|
|
|
|
বাড়ছে অপরাধ, পুলিশের ভূমিকায় বন্ধ ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বসিরহাট |
ডাকাতি, ছিনতাই-সহ অপরাধমূলক কাজে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে বসিরহাট মহকুমায় ১২ ঘণ্টা ব্যবসা বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছিল। বুধবার বসিরহাট ব্যবসায়ী সমন্বয় কমিটির ডাকা সে বন্ধ সীমাবদ্ধ থাকল শুধুমাত্র বসিরহাট শহরেই। এ দিন সকাল থেকে শহরের বাজার, বেশ কিছু দোকানপাট বন্ধ থাকতে দেখা গেলেও অন্যত্র বন্ধের প্রভাব পড়েনি। যান চলাচলও ছিল স্বাভাবিক।
ব্যবসায়ীদের দাবি, গত এক বছরে মহকুমায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে দুই ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন এক জন। ভয় দেখিয়ে তোলা আদায় এবং চুরি-ছিনতাই তো নিত্যদিনের ঘটনা। তাই বন্ধ দিয়ে তার প্রতিবাদ শুরু। নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা না হলে পরবর্তীকালে থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে একটি সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে পুলিশের কাজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশও করা হয়। পুলিশের দাবি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। ডাকাতির জিনিসও উদ্ধার হয়েছে। এ দিকে, এ দিন পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ জানিয়ে দিনভর বাজার বন্ধের বিষয়টি বেশিরভাগ মানুষ ভাল ভাবে নেয়নি। ব্যবসা বন্ধ রেখে, সাধারণ মানুষের অসুবিধা করে কী ভাবে পুলিশের উপর চাপ সৃষ্টি করা যায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। |
|
ছবি: নির্মল বসু। |
ব্যবসায়ীরা জানান, বসিরহাটে খুন, ডাকাতি এবং চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা বাড়ায় চিন্তিত শহরবাসী। গত এক বছরের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জ বাজারে লুঠপাট চালিয়ে, এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে পালায় দুষ্কৃতীরা। যোগেশগঞ্জ বাজারে নৈশপ্রহরী এবং পুলিশ চৌকি থানা সত্ত্বেও তিনটি সোনার দোকানে লুঠপাট চলে। লুঠ হয় নগদ কয়েক লক্ষ টাকা। সন্দেশখালির ন্যাজাটে কালীনগর কলেজে হামলা চালিয়ে দুষ্কৃতীরা নৈশপ্রহরীকে বেঁধে টাকা লুঠ করে। বাদুড়িয়া, সন্দেশখালি এবং স্বরূপনগরের স্কুলেও চুরির ঘটনা ঘটে। পুলিশ ফাঁড়ি থাকা সত্ত্বেও দাউদপুর বাজারে তিনটি দোকানে সম্প্রতি লুঠপাট চালায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনার পর পুলিশ চৌকি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় বাসিন্দারা।
অন্য দিকে, বসিরহাটের উত্তর কাঁকড়া গ্রামের ব্যবসায়ী সুশান্ত নাথের বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের উপর দুষ্কৃতী হামলার অভিযোগ উঠেছিল। দুষ্কৃতীদের গুলিতে গুরুতর আহত হয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। পালানোর সময় দুষ্কৃতীরা গ্রামবাসীদের দিকে বোমা ছোড়ে বলে অভিযোগ। বসিরহাটের খোলাপোতায় রাজনগর গ্রামে গভীর রাতে বাড়িতে ঢুকে মহিলাদের মারধর করে গয়না লুঠ করে দুষ্কৃতীরা। এর কিছুদিন পর এলাকারই একটি পেট্রল পাম্পে ডাকাতি হয়। সর্বশেষ ঘটনাটি বসিরহাটের মাটিয়ার। সম্প্রতি সেখানে একটি যাত্রীবোঝাই বাস আটকে এক চাল ব্যবসায়ীর মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ টাকা লুঠ করে দুষ্কৃতীরা।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গোটা মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক দুষ্কৃতী হামলা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা পালিয়ে যাচ্ছে। সে সব ক্ষেত্রে পুলিশ শুধুই দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। বসিরহাটের ওই ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষে দীপক রায়চৌধুরী, মিহির চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ট। সব জেনেও পুলিশ এবং রাজনৈতিক দলগুলি নিরব। বাধ্য হয়ে বন্ধের ডাক দেওয়া হয়েছে।” সম্প্রতি এক সাংবাদিক সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য অবশ্য জানান, দুষ্কৃতীদের ধরতে একটি বিশেষ দল তৈরি হয়েছে। তাতে সাফল্যও মিলেছে। কিন্তু মিহিরবাবুদের কথায়, “দুষ্কৃতী গ্রেফতার হলেও এ পর্যন্ত লুঠ হওয়া জিনিস উদ্ধার হয়নি।” |
|
|
|
|
|