র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থাই নিলেন বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি বা বেসু-র কর্তৃপক্ষ। রাজীব রঞ্জন নামে মেটালার্জি বিভাগের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রের উপরে র্যাগিংয়ের অপরাধে ওই বিভাগেরই দ্বিতীয় বর্ষের পাঁচ ছাত্রকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার অপরাধে এক বছরের জন্য হস্টেল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এক ছাত্রকে।
বেসু-র উপাচার্য অজয়কুমার রায় মঙ্গলবার জানান, সোমবার রাতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি তাঁর কাছে র্যাগিংয়ের রিপোর্ট পেশ করে। তদন্ত কমিটির কাছে অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রই স্বীকার করেছে, তারা ২২ অগস্ট প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রকে র্যাগিং করেছে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে উপাচার্য এ দিন সকালে অ্যান্টি র্যাগিং কমিটি বা র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসেন। কমিটির সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেন, ওই পাঁচ ছাত্রকে এক বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং হস্টেল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
বেসু সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ক্লাস থেকে ফেরার পথে মেটালার্জি বিভাগের ছাত্র রাজীব দ্বিতীয় বর্ষের দুই ছাত্রের খপ্পরে পড়েন। ওই দু’জন তাঁকে নিজেদের হস্টেলে নিয়ে যায়। ঘরে নিয়ে যাওয়ার পরে তারা ডেকে পাঠায় ওই বিভাগেরই অন্য তিন ছাত্রকে। পরে ডাকা হয় আরও এক জনকে। তবে শেষের ছাত্রটি র্যাগিংয়ে যুক্ত ছিল না বলে জানান তদন্তকারীরা। অভিযোগ, ওই পাঁচ ছাত্র হস্টেলের একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে রাজীবের উপরে অত্যাচার চালায়। পরে তাদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে রাজীব নিজের হস্টেলে ফিরে যাওয়ার পথে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তারক্ষীদের সামনে পড়ে যান। রাজীবকে বিধ্বস্ত দেখে তাঁকে প্রশ্ন করে রক্ষীরা র্যাগিংয়ের বিষয়টি জেনে নেন। তাঁরা খবর দেন অ্যান্টি র্যাগিং রোমিং স্কোয়াড বা র্যাগিং প্রতিরোধ বাহিনীকে। অভিযোগ জানানো হয় র্যাগিং প্রতিরোধ কমিটি, উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, প্রফেসর ইনচার্জ অফ স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্সের কাছেও। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, সব শেষে আসা ছাত্রটি র্যাগিংয়ে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন। অন্য ছাত্রেরা তার কথা শোনেনি। ওই ছাত্রটি কিন্তু র্যাগিংয়ের বিষয়টি কাউকে জানায়নি। ঘটনাস্থলে থাকা এবং কাউকে বিষয়টি না-জানানোর অপরাধে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে বেসু-কর্তৃপক্ষ জানান।
তাঁর প্রতিষ্ঠানে কোনও রকম র্যাগিংকেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন বেসু-র উপাচার্য। তাঁর বক্তব্য, তদন্তে ওই ছাত্রেরা দোষী প্রমাণিত হয়েছে। শুধু এক বছরের জন্য বহিষ্কারেই শাস্তি শেষ হচ্ছে না। আগামী এক বছর ওই পাঁচ ছাত্র অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতায় তাদের নাম ‘ব্ল্যাক লিস্টেড’ বা কালো তালিকাভুক্ত হয়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে তারা বেসু থেকে কোনও রকম পুরষ্কার বা খেতাবও পাবে না।
উপাচার্য বলেন, “শাস্তি দিতে নয়। সংশোধন করার জন্যই র্যাগিংয়ে জড়িত ওই ছাত্রদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
তারাতলার মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অবশ্য এমন কোনও ব্যবস্থার কথা এখনও জানা যায়নি। লখনউ ও দেহরাদূন থেকে ওই কলেজে পড়তে আসা দুই তরুণ র্যাগিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ৭ অগস্ট তাঁরা কলেজে ভর্তি হন। আর ১৬ অগস্ট তারাতলা থানায় অভিযোগ জানান, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের কিছু ছাত্র তাঁদের মারধর করছে। পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানালেও কলেজের তরফে তেমন উদ্যোগ নেই।
|