শুধুমাত্র আড়াই মাসের ফুটবল আইপিএল খেললে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া কঠিন হবে, কার্যত জানিয়ে দিলেন উইম কোভারম্যান্স।
বুধবার রাতে সাফ কাপ ফাইনালে হেরে টিম হোটেলে ফিরে ডিনারের পর একটি সভা ডাকেন ভারতের কোচ। সেখানে তিনি নবি-সুব্রত পাল-গৌরমাঙ্গীদের উদ্দেশে বলেন, “তোমাদের কী হবে বুঝতে পারছি না। আমি চাই তোমরা প্রতিযোগিতামূলক টুর্নামেন্টে খেলো। কারণ শুধুমাত্র প্র্যাকটিসের মধ্যে থাকলে তোমাদের নিয়ে আমি জাতীয় দলে কী করব বুঝতে পারছি না। তিনটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলব ভেবেছিলাম। কিন্তু শুনছি সেগুলো সব বাতিল হয়ে গেছে। ফলে, তোমরা টুর্নামেন্ট না খেললে ফিট থাকবে না।” যা থেকে পরিষ্কার ইঙ্গিত, আই লিগ, ফেড কাপ-সহ বছরভর টুর্নামেন্ট না খেললে তিনি ফুটবালরদের বিবেচনায় নাও আনতে পারেন। ডাচ কোচের মনোভাব বোঝার পরই নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করে দেন নবি-সুব্রত পালরা। আইএমজি লিগে চুক্তিবদ্ধ চার ফুটবলারই এ দিন শহরে ফেরেন। নবি এবং সুব্রত দু’জনেই বললেন, “আমরা বুঝতে পারছি না কী করব। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করার পর আমরা ঠিক করব কবে মুম্বইতে গিয়ে রিলায়্যান্স কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসব।” নবি অবশ্য আগামী সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন একটি ক্লাবে ট্রায়াল দিতে। বলছিলেন, “যদি ওখানে সুযোগ পাই তা হলে পরের মরসুমে খেলার জন্য কথা বলে আসব।” |
বৃহস্পতিবার ভোরেই কাঠমান্ডু ছাড়বেন বলে ডেকে নিয়েছিলেন কোভারম্যান্স। সেখানেই বলেন, “তোমরা ফাইনালে অত্যন্ত ভাল খেলেছ। শুধু গোলটা পাওনি। তোমাদের জন্য আমি গর্বিত।”
সাফ কাপে বাংলাদেশ ম্যাচের পর মোহনরাজ এবং মেহতাব গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়েছিলেন। কোভারম্যান্সের ১৪ মাসের জমানায় যা কখনও হয়নি। এত দিন টুর্নামেন্ট চলছিল বলে এ ব্যাপারে ক্ষোভ থাকলেও টিমের স্বার্থে নীরব ছিলেন ডাচ কোচ। আলোচনার সময় মোহনরাজকে তিনি বলেন, সিনিয়ার মেহতাবের থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে। পাশাপাশি মেহতাবকেও বলেন, জুনিয়ার মোহনরাজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে নিতে। দুই ফুটবলারই নিজেদের মধ্যে হাত মিলিয়ে নেন এবং একে অন্যকে জড়িয়ে ধরেন।
আফগানিস্তান ম্যাচের পর প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেলেও হতাশা কাটেনি ভারতীয় ফুটবলারদের। যেমন সুব্রত পাল এ দিন কাঠমান্ডু বিমান বন্দরে দাঁড়িয়ে বললেন, “দ্বিতীয় গোলটা আমার আটকানো উচিত ছিল। তা হলে হয়তো ম্যাচটা ১-১ হয়েও যেতে পারত। কিন্তু সেটা হয়নি।” পাশাপাশি রহিম নবির মন্তব্য, “এই ম্যাচ আমাদের অন্তত ৫-২ গোলে জেতা উচিত ছিল। এমন সব সুযোগ নষ্ট হল যা কল্পনাও করা যায় না। ওদের গোলকিপার কিন্তু অসাধারণ খেলেছে।”
বৃহস্পতিবার সকালেই কোভারম্যান্স, সুনীল ছেত্রী-সহ বেশির ভাগ ফুটবলারই কাঠমান্ডু ছেড়ে যান। বিকেলে কলকাতায় ফেরেন বাকিরা। সেই দলে ছিলেন ইস্টবেঙ্গলের দুই ফুটবলার মেহতাব হোসেন এবং অর্ণব মণ্ডলও। দু’জনের মাথায় দেশ ছেড়ে এখন ক্লাবের কথা ঘুরছে। নীল জার্সি ছেড়ে দু’জনেই এখন ক্লাবের হয়ে তাড়াতাড়ি প্র্যাকটিসে নেমে পড়তে চান। মেহতাব বলছিলেন, “সেমেন পাদাং দলটি কেমন জানি না। আফগানদের কাছে হেরেছি, যদি এই ম্যাচটা অন্তত ক্লাবের হয়ে জিততে পারি, তা হলে হয়তো হতাশা একটু কমবে। ওটাও তো আন্তর্জাতিক ম্যাচ।”
কাঠমান্ডু বিমান বন্দরে বসেই মেহতাব, অর্ণব, সন্দীপ, রাজুরা যখন ক্লাবের কথা ভাবছেন তখন নির্মল, গৌরমাঙ্গীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তাঁদের যে ক্লাবই নেই। হতাশ গলায় গৌরমাঙ্গী এবং নির্মল দু’জনেই বললেন, “কী হবে বুঝতে পারছি না। কোথায় খেলব কিছুই যে জানি না।”
|