এক পরিবারে প্রিয়জন হারানোর কান্না। ছেলে গ্রেফতার হওয়ায় দুশ্চিন্তায় অন্য পরিবার।
সোমবার রাতে নবদ্বীপের হাসপাতালে পূর্বস্থলীর তৃণমূল নেতা সজল ঘোষ খুন হওয়ার ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন সিপিএম নেতা প্রদীপ সাহা। দুই পরিবারেরই দাবি, ‘রাজনীতির শিকার’ হতে হল তাঁদের ছেলেকে।
পূর্বস্থলীর চুপিতে একতলা বাড়িতে যৌথ পরিবার সজলবাবুদের। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনিই ছোট। বাড়িতেই একটি স্টেশনারি জিনিসপত্রের দোকান রয়েছে তাঁর। এ দিন ভোরে দুঃসংবাদ পৌঁছেছিল বাড়িতে। তার পর থেকেই ভাসছে কান্নার শব্দ। বাড়ির লোকজন জানান, রাতের খাবার না খেয়েই সোমবার ৯টা নাগাদ হাসপাতালে যান সজলবাবু। তাঁর দাদা শ্যামলকুমার ঘোষের কথায়, “বছর পাঁচেক আগে ভাইয়ের বিয়ে হয়েছিল। |
চার বছর আগে জন্ম হয় তাঁদের ছেলে সোহনের। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই ভাই দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। রাজনীতির শিকার হতে হল।”
কথা বলার অবস্থায় ছিলেন না সজলবাবুর স্ত্রী ইন্দ্রানীদেবী। সকাল ১০টা নাগাদ ঘুম ভেঙে বাড়িতে এত লোকজন দেখে প্রথমে ঘাবড়ে যায় সোহন। পরে অবশ্য খেলতে শুরু করে। দুপুরে যখন সজলবাবুর দেহ বাড়িতে পৌঁছয়, সোহনকে কোলে করে আগলে রাখেন পড়শিরাই। প্রতিবেশী প্রদীপ বিশ্বাস, বাপন বিশ্বাসরা বলেন, “পরোপকারী হিসেবে সজলদার নাম ছিল।”
দুপুর ২টো নাগাদ সজলবাবুর বাড়িতে যান রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক, তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ, বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়-সহ তৃণমূল নেতারা। মলয়বাবুর সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন সজলবাবুর দুই দিদি শিখা চন্দ্র ও রীতা রাই। মন্ত্রী আশ্বাস দেন, দল তাঁদের পাশে দাঁড়াবে। মুখ্যমন্ত্রীর নজরেও আনা হবে।
|
পূর্বস্থলীর চুপি গ্রামে ফিরল নিহত তৃণমূল নেতার দেহ। |
পারুলিয়ার এ দিন প্রদীপবাবুর বাড়ি ছিল তালাবন্ধ। প্রতিবেশীরা জানান, বাবা মণীন্দ্র সাহা ও মা দীপালি সাহাকে নিয়ে প্রদীপবাবু সেখানে থাকেন। নবদ্বীপেও একটি বাড়ি রয়েছে তাঁর। প্রদীপবাবুর স্ত্রী, পেশায় স্কুল শিক্ষিকা শম্পাদেবী মেয়েকে নিয়ে সেখানে থাকেন। এ দিন ছেলের গ্রেফতার হওয়ার খবর পেয়ে প্রদীপবাবুর বাবা-মা পারুলিয়াতেই মেয়ে চম্পা খাঁ-র শ্বশুরবাড়িতে চলে যান। সেখানে গিয়েও সারা ক্ষণ টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে বসে রয়েছেন তাঁরা।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী মণীন্দ্রবাবু জানান, ছেলে গত কাল রাতে পূর্বস্থলী থেকে নবদ্বীপে যায়। তাঁর দাবি, “প্রদীপ রাতে নবদ্বীপ হাসপাতালে যায়নি। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ বৌমা ফোনে জানায়, বাড়ি থেকে ছেলেকে ধরে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। মিথ্যা অভিযোগে জড়ানো হল ওকে।” প্রদীপবাবুর বোন চম্পাদেবী বলেন, “দাদার নেশা ছিল পরোপকার। জীবনে এই প্রথম তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠল।” অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী দীপালিদেবীর কথায়, “বছর তিনেক আগে পূর্বস্থলী কলেজ তৈরিতে মূল উদ্যোগ ছিল আমার ছেলের। দুর্ভাগ্য, সেই কলেজের কারণেই আজ তাকে জেলে যেতে হল।” তাঁর দাবি, “আমার ছেলে তো একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সে এমন কাজ করতে পারে?” |
কেদারনাথ ভট্টাচার্যের তোলা ছবি। |