাসুমের মধ্যে পেনের জলছবি-ই ভেসে উঠল।
তিন) স্থায়ী স্ট্রাইকার জুটি: গত তিন বছর ধরে ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম সমস্যা ফরোয়ার্ড। একটা স্থায়ী স্ট্রাইকার জুটির অভাবেই বারবার আই লিগের ট্রফি হাতছাড়া করতে হয়েছিল মর্গ্যানকে। সেটা টোলগে-রবিন জুটি হোক, টোলগে-অ্যালান গাও জুটি হোক কিংবা চিডি-বরিসিচ কেউই সে ভাবে সফল হতে পারেননি। কিন্তু নতুন মরসুমে বোধহয় স্ট্রাইকার জুটির অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল। চিডি-মোগা তো আছেনই, বিকল্প হিসেবে জোয়াকিম, বলজিৎ কিংবা হরমনজিৎ খাবড়াকেও ব্যবহার করা যেতে পারে। সবচেয়ে স্বস্তির খবর হল, রবিন সিংহের মতো গোল-কানা স্ট্রাইকারের বদলে জোয়াকিম আব্রাঞ্চেসের মতো ফুটবলার এসেছেন দলে। কলকাতা লিগের দু’টো ম্যাচে ইতিমধ্যেই তিনটে গোল করে ফেলেছেন। এ দিনের জোড়া গোলে একটি বাঁ পায়ের চোখ-ধাঁধানো শটও ‘ফ্রেম-বন্দি’ করে রাখার মতো।
কলকাতা লিগের মান নিয়ে হাজার প্রশ্ন উঠলেও, ফালোপার যোগ্যতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই। দু’ম্যাচে ৮ গোল, সঙ্গে দৃষ্টিনন্দন ফুটবল। পরের সপ্তাহে এএফসি কাপ কোয়ার্টার ফাইনালে ইস্টবেঙ্গল যা-ই ফল করুক না কেন, দু’দিনের ‘ম্যাটিনি শো’-তে ফালোপা কিন্তু সুপারহিট!
ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, নওবা, গুরবিন্দর, ওপারা, সৌমিক, ভাসুম (লেন), সুবোধ, লোবো, লালরিন্দিকা, চিডি, জোয়াকিম (বলজিৎ)।
|