তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব: সিপিএম
তৃণমূল নেতা খুনে ধৃত বাম শিক্ষক
প্ল্যাটফর্মে একের পর এক ছিনতাই করছে মুখঢাকা দুষ্কৃতীরা। অথচ যাত্রীরা রেলপুলিশের কাছে ছুটে গিয়ে শুনলেন, ‘জানেনই তো ও দিকে ছিনতাই হয়! ওখানে যাওয়ার কী দরকার?’
পরপর ছিনতাই ও রেলপুলিশের ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগেই শুক্রবার সাতসকালে রেল অবরোধ করা হল কাটোয়ায়। পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের ওই স্টেশনে ভোর সওয়া ৫টা থেকে সকাল পৌনে ৭টা পর্যন্ত এই অবরোধে তিনটি হাওড়াগামী লোকাল ট্রেন আটকে যায়। পরে রেলপুলিশ ও রেল রক্ষী বাহিনীর কর্তারা গিয়ে নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।
ঘটনার সূত্রপাত ভোর পৌনে ৫টা নাগাদ। কাটোয়া স্টেশনের ১এ প্ল্যাটফর্মে তখন দাঁড়িয়ে হাওড়াগামী কাটোয়া লোকাল। বহু নিত্যযাত্রী ওই ট্রেনেই কাটোয়া থেকে ত্রিবেণী পর্যন্ত যান। প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে ছিলেন কাটোয়া শহরেরই খড়ের বাজারের বাসিন্দা সত্যকালী দত্ত। তাঁর অভিযোগ, রুমালে ও গামছায় মুখ ঢাকা চার জন তাঁর জামার কলার চেপে ধরে সব টাকাকড়ি কেড়ে নেয়। রেলপুলিশের ওসি-র কাছে তাঁর অভিযোগ, “ছিনতাই হওয়ার পরেই রেলপুলিশের কাছে ছুটে আসি। কিন্তু ঢুলতে থাকা এক পুলিশকর্মী উল্টে আমায় বলেন, ওই দিকে তো ছিনতাই হয়ই! যাওয়ার দরকার কী?”
“কেন ধরল কিছুই বুঝছি না”...আদালতের পথে হাসিমুখে প্রদীপ সাহা। নিজস্ব চিত্র
নবদ্বীপের হাসপাতালে তৃণমূল নেতা খুনে গ্রেফতার হলেন সিপিএমের পূর্বস্থলী ২ লোকাল কমিটির সম্পাদক প্রদীপ সাহা। ধরা হয়েছে ওই হাসপাতালে ভর্তি থাকা এসএফআই সমর্থক সন্তু ভৌমিক-সহ আরও পাঁচ জনকে। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মূল অভিযুক্ত, পূর্বস্থলী কলেজের এসএফআই নেতা লোকনাথ দেবনাথকে পুলিশ ধরতে পারেনি।
গত বিধানসভা নির্বাচনে বর্ধমানের পূর্বস্থলী উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী ছিলেন স্থানীয় পারুলিয়া ফুলকামিনী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রদীপবাবু। হাজার দুয়েক ভোটে তৃণমূল প্রার্থী তপন চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হন। সোমবার রাতে ওই খুনের সময়ে তপনবাবুও নদিয়ার নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে হাজির ছিলেন। তৃণমূল নেতৃত্ব, টিএমসিপি সমর্থক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। সিপিএমের দাবি, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই খুন।
তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের দাবি, সম্ভবত তপনবাবুই ছিলেন আক্রমণের লক্ষ্য। ভুল করে তাঁদের পূর্বস্থলী অঞ্চল সহ-সভাপতি সজল ঘোষকে (৩৬) গুলি করা হয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। পূর্বস্থলী ছাড়াও নবদ্বীপে প্রদীপবাবুর একটি বাড়ি আছে। তৃণমূলের পূর্বস্থলী অঞ্চল সভাপতি পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে রাতে সেই বাড়ি থেকেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার দুপুরে সজলবাবুর মৃতদেহ পূর্বস্থলীতে ফেরার পরে প্রদীপবাবুর বাড়ি, সিপিএমের শাখা অফিস এবং কলেজের কাছে এক সিপিএম সমর্থকের চায়ের দোকান ভাঙচুর করা হয়। স্বপনবাবু অবশ্য বলেন, “আমাদের কেউ ও সবে জড়িত নয়।”
