বেড়েছে চুরি-ছিনতাই-সহ অন্য অপরাধ
আইনশৃঙ্খলার সমস্যা সত্ত্বেও তুলে দেওয়া হয়েছে ফাঁড়ি
পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও তা পুলিশশূন্য। আর তারই সুযোগ নিয়ে এলাকায় বেড়ে চলেছে চুরি-ছিনতাই-সহ অন্যান্য অপরাধ। তিতিবিরক্ত স্থানীয় বাসিন্দারা বার বার দাবি জানালেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন না হওয়ায় এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এমনকী যে কোনও সময় বড় ধরনের অশান্তির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই পরিস্থিতি উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের বাদুড়িয়ায়।
পুঁড়োর খোঁড়গাছি গ্রামে পরিত্যক্ত পুলিশ ফাঁড়ি। ছবি: নির্মল বসু।
ইছামতীর দুই পাড় মিলিয়ে বাদুড়িয়া পুরসভার ১৭টি ওয়ার্ড। এ ছাড়াও ১৪টি পঞ্চায়েতের দু’শোর উপর গ্রামে প্রায় তিন লক্ষ মানুষের বাস। রয়েছে তিনশোর বেশি স্কুল, হাসপাতাল, বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক এবং সরকারি ও বেসরকারি নানা দফতর। এ ছাড়া রয়েছে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সীমান্ত। এ সব নিয়ে প্রায় ২২০ বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে একটি মাত্র থানা। থানা থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশ সীমান্ত, যা নিয়ে প্রতিনিয়ত তৎপর থাকতে হয় পুলিশকে। ইছামতীর অন্য পারে ৪টি পঞ্চায়েতের প্রায় ৮০টি গ্রাম এবং ৫টি ওয়ার্ড, যেখানে কোনও ঘটনায় পুলিশকে পৌঁছতে হলে তেঁতুলিয়া সেতু ঘুরে যেতে অন্তত দু’ঘণ্টা সময় লেগে যায়। পুলিশের একাংশের দাবি, বিস্তীর্ণ এই অঞ্চলের দেখভালের জন্য থানায় রয়েছে ৮ জন অফিসার, কনস্টেবল ও হোমগার্ড মিলিয়ে ২৬ জন ও ১২ জন গ্রামীণ পুলিশ। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। তার উপর গাড়ির জন্য তেলের পরিমাণ বেঁধে দেওয়ার কারণে সব জায়গায় গাড়ি নিয়ে পৌঁছনোও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে দুষ্কৃতীরা স্বাভাবিক ভাবেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
প্রায় ১০০ বছর আগে বাদুড়িয়ার পুঁড়া বাজারের কাছে খোঁড়গাছি গ্রামে পুলিশ ফাঁড়ির জন্য দেড় বিঘা জমি দান করে সেখানে ইটের দেওয়াল ও টিনের চালের বাড়ি তৈরি করে দেন তদানীন্তন কাতুরাজা। বাড়ি তৈরি হওয়ার পরেও সেখানে কিছুদিন পুলিশও ছিল। পরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থেকে ধীরে ধীরে বাড়িটি নষ্ট হয়ে যায়। তার পরেও ওই এলাকায় পুলিশ ফাঁড়ির প্রয়োজন বুঝে ২০০০ সালে ফের প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি একতলা বাড়ি তৈরি করা হয়। ২০০৩ সালে জেলার তদানীন্তন পুলিশ সুপার এম এইচ বর্মা তার উদ্বোধনও করেন। উদ্বোধনের পরে এক জন অফিসার-সহ ৬ জন পুলিশকর্মী নিয়ে কাজও শুরু করে ওই ফাঁড়ি। এর পরে এলাকায় দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য কমবে এই ভেবে আশ্বস্ত হয়েছিলেন স্থানীয় মানুষ। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাড়িটি ক্রমশ জীর্ণ হয়ে পড়ায় ২০০৬ সালে সেখানে থানার পরিকাঠামো যুক্ত ফের একটি বাড়ি তৈরি করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ওই ব্যবস্থার পরে ওই এলাকা ও তার আশপাশে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য অনেকটাই কমে। কিন্তু বছর তিনেক আগে ওই ফাঁড়ি থেকে সমস্ত পুলিশকর্মী ফিরিয়ে নেওয়া হয়। ফলে ফের ওই এলাকায় দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। চুরি-ছিনতাই-সহ অন্যান্য অপরাধ বাড়ছে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও যে ভাবে ফাঁড়ি (থানা) গুটিয়ে নেওয়া হল তাতে দুষ্কৃতীদেরই উৎসাহ দেওয়া হল। বাসিন্দাদের অভিযোগ যে অমূলক নয়, তার প্রমাণ ওই এলাকায় অপরাধের পরিসংখ্যান। গত কয়েক মাসে একশোটিরও বেশি নানা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটেছে বাদুড়িয়ায়। একের পর এক মন্দির, সোনার দোকানে লুঠপাটের ঘটনা ঘটেছে। ঘটে গিয়েছে একাধিক ডাকাতিও। পরিস্থিতি এমনই ঘোরালো হয়ে ওঠে যে রাতে থানা থেকে বিভিন্ন রাস্তায় টহলদারির ব্যবস্থা করা হয়। মোটরবাইক নিয়ে নিজেও টহলদারিতে নামেন ওসি স্বয়ং। কিন্তু তা সত্ত্বেও চুরি-ছিনতাই-লুঠের ঘটনা ঘটে চলেছে। বাদুড়িয়ার পুরপ্রধান দীপঙ্কর ভট্টাচার্য বলেন, “ফাঁড়িতে পুলিশ রাখার জন্য আমরা ইতিমদ্যেই জেলাস্তরে আবেদন জানিয়েছি। এ ছাড়া থানায় বৈঠক করে সিদ্ধান্ত হয়েছে চুরি-ছিনতাই-সহ অন্য অপরাধ রুখতে আর জি পার্টি চালু করার পাশাপাশি ইটভাটাগুলিতে কাজ করতে আসা শ্রমিকদের পরিচয় থানায় জানানোর জন্য ভাটামালিকদের বলা হয়েছে। জানাতে হবে। তার কারণ ওই সব ভাটা শ্রমিকদের একটা বড় অংশ বাংলাদেশে থেকে আসে। সেই সুযোগে ঢুকে পড়ে দুষ্কৃতীরাও।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, বসিরহাট মহকুমা সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ার জন্য নানা অপরাধমূলক ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থানাগুলিকে ঢেলে সাজার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ঢেলে সাজা তো দূরের কথা, উল্টে দুষ্কৃতীদের হামলার আশঙ্কা সত্ত্বেও গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে ফাঁড়ি। এই অবস্থায় ছেলেমেয়ে, সম্পত্তির নিরাপত্তায় তাঁরা কোথায় ভরসা খুঁজবেন?
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাদুড়িয়ায় পুলিশ ফাঁড়ি বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। কি অবস্থায়, কেন তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে সে ব্যাপারে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.