পরিবারের লোকজন অত্যাচার করছেন এই মর্মে মাসখানেক আগে মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) ও পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করছিলেন বর্ধমানের বড়নীলপুরের বাসিন্দা সোমা দাস। তাঁর অভিযোগ, সুবিচার মেলেনি। সম্প্রতি পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে জেলা সমাজকল্যাণ দফতরে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। জেলার গার্হস্থ্য হিংসা নিবারণ দফতরের প্রোটেকশন অফিসার চন্দ্রিমা মাইতি মঙ্গলবার জানান, সোমাদেবীর করা অভিযোগের ভিত্তিতে আজ, বুধবার সিজেএম আদালতে তাঁর বাবা কৃষ্ণচন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে গার্হস্থ্য হিংসা নিবারণ আইনের ১২তম ধারায় মামলা দায়ের করা হবে।
|
সোমা দাস। নিজস্ব চিত্র। |
সোমাদেবী জেলা সমাজকল্যাণ দফতরের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেয়েদের রূপসজ্জার কাজ করে উপার্জন করেন। কিন্তু তাঁর রোজগার করা সামান্য অর্থও তাঁর মদ্যপ বাবা চুরি করে নিচ্ছেন। প্রতিবাদ করলে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এমনকী মারধরও করা হচ্ছে। কিন্তু এতে পরিবারের কেউই আপত্তি করেন না। তিনি দাবি করেন, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্নায়ুর সমস্যায় শরীরের ডান দিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে। দীর্ঘ দিন কলকাতার হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিভাগে চিকিৎসা করিয়ে বর্তমানে কিছুটা সুস্থ। কিন্তু এখন বাড়ি থেকে তাড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছেন পরিবারের সদস্যেরা, বিশেষত তাঁর বাবা। তাঁর আরও অভিযোগ, বর্তমানে তাঁকে এমন একটি ঘরে থাকতে দেওয়া হয়েছে, যার মাথার উপরের টিন ফুটো হয়ে বর্ষায় জল পড়ে। বাড়ির কল, শৌচাগার ইত্যাদি ব্যবহার পর্যন্ত করতে দেওয়া হচ্ছে না। সুবিচারের আশায় তিনি শেষ পর্যন্ত সম্প্রতি জেলা গার্হস্থ্য হিংসা নিবারণ দফতরের দ্বারস্থ হন।
সোমাদেবীর প্রতিবেশী তথা ভাতারের মাহাতা হাইস্কুলের শিক্ষিকা কাকলি সরকারের দাবি, “প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কেউই এখনও এগিয়ে আসেননি। অথচ এগিয়ে এলে তিনি অন্তত বাড়িতে থাকতে পারতেন। এক দিন আমার বাড়িতে, আর এক দিন অন্য কারও বাড়িতে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন। এমনকী স্নায়ুরোগের ওষুধ নিতেও ওঁকে বাড়ির নির্দিষ্ট ঘরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।”
মহকুমাশাসক (বর্ধমান উত্তর) প্রশান্ত অধিকারী বলেন, “ওই মহিলাকে নিয়ে কাকলিদেবী আমার কাছে এসেছিলেন। সব জায়গায় তো আর পুলিশ পাঠানো সম্ভব নয়। আমি ওঁদের গার্হস্থ্য হিংসা নিবারণ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছিলাম। তবে পরে ওঁরা আর আমার কাছে আসেননি। আশা করি মহিলাকে ওই দফতরই উপযুক্ত সাহায্য করবে।”
এ দিকে, অভিযুক্ত কষ্ণচন্দ্রবাবু তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, “সোমা সম্পত্তির ভাগ চায়। তাই সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমার বয়স হয়েছে। রোজগারও নেই। কিন্তু আমাকে ছেলে-মেয়েদের কেউই দেখে না। মেয়েকে বাড়ি থেকে আমি অন্তত তাড়াতে চাইছি না।” |