প্রতিরোধের চেষ্টা, নজরদারি সত্ত্বেও র্যাগিং বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবে র্যাগিং রুখতে তাঁরাও যে বদ্ধপরিকর, দুই দোষী ছাত্রকে বহিষ্কার করে ফের সেই বার্তা দিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়।
দ্বিতীয় বর্ষের একটি ছাত্রকে র্যাগিংয়ের ঘটনায় এক ছাত্রকে এক সেমেস্টার, অন্য এক পড়ুয়াকে দু’টি সেমেস্টারের জন্য এবং দু’জনকেই হস্টেল থেকে বরাবরের মতো বহিষ্কার করেছেন যাদবপুর-কর্তৃপক্ষ। দু’জনেই চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। দিন পনেরো আগেই এক নবাগতকে র্যাগিংয়ের ঘটনায় দ্বিতীয় বর্ষের পাঁচ পড়ুয়াকে বহিষ্কার করেছে বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি (বেসু)। তার পরে যাদবপুরের এই সিদ্ধান্ত র্যাগিং রোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির কড়া মনোভাবেরই প্রমাণ।
যাদবপুরের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্র থাকেন সল্টলেক ক্যাম্পাসের হস্টেলে। তিনি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের পড়ুয়া। ওই হস্টেলের সুপারের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি-র হেল্পলাইনেও র্যাগিংয়ের অভিযোগ জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁর অভিযোগের তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গড়েন বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার কমিটির রিপোর্ট জমা পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে। ওই দিনই র্যাগিং বিরোধী কমিটির বৈঠকে চতুর্থ বর্ষের দুই পড়ুয়াকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। দোষীদের মধ্যে এক জন কনস্ট্রাকশন এবং অন্য জন প্রিন্টিং টেকনোলজি বিভাগের ছাত্র। প্রথম জনকে দু’টি সেমেস্টারের জন্য এবং দ্বিতীয় জনকে এক সেমেস্টারের জন্য সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় র্যাগিং বিরোধী কমিটির ওই বৈঠকেই। অবিলম্বে তাঁদের হস্টেল ছাড়তে হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কী অভিযোগ জানিয়েছিলেন তথ্যপ্রযুক্তির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রটি?
ওই পড়ুয়ার অভিযোগ, গত ২৩ অগস্ট চতুর্থ বর্ষের দু’টি ছাত্র হস্টেলে তাঁর ঘরে চড়াও হয়। তাঁর ঘরের জানলা ভাঙচুর করে তাঁকে মারধর করে। সেই সঙ্গে মানসিক অত্যাচারও চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, “প্রথম বর্ষে পড়ার সময়েই ছাত্রটিকে এক বার আক্রমণ করা হয়েছিল। কিন্তু দার্জিলিং থেকে আসা ওই ছাত্র বেশ নির্ভীক। সে তখনই উল্টে আক্রমণকারীদের মারধর করে। হয়তো সেই রাগ থেকেই পুরনো পড়ুয়ারা ফের চড়াও হয়েছিল ছেলেটির উপরে।”
যাদবপুরে র্যাগিংয়ের ব্যাধি দীর্ঘদিনের। কর্তৃপক্ষও ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। তা সত্ত্বেও র্যাগিং বন্ধ হচ্ছে না। ২০০৯, ২০১১, ২০১২-য় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের তিনটি ঘটনা ঘটে। কর্তৃপক্ষ প্রতিটি ক্ষেত্রেই দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছেন। কোনও ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই খেদিয়ে দেওয়া হয়েছে। কখনও বা কয়েকটি সেমেস্টার বা হস্টেল থেকে বহিষ্কার করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে দোষীদের। আর্থিক জরিমানাও করা হয়েছে। প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে র্যাগিংয়ে যুক্ত পাঁচ ছাত্রকে সম্প্রতি বহিষ্কার করেছে বেসু। কিন্তু তারাতলার মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে র্যাগিংয়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, জানা যায়নি। সম্প্রতি লখনউ ও দেহরাদূন থেকে ওই কলেজে পড়তে আসা দুই তরুণ র্যাগিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
র্যাগিং নির্মূল করতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য ছাত্রছাত্রীদের কাউন্সেলিংয়ের বন্দোবস্ত করেছে। র্যাগিং বিরোধী প্রচারও চালানো হচ্ছে। এমনকী প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের পৃথক হস্টেলে রাখার বন্দোবস্তও করেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। প্রথম বছরটা নির্বিঘ্নে কাটিয়ে এক বছরের পুরনো হয়ে উঁচু ক্লাসের পড়ুয়াদের সঙ্গে থাকতে গেলে র্যাগিংয়ের শিকার হওয়ার ভয় কম, এই চিন্তা থেকেই হস্টেল পৃথক করার সিদ্ধান্ত। কিন্তু তাতেও রেহাই মিলছে না। আক্রান্ত হচ্ছেন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রছাত্রীরাও। এই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ কি অন্য কোনও পদক্ষেপ করার কথা ভাবছেন?
যাদবপুরের রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ বলেন, “র্যাগিং যাতে বন্ধ হয়, আমরা সব সময় সেই চেষ্টাই করি। তা সত্ত্বেও যদি কিছু ঘটে, সে-ক্ষেত্রে দোষীদের কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।”
|