দারিদ্রসীমার উপরে থাকা (এপিএল) ৮৮৬টি পরিবারকে অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনার কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে খাদ্য দফতরের এক সমীক্ষার প্রেক্ষিতে। যাতে ধরা পড়েছে, বীরভূমের নলহাটি ১ নম্বর ব্লকে বাউটিয়া ও বানিওড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা ওই পরিবারগুলির একাংশ দীর্ঘ দিন রেশন তুলতে পারেনি। অন্যেরা রেশন তুলেছে তবে অনিয়মিত।
বুধবার এ খবর জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “পরিস্থিতি বিচার করে খাদ্য দফতর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই ৮৮৬টি আদিবাসী পরিবার এখন থেকে ২ টাকা কিলো দরে প্রতি মাসে ৩৫ কিলোগ্রাম করে খাদ্যশস্য (চাল-গম) রেশন দোকান থেকে কিনতে পারবেন।” খাদ্য দফতর সূত্রে খবর, আগামী অক্টোবর মাস থেকে এই সুযোগ পাবে ওই পরিবারগুলি।
নলহাটি ১ ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৮৩ সালে বানিওড় ও বাউটিয়া পঞ্চায়েত এলাকায় ৯১৭টি পরিবারকে এপিএল রেশন কার্ড দেওয়া হয়। পরে ১৯৯৭ সালে ১৪০ জনকে বিপিএল কার্ড দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে ১৭৭ জন অন্ত্যোদয় কার্ড পান। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ওই পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে ৬৮টি পরিবারের কোনও রেশন কার্ড নেই।
বানিওড় পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, এলাকার পাথর খাদান ও ক্রাশারে স্থানীয় বাসিন্দা আদিবাসী পরিবারের লোকেরা কাজ করেন। ক্রাশার চালু থাকলে তাঁদের মাসিক আয় গড়ে ৩,৫০০ থেকে ৪,৫০০ টাকা। বাউটিয়া পঞ্চায়েতের চারটি গ্রামে সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এলাকার আদিবাসী পরিবারগুলির মাসিক গড় আয় ২,৫০০ টাকা। একটি পরিবারের অনেকেই পাথরশিল্পে কাজ করেন।
দুই পঞ্চায়েত এলাকাতেই অনেক এপিএল কার্ডধারীর জমি আছে। কিন্তু জমিতে একবার মাত্র চাষ করা যায়। গত দু’বছরে ওই এলাকায় পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় চাষ ভাল হয়নি। গত এপ্রিল মাস থেকে মালিক এবং শ্রমিকদের একাংশের মতবিরোধের জেরে স্থানীয় খাদান এবং ক্রাশারগুলিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় এপিএল তালিকাধারীদের অনেকেও আর্থিক অনটনে পড়েন। তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের খাদানে বা ভিন-রাজ্যে কাজে চলে যান।
বানিওড় পঞ্চায়েতের সদ্য প্রাক্তন প্রধান তৃণমূলের বেঞ্জামিন মুর্মু বলেছেন, “ওঁরা আমাদের কাছে সাহায্য চাইতে আসেননি। যাঁরা এসেছেন, তাঁদের রেশন কার্ড করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।” পঞ্চায়েতের বর্তমান প্রধান, সিপিএমের এলবিনা মাড্ডি কিছু বলতে রাজি হননি। তবে ওই এলাকায় এ দিন গিয়েছিলেন বোলপুরের সিপিএম সাংসদ রামচন্দ্র ডোম। তাঁর বক্তব্য, “ঘুরে দেখলাম, স্থানীয় বাসিন্দাদের অর্থাভাব রয়েছে।”
যে পরিবারগুলি এখন এই সুযোগ পাবে, তাদের এপিএল তালিকায় রাখা হয়েছিল কেন? খাদ্যমন্ত্রীর জবাব, “কার্ড দেওয়া হয়েছে বাম জমানায়। তবে মনে রাখতে হবে রাজ্য কত জন বিপিএল কার্ড পাবেন তা রাজ্য নয়, ঠিক করে দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। সেই জন্যই এ বারও ওই পরিবারগুলিকে বিপিএল কার্ড দেওয়া গেল না। রাজ্যে নতুন করে বিপিএল তালিকা তৈরির কাজ চলছে। তাই খাদ্য দফতর নিজস্ব ক্ষমতাবলে তাদের অন্ত্যোদয় কার্ড দিল।”
মহকুমাশাসক (রামপুরহাট) রত্নেশ্বর রায় বলেন, “ওই পরিবারগুলিকে আরও কোনও প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া যায় কি না, দেখা হচ্ছে।”
|