সফল ভারতীয় কোচদের পরামর্শ নেওয়া হোক
ত নভেম্বরে গোটা ব্রাজিল জুড়ে হাওয়া উঠেছিল পেপ গুয়ার্দিওলাকে জাতীয় কোচ করে আনার জন্য। যুক্তি ছিল, পুরনো ব্রাজিলকে ফিরিয়ে আনবেন পেপ। ব্রাজিল ফুটবল কনফেডারেশন কিন্তু এ সব যুক্তিতে কান না দিয়ে স্কোলারি-পাহিরার হাতেই তুলে দিয়েছিল নেইমার-পওলিনহোদের দায়িত্ব। তার ফল কী হয়েছে সেটা বলে আর নিউজপ্রিন্ট খরচ করতে চাই না।
একই কথা প্রযোজ্য ভারতীয় ফুটবল প্রসঙ্গেও। তফাৎ এটাই ব্রাজিলে ফুটবল প্রশাসকরা আস্থা রাখেন দেশীয় কোচের ওপর। আর আমাদের বিদেশি ছাপ্পা হলেই চলবে। আবারও বলছি, বিদেশি কোচ এনে ভারতীয় ফুটবলের হাল কোনওদিন ফিরবে না। বুধবার দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে এই কথাটা আরও এক বার প্রমাণিত হল। আফগানিস্তান কিন্তু দেশের কোচের ওপর আস্থা রেখেই বাজিমাত করল।
অনেকেই ভাববেন আমি জাতীয় কোচ নই বলে রোজ রোজ বিদেশি কোচের ওপর বিষোদগার করছি। তা কিন্তু নয়। যিনি দেশের কোচ তিনি তো প্রথম সারির স্থানীয় লিগ, আই লিগ দেখে দক্ষতা অনুযায়ী টিম গড়বেন। ঠাণ্ডা ঘরে, ইন্টারনেট অন করে বড় বড় নাম ঢোকালেই দেশে ট্রফি আসে না। ট্রফি আসে ঠিক জায়গায় দক্ষতা অনুযায়ী সঠিক ফুটবলার নির্বাচন করলে। সেটা হয়েছে? সেটা যদি হয়, তা হলে আগামী দশ বছর সাফ কাপ চ্যাম্পিয়ন হবে ভারতই।
সাফ কাপ ফাইনালে এমন একজন ফরোয়ার্ডকে দেখলাম যে নিচের দিকে হাত সোজা রেখে হেড করতে ওঠে। ফুটবলের ব্যাকরণটাই তো সে জানে না। তা হলে দলে এল কী ভাবে? এর চেয়ে শঙ্কর ওঁরাওকে নেওয়া যেত। কোন যুক্তিতে লেনি, ফ্রান্সিস দলে? ওরা তো বল ধরে খেলাটা শিখেছে বলে মনে হয় না। বল পেয়েই পাস করে দেয়। না আছে বল কন্ট্রোল। না আছে রিসিভিং। অথচ সঞ্জু প্রধান, লালকমল, ডেনসন, আদিল খানরা দেশে বসে আছে। এই ভারতীয় দলে সুনীল ছেত্রী ছাড়া আর কাউকেই তো দেখলাম না যে একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে ড্রিবল করে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। কারণ একটারও বল কন্ট্রোল ঠিকঠাক নয়।
ফুটবলার জীবনের শুরুর দিন থেকে জানি, দুই স্টপারের এক জন যদি ধ্বংসাত্মক হয় তা হলে আর এক জন পার্টনারের ট্যাকলের পর লুজ বল ধরে আক্রমণে বল যোগায়। যেমন- জার্নেল সিংহ-অরুণ ঘোষ, প্রসাদ- নইম, শ্যামল ঘোষ-অশোকলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ভারতীয় দলে সেই কম্বিনেশন কোথায়? বিদেশি কোচ তো এটা আরও ভাল করে শেখাবেন।
এই ভারতীয় দলের গতির সঙ্গে দক্ষতার কোনও তাল নেই। ছোট চেহারা। ফিটনেস কম। তা হলে জেতা যাবে? আর সুনীল ফাইনালে যা গোল মিস করল তা চোখে দেখা যায় না। ভারতীয় গোলকিপারও বেশ কিছু টেকনিক্যাল ভুল করছিল বারবার।
এত ডাচ কোচ, ফুটবলে অরেঞ্জ বিপ্লবের কথা শুনি। তা হলে মান্ধাতা আমলের সেই লং বল কেন খেলতে গেল ভারত? তাও বড় চেহারার আফগানদের বিরুদ্ধে।
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আসে না। তবে প্রথম ম্যাচে যে হতশ্রী ফুটবল দেখেছিলাম তার চেয়ে ভাল ফুটবল শেষ দুই ম্যাচে খেলল মেহতাব-নবিরা। প্রাপ্তি কেবল এটাই। কারণ বিশ্ব ফুটবলে সাফ কাপের কোনও মূল্যই নেই। এতে কিছু ফুটবলার এবং বিদেশি কোচের বায়োডাটার কেবল বহর বাড়ে। ফুটবলের কিস্যু উন্নতি হয় না। র্যাঙ্কিং পিছোতেই থাকে। যা হচ্ছে বারবার।
ভারতীয় ফুটবলকে আন্তর্জাতিক স্তরে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে সবার আগে কোভারম্যান্স এবং ফুটবলারদের সঙ্গে একবার বসুন ফেডারেশন কর্তারা। জানতে চান, ফুটবলারদের ভাষাগত বা মনস্তাত্বিক কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না। প্রয়োজনে ক্রীড়াবিজ্ঞানের সাহায্য নেওয়া হোক। সফল দেশীয় কোচদেরও সেই আলোচনায় ডেকে মতামত, পরামর্শ চাইতেই পারেন ফেডারেশন কর্তারা। স্রেফ এতেই ভারতীয় ফুটবল অনেকটা এগিয়ে যেতে পারে এখনও। না হলে দেশের ফুটবল আরও বড় গাড্ডায় পড়তে চলেছে আগামীদিনে।
গতবার আমরা এই আফগানিস্তানকে হারিয়েই সাফ কাপ জিতেছিলাম। এ বার ফাইনালে ভারত যে সব সুযোগ পেয়েছিল তা কাজে লাগাতে পারলে আমরাই চ্যাম্পিয়ন হতাম। কিন্তু নিজেদের বোঝাপড়ার অভাবের কারণেই ট্রফি হাতছাড়া হল। কোভারম্যান্সকে সরিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। ওকে আরও সময় দিতে হবে। সুনীলকে শুরু থেকে না খেলানোর সিদ্ধান্ত কোচের। এ নিয়ে আমি কী বলব!
ভাইচুং ভুটিয়া
এটা ঠিক যে বিগত কয়েক বছরে উপমহাদেশ এবং এশিয়াকোথাও সে ভাবে ফুটবলে বড় সাফল্য পায়নি ভারত। ’৯৬ সালেও আমাদের ফিফা র্যাঙ্কিং ছিল ৯৪। আর আজ ১৫০-এর ওপরে।এশিয়াতেও প্রথম দশে নেই আমরা। অদূর ভবিষ্যতেও সেই স্থান দখলের সম্ভাবনাও বেশ কষ্টকর। তবে অসম্ভব নয়। আফগানিস্তানের সঙ্গে কিন্তু আমরা মোটেও হেরে যাওয়ার মতো খেলিনি। আর কোভারম্যান্সকে সরিয়ে দিলেই রাতারাতি দেশের ফুটবল পালটে যাবে না।
আইএম বিজয়ন

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.