ঘটনার সূত্রপাত সোমবার দুপুরে পূর্বস্থলী কলেজে মনোনয়ন জমা দেওয়া নিয়ে এসএফআই-টিএমসিপি সংঘর্ষের জেরে। আহত দুই টিএমসিপি এবং এক এসএফআই সমর্থককে নবদ্বীপ হাসপাতালে দোতলায় ভর্তি করানো হয়েছিল। রাতে বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় কয়েক জন নেতাকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে যান।
ভর্তি থাকা টিএমসিপি সমর্থক সৌভিক আইচের অভিযোগ, “নেতারা থাকাকালীনই টাকমাথা এক অচেনা যুবক ওয়ার্ডে এসে আমায় বলে, এসএফআইয়ের লোকনাথ নীচে কথা বলতে ডাকছে। তপনকাকার অনুমতি নিয়ে নীচে যাই। লোকনাথ বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু হাতে ইঞ্জেকশনের চ্যানেল লাগানো থাকায় গেটে রক্ষী আমায় আটকে দেন। পিছনেই নামছিলেন সজলকাকা। তিনি বেরিয়ে লোকনাথকে জাপটে ধরেন। লোকনাথ চাদরের ভিতর থেকে পিস্তল বের করে তাঁর বুকে ঠেকিয়ে চালিয়ে দেয়। কাছেই মোটরবাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রদীপ সাহা। ‘এ বার পূর্বস্থলী কলেজ আমাদের’ বলে তিনি লোকনাথকে বাইকে চাপিয়ে চলে যান।”
বিধায়ক তপনবাবু আবার বলেন, “এক অপরিচিত যুবক ডাকায় সজলেরা তিন-চার জন নীচে নেমেছিল। হাসপাতালের গেটের সামনে প্রদীপ সাহা-সহ তিন জন আসে। সজল ওদের সঙ্গে কথা বলছিল। আমি একটু পরে নামি। কিন্তু ঠান্ডার কারণে চাদর মুড়ি থাকায় ওরা বোধ হয় ঠিক চিনতে পারেনি। সম্ভবত আমিই ছিলাম ওদের লক্ষ্য।” পঙ্কজবাবুর কথায়, “হেলমেট পরে মোটরবাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন প্রদীপ সাহা। গুলি করার পরে ওই বাইকেই ওরা পালায়।”
সেই রাতে হাসপাতালের গেটে পাহারায় থাকা কর্মীদের বয়ান কিন্তু এর সঙ্গে মিলছে না। প্রথমে গেটে ছিলেন বৃন্দাবন মণ্ডল নামে এক কর্মী। তিনি বলেন, “হাতে ইঞ্জেকশনের চ্যানেল নিয়ে একটি ছেলে বেরনোর চেষ্টা করলে আমি তাকে আটকাই। তার পরেই এক জন বেরিয়ে যান। এই সময়ে অসুস্থ বাচ্চা নিয়ে একটি লোক এসে পড়ায় আমি তাঁকে নিয়ে ভিতরে চলে যাই। তার পরেই একটা টায়ার ফাটার মতো শব্দ।” সেই শব্দ শুনে ছুটে যান রাতের প্রহরী রঞ্জিত দেবনাথ। তাঁর কথায়, “দেখি, এক জন পড়ে আছেন। চাদর জড়ানো একটা লোক বাইরের গেটের দিকে ছুটছে। রাস্তায় মোটরবাইকে এক জন বসে ছিল। অনেকটা দূরে থাকায় মুখ দেখতে পাইনি।”
সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদারের দাবি, “তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই এই খুন। প্রদীপ এলাকার জনপ্রিয় নেতা। তাঁকে জড়ানো হীন ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছু নয়।” বছর তিনেক আগে মূলত যাঁদের উদ্যোগে পূর্বস্থলী কলেজ গড়ে উঠেছিল, প্রদীপবাবু তাঁদের এক জন। রাজ্যে পরিবর্তন সত্ত্বেও পারুলিয়া এলাকায় তাঁর প্রভাব অক্ষুণ্ণ। সিপিএমের পূর্বস্থলী জোনাল সম্পাদক সুব্রত ভাওয়ালের অভিযোগ, “প্রদীপকে রাস্তা থেকে না হটালে পূর্বস্থলী কলেজের দখল নেওয়া যাবে না বুঝেই তৃণমূল ওকে ফাঁসিয়ে দিল।” দুপুরে নবদ্বীপ আদালতে তোলা হলে প্রদীপবাবুকে ১০ দিন পুলিশ হেফাজত ও সন্তুকে ১০ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। যদিও থানা থেকে আদালতে যাওয়ার পথে প্রদীপবাবু দাবি করেন, “কী অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে, আমি সেটাই জানি না!” নদিয়ার এসপি সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, ওই সিপিএম নেতা ঘটনাস্থলে ছিলেন। তাই গ্রেফতার করা হয়েছে।” দুপুরে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক ও বিকেলে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র নিহতের বাড়িতে যান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.