ধৃত কয়লা মাফিয়া জয়দেব মণ্ডল জেলের ভিতর থেকেই অবৈধ কয়লার কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করলেন আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ।
খনি এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে অবৈধ কয়লার ৬টি লরি আটক করে সেগুলির চালক ও খালাসিদের জিজ্ঞাসাবাদের পরে পুলিশ ৮ জনকে ধরেছে। যার মধ্যে অন্তত তিন জন জয়দেব মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ। মঙ্গলবার দুর্গাপুরে
|
জয়দেব মণ্ডল।
ফাইল চিত্র। |
আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ এ কথা জানিয়ে বলেন, “জয়দেবের সঙ্গে এই চক্রের যোগাযোগের সূত্র পাওয়া গিয়েছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়ার নিতুড়িয়া, পারবেলিয়া থেকে বেআইনি কয়লা তোলা হচ্ছে। রানিগঞ্জ থেকেও হচ্ছে। এর পরে সেই কয়লা লরি করে এক দিকে পাচার করা হচ্ছে ঝাড়খণ্ডে। অন্য দিকে শক্তিগড় হয়ে চলে যাচ্ছে বর্ধমান ও হুগলিতে। এমনকী শক্তিগড় থেকে আগের কায়দায় ‘প্যাড’-এর কারবারও শুরু হয়ে গিয়েছে বলে পুলিশের দাবি। বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ খনি এলাকার ৬টি লরি আটক করে। প্রতিটিতে ২৫ মেট্রিক টন করে অবৈধ কয়লা মিলেছে। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে কোনও লরিতে কয়লার উপরে কয়লার গুঁড়ো, কোনওটিতে ইট চাপানো। পুলিশ লরিগুলির চালক ও খালাসিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, একটি বড় চক্র কাজ করছে এর পিছনে। নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়ার পরে পুলিশ খনি এলাকার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ৮ জনকে ধরেছে।
পুলিশের দাবি, ধৃতদের মধ্যে আল্লারাখা খান, আসলাম আনসারি, আইনুল আনসারি নামে তিন জন জয়দেব মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ। জেরায় তারা জানিয়েছে, আসানসোল এলাকায় পুলিশের কড়াকড়ি বেড়ে যাওয়ায় তারা মূলত পুরুলিয়ায় নজর দিয়েছে। কয়লা পাচারের রাস্তাও বদলেছে তারা। প্যাডের কারবারও চালু হয়েছে। সব মিলিয়ে ফের রমরমা কয়লা পাচার চক্রের। পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ জানান, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ কয়লা পাচারের এই চক্রের সঙ্গে জয়দেব মণ্ডলের যোগাযোগের বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত। পুলিশ কমিশনার বলেন, “জেল থেকেই ওই মাফিয়া বেআইনি কয়লা পাচারের কারবার চালাচ্ছে। ধৃতদের সঙ্গে তার যোগাযোগের সূত্রও পাওয়া গিয়েছে।” চক্রের বাকিদের ধরতে এবং বেআইনি কয়লা পাচার রুখতে বর্ধমান জেলা পুলিশ ও ঝাড়খণ্ড পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে বলে জানান তিনি। গত ১৯ সেপ্টেম্বর কলকাতায় অস্ত্র আইনে গ্রেফতার হয় জয়দেব মণ্ডল। তার আগে আসানসোলের কন্যাপুরে তার বাড়িতে অভিযান চালালেও তাকে ধরতে পারেনি সিবিআই। কলকাতা থেকে গ্রেফতার করার পরে তাকে আসানসোলে আনা হয়। নানা অভিযোগে তাকে আদালতে তোলা হলে সব ক্ষেত্রেই জামিন না-মঞ্জুর হয়েছে। কালে সিংহ, রাজু ঝায়ের পরে জয়দেব মণ্ডলকেও পুলিশ গ্রেফতার করায় খনি এলাকায় বেআইনি কয়লা পাচার চক্রের রমরমা আগের থেকে অনেকটাই কমে গিয়েছে বলে দাবি করেছিল পুলিশের। তবে অবৈধ কয়লার লরিগুলি ধরা পড়ার পরে পুলিশ নড়চড়ে বসেছে। পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ বলেন, “অবৈধ কয়লার কারবার বন্ধ করতে যা যা করণীয় তা করা হবে।” |