খুনখারাবির রাজনীতি চলতে থাকলে পুজোর পরে তৃণমূলকে নতুন দাওয়াই দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সিপিএম নেতা গৌতম দেব। তার ২৪ ঘণ্টা পরে পাল্টা আক্রমণ করে গৌতমবাবুকেই ওষুধ খেয়ে আগে সুস্থ হওয়ার নিদান দিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়! সিপিএমের হুঁশিয়ারির প্রেক্ষিতে বুধবার পার্থবাবুর কটাক্ষ, “কাকে ওষুধ দেবেন গৌতমবাবু? আগে উনি নিজে ওষুধ খেয়ে সুস্থ হোন! পরে অন্যকে ওষুধ খাওয়াবেন!” প্রাক্তন আবাসনমন্ত্রীর বাচনভঙ্গি নিয়েও কটাক্ষ করে পার্থবাবু বুধবার মন্তব্য করেছেন, “গৌতমবাবু তো রাজনৈতিক নেতা। ডাক্তার নন। ওঁর অঙ্গভঙ্গি, চেহারা দেখে মনে হয়, উনি পুরো সুস্থ নন। সিপিএমের গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের চাপে অসুস্থ শরীরে রাস্তায় নেমে অসুস্থ কথা বলছেন গৌতমবাবু!” বিগত বাম জমানার সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ টেনেও সিপিএমকে আক্রমণ করেছেন তৃণমূলের মহাসচিব। তাঁর বক্তব্য, “দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, আমরা খুন-জখম, রক্তপাতের বিরুদ্ধে।” উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদ পঞ্চায়েত সমিতির সদ্যনির্বাচিত সভাপতি জাহাঙ্গির আলম দুষ্কৃতীদের হাতে নিহত হন সোমবার রাতে। খুনের কারণ নিয়ে পুলিশ এখনও অন্ধকারে। তবে লোকসভা ভোটের আগে বসিরহাট এলাকায় হারানো জমি ফিরে পেতে তৃণমূল-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা জাহাঙ্গিরকে খুন করেছে বলে সিপিএমের অভিযোগ। লোকসভা ভোটের আগে আরও এমন অশান্তির আশঙ্কা করে রাজ্যপালেরও দ্বারস্থ হয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী আবার নাম না করেই পাল্টা দাবি করেন, সিপিএমের অন্তর্দ্বন্দ্বই হাসনাবাদের ঘটনার জন্য দায়ী। এ সবের প্রেক্ষিতেই লোকসভা ভোটে কড়া প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে বলে তৃণমূলকে আগাম হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছিলেন সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতমবাবু। যার জবাব দিতে গিয়ে এ দিন পার্থবাবু ফের গৌতমবাবুদের বিরুদ্ধে আইনি পথে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন।
আবাসন কেলেঙ্কারির অভিযোগে গৌতমবাবুর বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্ত চলছে। সেই প্রসঙ্গ টেনেই পার্থবাবু এ দিন বলেছেন, “আমরা কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নই। গৌতমবাবু, বুদ্ধবাবু (ভট্টাচার্য) বা তাঁদের শাগরেদরাও আইনের ঊর্ধ্বে নন! আইন প্রয়োগের প্রয়োজন হলে তা করবে সরকার।” দাওয়াইয়ের হুমকি দিয়ে সিপিএম হিংসায় উস্কানি দিচ্ছে বলেও পার্থবাবুর অভিযোগ। তাঁর কথায়, “সিপিএম খুন, রাহাজানির ইতিহাস গড়েছে। গৌতমবাবু তাই খুন-জখমের কথাটা না বললেই পারতেন!” গৌতমবাবু অবশ্য বলেই রেখেছেন, তাঁকে বা বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে জেলে পাঠাতে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী
সিআইডি লাগিয়েছেন! কিন্তু এ সব করে বিরোধীদের প্রতিবাদ দমানো যাবে না! আর পার্থবাবু ফের বাম জমানায় রাজারহাটে আবাসন দফতরের কাজকর্মের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, “রাজারহাটে যে ভাবে ধ্বংসলীলা চালিয়েছিলেন আপনি (গৌতম), ভুলে গেলেন! যে ভাবে কৃষকের উপরে বুলডোজার চালিয়েছিলেন, তাঁরা তা বুঝতে পেরে সিপিএমকে ওষুধ (পরিত্যাগ) দিয়েছে। তা হলে কেন ওষুধ দেওয়ার কথা বলছেন?” জাহাঙ্গিরকে খুনের প্রতিবাদে সিপিএমের ডাকা বন্ধে বসিরহাটে এ দিন বেশির ভাগ দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, অফিস বন্ধ ছিল। বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করে সিপিএম। মাইক নিয়ে বন্ধ ব্যর্থ করতে কোথাও কোথাও পাল্টা আসরে নামে তৃণমূলও। ভান্ডারখালি ও হাটগাছি বাজারে দু’পক্ষের মারামারি বাধে। তৃণমূল নেতা অর্ধেন্দু মণ্ডল, সিপিএম নেতা বিলাস বর্মন-সহ জখম হন ১০ জন। তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি।
সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মৃণাল চক্রবর্তীর দাবি, “বন্ধ সফল করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে খুনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন মানুষ।” বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুরুল ইসলামের পাল্টা দাবি, “দায়িত্ব নিয়ে বলছি, এটা রাজনৈতিক খুন নয়। গোষ্ঠী-দ্বন্দ্ব ও ব্যক্তি আক্রোশের জেরে খুন হন তিনি।”
|