শহরে বস্তির সমস্যা নিয়ে নানা অভিযোগ বরাবরই ছিল। কিন্তু এ বার তা ধরা পড়ল খোদ পুরসভার সমীক্ষায়।
বস্তি নিয়ে এমন সমীক্ষা আগে হয়নি। কিন্তু শহরের হাল ফেরাতে হলে বস্তির উন্নয়নও যে দরকার তা পুর প্রশাসনকে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতোই বস্তির সমীক্ষায় গুরুত্ব দেন মেয়র পারিষদ (বস্তি) স্বপন সমাদ্দার।
সেই সমীক্ষায় ধরা পড়েছে শহরের বস্তিগুলির দুর্দশার কথা। জানা যায়, প্রায় ৬৮ শতাংশ বস্তিতে দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। ওই হিসেবে অস্বস্তিতে পড়েছে পুরসভা। পুরসভার মেয়র পারিষদ স্বপনবাবু বলেন, “এ মুহূর্তে শহরের ১৪৪টি ওয়ার্ডে বস্তির সংখ্যা ৩৩৩৪টি। জনসংখ্যা প্রায় ২২ লক্ষ ৫৬ হাজার। রীতিমতো অসুবিধা করেই থাকতে হয় ওই সব বস্তিবাসীদের।” তবে তার দায় যে গত বাম পুর বোর্ডের তা জানাতে কসুর করেননি স্বপনবাবু।
প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য অবশ্য ওই অভিযোগ পুরোপুরি খারিজ করে দেন। তাঁর কথায়, “আমাদের সময়ে বস্তি উন্নয়নে কত খরচ হয়েছিল, আর ওদের আমলে কত খরচ হয়েছে তার হিসেব দেখলেই সব পরিষ্কার হবে।” তাঁর বক্তব্য, “বাম আমলেই বস্তি সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।” |
পুরসভা সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরের হিসেবে দেখা গিয়েছে বস্তির বিস্তর সমস্যা থাকলেও কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো কয়েক কোটি টাকা খরচ তো হয়নি, উল্টে ফেরত গিয়েছে। পুরসভার এক অফিসারের কথায়, “আগে পরিকল্পনা মতো বস্তির কোনও কাজ করা হত না। বস্তির জন্য বাজেটে বরাদ্দ টাকা কাউন্সিলরের হাতে দেওয়া হত। কাউন্সিলর তা বস্তির কাজে ব্যয় করতেন।” কিন্তু তাতে বস্তির সার্বিক উন্নতি হত না বলেই জানান ডান ও বাম উভয় দলের একাধিক কাউন্সিলর।
শহরে বেশ কয়েকটি বস্তির মধ্যেই চলছে দাহ্য পদার্থের ব্যবসা। কোনও লাইসেন্স ছাড়াই। বছরের পর বছর। বিভিন্ন সময়ে শহরে নানা বস্তিতে আগুন লাগা নিয়ে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ ওঠে। হইচই শুরু হয় হয় বিভিন্ন মহলে। সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, এমন অনেক বস্তি রয়েছে যেখানে দমকলের গাড়ি পৌঁছনোর পথটুকুও নেই। আর তার ফলেই বস্তিতে আগুন লাগলে একেবারে নিঃস্ব হতে হয় বস্তিবাসীদের। মেয়র পারিষদের বক্তব্য, দিনের পর দিন এই হাল জেনেও কিছু করা হয়নি। তাঁরা চান, সমীক্ষা রিপোর্ট ধরেই এ বার থেকে বস্তির কাজ করা হবে।
স্বপনবাবু জানান, উত্তর কলকাতার ৩, ৬, ১৩ ও ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি বস্তিতে দাহ্য পদার্থের ব্যবসা চলছে রমরমিয়ে। দক্ষিণ কলকাতার গার্ডেনরিচ, খিদিরপুর এলাকার কয়েকটি বস্তিতে ‘নো লাইট জোন’ রয়েছে। অন্ধকারেই কাটাতে হয় সেখানকার বস্তিবাসীদের। বেলেঘাটার কাছে ৫৭ এবং ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের অনেক বস্তিতে মানুষকে রীতিমতো অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে হয়। সেখানে পানীয় জলেরও প্রচণ্ড অভাব। পুরসভার এক পদস্থ অফিসার জানান, শহরে কত বস্তি আছে তা নিয়ে কোনও সঠিক চিত্র ছিল না পুরসভার হাতে। সমীক্ষায় যে রিপোর্ট মিলেছে তাতে এ বার বস্তির সমস্যাকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দেখা দরকার। স্বপনবাবু বলেন, “আগামী বাজেটে বস্তির জন্য আরও অর্থ বরাদ্দ করার বিষয়ে মেয়র ও পুর কমিশনারকে বলা হয়েছে।”
|