দু’জন নয়। খুনের রাতে হাসপাতালে সজল ঘোষের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিন জন।
বুধবার নবদ্বীপ আদালতে দাঁড়িয়ে এমনটাই সাক্ষ্য দিলেন পূর্বস্থলীর ব্যবসায়ী, এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসেবে পরিচিত গৌতম নাথ। এর মধ্যে দু’জন, সিপিএমের পূর্বস্থলী লোকাল সম্পাদক প্রদীপ সাহা এবং পূর্বস্থলী কলেজের এসএফআই নেতা লোকনাথ দেবনাথের (এখনও ফেরার) কথা আগেই জানিয়ে গিয়েছিলেন আগের সাক্ষী। গৌতমবাবু যোগ করলেন হেলমেট পরা আরও এক জনের কথা, হেলমেটের কারণে যাকে তিনি চিনতে পারেননি।
গত বছর ৯ জানুয়ারি রাতে নবদ্বীপ হাসপাতালে আহত ছাত্রদের দেখতে গিয়ে গুলিতে খুন হন তৃণমূলের পূর্বস্থলী অঞ্চল সহ-সভাপতি সজল ঘোষ। বুধবার, সাক্ষ্যদানের তৃতীয় দিন নবদ্বীপের অতিরিক্ত জেলা জজ ও সেশন জজ শুভব্রত চৌধুরীর এজলাসে সাক্ষ্য দিতে ডাকা হয়েছিল দু’জনকে গৌতম নাথ এবং পূর্বস্থলী কলেজের টিএমসিপি সমর্থক ছাত্র হালিম শেখ।
শুনানির শুরুতেই অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি বিকাশকুমার মুখোপাধ্যায় হালিম শেখের কাছে ঘটনার বিবরণ জানতে চান। হালিম জানান, ঘটনার দিন দুপুরে বর্ধমানের পূর্বস্থলী কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে টিএমসিপি এবং এসএফআই সমর্থকদের মারামারি হয়েছিল। তাতে তিনি ছাড়াও টিএমসিপি-র শৌভিক আইচ এবং এসএফআইয়ের সন্তু ভৌমিক আহত হন। তাঁদের নদিয়ায় নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে পূর্বস্থলী থেকে তাঁদের দেখতে আসেন গৌতম নাথ ও ফজুল হক মণ্ডল। খানিক বাদে তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আসেন দলের নেতা পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায়, সজল ঘোষ, কাজল শেখ ও গৌতম ভট্টাচার্য। সবাই যখন কথা বলছে, একটি অচেনা ছেলে এসে সন্তু ভৌমিকের সঙ্গে কথা বলে। এর পরেই সন্তু সজলবাবুকে বলেন, লোকনাথ তাঁকে নীচে ডাকছে। তা শুনে তিনি এবং অন্য কয়েক জন নীচে নেমে যান। খানিক বাদেই খুনের খবর আসে।
এই পর্যন্ত শুনে অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি হালিমকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনি কার কাছ থেকে জানলেন সজলবাবু খুন হয়েছেন?” হালিম বলেন, “ফজুল হক মণ্ডল এবং গৌতম নাথের কাছ থেকে।” কৌঁসুলি প্রশ্ন করেন, “সজল ঘোষ কী ভাবে খুন হন বলে আপনি শুনেছিলেন?” হালিম বলেন, “শুনেছি, প্রদীপ সাহা ওঁকে জাপটে ধরেন আর খুব কাছ থেকে লোকনাথ গুলি করে।”
এর পরে কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর পালা গৌতমবাবুর। তাঁর বয়ানে, “একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রদীপ সাহা, লোকনাথ দেবনাথ এবং হেলমেট পরা আর এক জন। সজল ঘোষ কাছে যেতেই প্রদীপ সাহা তাঁকে জাপটে ধরে বলেন, ‘একে যদি মেরে না ফেলা যায়, তা হলে পূর্বস্থলী কলেজে ভোট করা যাবে না।’ লোকনাথ চাদরের তলা থেকে সজল ঘোষকে গুলি করে। প্রদীপ সাহা বলেন, ‘শেষ হয়ে গিয়েছে, এ বার চল।’ সজল ঘোষকে তুলে ভেতরে আনা হলে চিকিৎসকেরা জানান, তিনি মৃত।”
অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি দুই সাক্ষীর কাছেই জানতে চান, তাঁরা অভিযুক্তদের চিনিয়ে দিতে পারবেন কি না। দু’জনেই সন্তু ও প্রদীপবাবুকে শনাক্ত করেন। তবে বাকি তিন অভিযুক্তকে তাঁরা চিনতে পারেননি। আজ, বৃহস্পতিবার ফের মামলার শুনানি হবে।
|