তৃণমূল নেতা সজল ঘোষের খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অশান্তি ছড়াল পূর্বস্থলীতে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা নাগাদ নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ময়না-তদন্তের পরে সজল ঘোষের মৃতদেহ আনা হয় পূর্বস্থলীতে। প্রথমে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় পূর্বস্থলী কলেজে। সেখানে জড়ো হন কয়েক হাজার তৃণমূল এবং টিএমসিপি কর্মী-সমর্থকেরা। মৃতদেহ সেখানে থাকাকালীনই উত্তেজনা ছড়ায় কলেজ চত্বরে। তৃণমূলের কর্মীরা দাবি করতে থাকেন, কলেজের পাশে নিরঞ্জন হাওলাদারের বাড়ি থেকেই আগের দিন এসএফআই সমর্থকদের গণ্ডগোলের সময়ে লাঠি-ইট ইত্যাদি সরবরাহ করা হয়েছিল। এর পরেই নিরঞ্জনবাবুর টালির চালের পাকা বাড়িতে হামলা চালানো হয়। পরিবারের লোকজন বাড়িতেই একটি ঘরে লুকিয়ে ছিলেন। তাঁদের চিৎকারে পুলিশ সেখানে যায়। সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে পুলিশের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন নিরঞ্জনবাবুর মেয়ে শম্পা দাস। |
ধৃত নেতার বাবা-মা। নিজস্ব চিত্র। |
তিনি বলেন, “আমরা কাউকে আশ্রয় দিইনি। লাঠিসোটাও দিইনি। অযথা আমাদের উপরে আক্রমণ হচ্ছে।”
পুলিশ সেখানকার পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে আনলেও তত ক্ষণে কলেজ থেকে কিছুটা দূরে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সিপিএম নেতা প্রদীপবাবুর বাড়িতে চড়াও হয় কিছু লোকজন। মূল দরজা তালাবন্ধ থাকায় পাঁচিল টপকেই ভিতরে ঢোকে অনেকে। গ্যারাজে থাকা গাড়ি ও বাড়ির মধ্যে আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়। তবে কিছু তৃণমূল কর্মীই উদ্যোগী হয়ে হামলাকারীদের বাড়ি থেকে বের করেন। এর পরে এসটিকেকে রোড ধরে মৃতদেহ নিয়ে মিছিল রওনা হয় পূর্বস্থলীর চুপিতে সজলবাবুর বাড়ির দিকে। পথে পূর্বস্থলী স্টেশন বাজার এলাকায় সিপিএমের একটি শাখা অফিসেও ভাঙচুর চালানো হয়। কিছু আসবাব এবং নথিপত্রেও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। |
ধৃত নেতার বাড়িতে তছনছ। নিজস্ব চিত্র। |
সিপিএমের পূর্বস্থলী জোনাল সম্পাদক সুব্রত ভাওয়ালের দাবি, “গোটা ঘটনাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কলেজে মনোনয়ন জমা নিয়ে উত্তেজনা ছিল। আমি প্রদীপকে কলেজে যেতে বারণ করেছিলাম। সোমবার থেকে তাঁর স্কুলে মিড-ডে মিল চালু হয়েছে। সারা দিন সে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কলেজে যেতেই পারেননি তিনি। অথচ জোর করে তাঁকে কলেজ রাজনীতিতে জড়িয়ে দেওয়া হল। নবদ্বীপে বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়।” তাঁদের পার্টি অফিস এবং প্রদীপবাবু ও নিরঞ্জনবাবুর বাড়ি ভাঙচুরের নিন্দা করে সুব্রতবাবু বলেন, “এর প্রতিবাদে এখনও আমাদের কোনও কর্মসূচি নেওয়া হয়নি। তবে শীঘ্রই এ ব্যাপারে দলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
ভাঙচুর, হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ অবশ্য বলেন, “ও সব কারা করেছে জানি না। তবে আমাদের কেউ জড়িত নন।” তাঁর পাল্টা দাবি, “ঘটনার রাত থেকেই আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা যথেষ্ট সংযত আচরণ করেছেন।” স্বপনবাবু জানান, সজলবাবুকে খুনের প্রতিবাদে আজ, বুধবার জেলার সমস্ত ব্লকে পথে নামবে তৃণমূল।
পূর্বস্থলী থানার পুলিশ জানায়, ভাঙচুরের ঘটনার তদন্ত চলছে। পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে। |